অনলাইন ডেস্ক : সম্পূর্ণ পূর্ব পরিকল্পিতভাবে কাছাড় কলেজের অধ্যক্ষ সিদ্ধার্থ শংকর নাথ “সিক রুম”-নকল কান্ডের চিত্রনাট্য রচনা করেছিলেন। কোনও রাকঢাক না করে স্পষ্টভাষায় একথা বললেন কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড: পার্থংকর চৌধুরী।
অধ্যক্ষ সিদ্ধার্থবাবু সাসপেন্ড হওয়ার পর কলেজ পরিচালনা নিয়ে আলোচনা করতে বৃহস্পতিবার তড়িঘড়ি করে পরিচালন সমিতির বৈঠক আহ্বান করা হয়। বৈঠকের পর বিকেলে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সভাপতি পার্থঙ্করকর বাবু বলেন, তিনি খোঁজ নিয়ে দেখেছেন সোমবার নকল কান্ড ধরা পড়ার আগে শনিবার সন্ধ্যায় “সিকরুম”-এর দরজা, ব্রাউন পেপার দিয়ে ঢাকানোর ব্যবস্থা করে যান অধ্যক্ষ। এ থেকেই তো স্পষ্ট, অধ্যক্ষ নকল কাণ্ডের ব্লুপ্রিন্ট আগেই তৈরি করে রেখেছিলেন। পার্থংকর বাবু বলেন, একজন অধ্যক্ষের এভাবে নকল সরবরাহে জড়িয়ে পড়াটা স্বাভাবিকভাবেই সমাজে সৃষ্টি করেছে তীব্র প্রতিক্রিয়ার। তিনি বলেন, পুলিশের দায়িত্ব চোরকে ধরা। কিন্তু রাতে যদি কোনও গৃহস্থ দেখেন তার বাড়িতে পুলিশের পোশাক পরা কেউ চোরের মতো চুপিসারে ঢুকছেন, তবে ওই গৃহস্থ মানসিকভাবে জোর ধাক্কা খাবেন অবশ্যই। ঠিক এমন ব্যাপার ঘটেছে কাছাড় কলেজের অধ্যক্ষের নকল সরবরাহে জড়িত হওয়াকে ঘিরে। অধ্যক্ষের দায়িত্ব নকল প্রতিরোধ করা, এর বদলে তিনি কিনা নিজেই জড়িয়ে পড়লেন এতে। যা সমাজ কোনওভাবেই মেনে নিতে পারছে না। কথার সূত্রে তিনি আরও বলেন, নকল কাণ্ড নিয়ে নিশ্চয়ই কলেজ থেকে কেউ খবর পৌঁছে দিয়েছিলেন প্রশাসনের কাছে। তবে যে বা যারাই এই কাজ করেছেন, তারা অবশ্যই পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য। সমাজের স্বার্থেই এই কাজ করা হয়েছে।
অধ্যক্ষ সাসপেন্ড হওয়ার পর বর্তমানে কলেজে তার বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি নিয়েও কানাঘোষা শুরু হয়েছে। এ নিয়ে জিজ্ঞেস করলে পার্থংকরবাবু বলেন, পরিচালন সমিতির সভাপতি হিসেবে তিনি কোনও ধরনের আর্থিক অনিয়ম মেনে নেবেন না। যদি দেখা যায় সরকারি নিয়ম-নীতি না মেনে কোনও বিল পাস করার চেষ্টা চালানো হয়েছে, তবে তা রুখে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন অবশ্যই। আর আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে প্রশাসনের তরফে তদন্তের ব্যবস্থা করা হবে বলেও আশা ব্যক্ত করেন তিনি। সঙ্গে একথাও স্পষ্ট করে দেন, কলেজের শিক্ষকদের মতো তিনিও চাইছেন না, সিদ্ধার্থবাবু আর অধ্যক্ষ হিসেবে ফিরুন কাছাড় কলেজে। এ নিয়ে তিনি বলেন, সিদ্ধার্থ বাবু আসাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে “লিয়েন” নিয়ে কাছাড় কলেজের অধ্যক্ষ পদে যোগ দিয়েছিলেন। তার “লিয়েন”-এর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা এবছর অক্টোবর মাস নাগাদ। আর যদি তিনি সাসপেনশন পর্ব উতরাতে পারেন, তবুও তা অক্টোবর মাসের আগে হয়ে উঠবে না বলে মনে হয়। এই অবস্থায় তার পক্ষে আর কাছাড় কলেজে ফেরাটা সম্ভব নাও হতে পারে।
পার্থংকর বাবু আরও জানান, সিদ্ধার্থ শংকর নাথ সাসপেন্ড হওয়ার পর আপাতত অধ্যক্ষের কাজ চালিয়ে যাবেন কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রধান মোঃ শামসুদ্দিন। সাসপেন্ড হওয়ার আগে গতকাল ক্যাজুয়াল লিভ নিয়েছিলেন সিদ্ধার্থবাবু, তখন দায়িত্ব দিয়ে যান মোঃ শামসুদ্দিনকে। এদিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে কারো নাম অনুমোদন করার জন্য প্রস্তাব পাঠানো হবে রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সঞ্চালকের কাছে। এর জন্য পরিচালন সমিতির পক্ষ থেকে “সিনিয়রিটি”র ভিত্তিতে একেক জন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলা হবে। প্রথম কথা বলা হবে সবচেয়ে সিনিয়র শিক্ষকের সঙ্গে, তিনি দায়িত্ব গ্রহণে রাজি হলে তার নামই অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে সঞ্চালকের কাছে। রাজি না হলে পর্যায়ক্রমে একেকজনের সঙ্গে আলোচনা করে যিনি রাজি হবেন পাঠানো হবে তার নাম। এই পর্ব মিটে যাবার আগে পর্যন্ত মোঃ শামস উদ্দিনই চালাবেন অধ্যক্ষের কাজ।
এদিকে পরিচালন সমিতির বৈঠকেও এদিন অধ্যক্ষকে ঘিরে করা মনোভাব ব্যক্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। খবর অনুযায়ী বৈঠকে ঘটনা নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত সহ এ নিয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে পরিচালন সমিতির পক্ষ থেকে মামলা করার জন্যও সওয়াল করা হয়েছে ।