মিলন লস্কর
অসমের বরাক উপত্যকার তিন জেলা কাছাড়-করিমগঞ্জ-হাইলাকান্দির মানুষের সঙ্গে বাংলাদেশের বৃহত্তর সিলেট এলাকার মানুষের একটা নাড়ির সম্পর্ক রয়েছে। উভয় এলাকার ভাষা-সাহিত্য ও সংস্কৃতি অভিন্ন। দেশ ভাগের আগেও ওই অঞ্চল অসমের মানচিত্রে ছিল। যারজন্য বরাক উপত্যকার মানুষ সিলেটে এবং সিলেটের মানুষের এখানে আসা যাওয়া এখনও অব্যাহত রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সিলেট-শিলচরের মধ্যে একটি সরাসরি বাস সার্ভিস চালুর একটা দাবি রয়েছে দুপার থেকে। শীঘ্রই শিলচর সিলেট বাস সার্ভিস চালু হয়ে যাবে বলে আশার কথা শোনালেন গুয়াহাটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের সহকারি হাইকমিশনার রুহুল আমিন। তিনি শিলচর হয়ে সিলেট যাবার সময় দৈনিক সাময়িক প্রসঙ্গ-র সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানান।
সহকারী হাইকমিশনার রুহুল আমিন জানান, গত বছর ডিসেম্বর মাসে শিলচরে অনুষ্ঠিত শিলচর-সিলেট উৎসবে বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, ভারতের বিদেশ প্রতিমন্ত্রী রাজকুমার রঞ্জন সিং, শিলচরের সাংসদ ডাঃ রাজদীপ রায় এবং উভয় দেশের আধিকারিক এবং বণিক সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক আলোচনার সময় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। আলোচনায় শিলচর-সিলেট বাস সার্ভিসও গুরুত্ব পায়। বাস সার্ভিস নিয়ে একটি সর্বসম্মত সিদ্ধান্তও হয়েছিল।এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন নিয়ে উভয় দেশের মন্ত্রী ও কূটনৈতিকস্তরে আলোচনা চলছে। শীঘ্রই এ সিদ্ধান্তে সিলমোহর পড়বে বলে আশাবাদী বাংলাদেশের সহকারি হাইকমিশনার। প্রথমে প্রতিদিন না হলেও সপ্তাহে অন্তত দুদিন এই বাস চলাচল করবে। বাস চালু হলে উভয় দেশই লাভবান হবে। এতে শুধু পর্যটন ক্ষেত্রে নয়, ব্যবসা বাণিজ্য এবং সাংস্কৃতিক আদান প্রদান আরও বাড়বে উভয় অঞ্চলের মধ্যে।
বাংলাদেশের গুয়াহাটিস্থ সহকারি হাইকমিশনার রুহুল আমিন আরও জানান, বাংলাদেশের প্রাণ ও আরএফএল- এর উৎপাদিত সামগ্রী সহ গার্মেন্টস এবং অন্যান্য কিছু সামগ্রী ত্রিপুরা সহ বরাক উপত্যকার বাজারে খুব চাহিদা রয়েছে। অনুরূপভাবে এখানকার কমলা, আদা, সাতকরা, কয়লা ও পাথর বাংলাদেশে রফতানি করা হচ্ছে। উভয় দেশের মধ্যে ব্যবসা বাণিজ্য আরও বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ সহকারি হাইকমিশন গুয়াহাটিতে বাংলাদেশি পন্যের ট্রেড এক্সপো করার উদ্যোগ নিচ্ছে। এ নিয়ে তিনি সিলেটের চেম্বার অব কমার্স-এর সঙ্গে মত বিনিময় করতে বাংলাদেশ যাচ্ছেন বলে জানান। বরাক উপত্যকার ব্যবসায়ী ও পর্যটকরা বাংলাদেশ সফর করতে হলে গুয়াহাটি গিয়ে ভিসা সংগ্রহ করতে হয়। শিলচর, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দির মানুষের পক্ষে গুয়াহাটিতে গিয়ে ভিসা সংগ্রহ খুবই ব্যয়সাপেক্ষ। তাই শিলচরে ভিসার আবেদন সংগ্রহ করার কোনও পরিকল্পনা আছে কিনা? এ প্রশ্নের জবাবে রুহুল আমিন জানান, তিনি গুয়াহাটিতে দায়িত্ব গ্রহণের পর ভিসা ইস্যু পদ্ধতি সহজ করেছেন৷ গুয়াহাটি গিয়ে তাঁর কার্যালয় থেকে একদিনে ভিসা সংগ্রহ করা যায়। বরাকে বাংলাদেশের ভিসার আবেদন সংগ্রহ করার ব্যাপারে তিনি বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান। প্রসঙ্গক্রমে তিনি জানান, গুয়াহাটিতে দায়িত্ব নেবার পর এ নিয়ে দু’বার বরাক উপত্যকা সফর করেছেন। এখানকার মানুষের ভালবাসায় তিনি মুগ্ধ এবং আপ্লুত। এছাড়াও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকার সহ বরাক উপত্যকা ও ত্রিপুরার মানুষের অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন তিনি।