অনলাইন ডেস্ক : একসময় পাচার বাণিজ্য চালানোর জন্য মাদক কারবারীদের প্রথম পছন্দ ছিল ডিমাপুর- বোকাজান রুট । মায়ান্মার থেকে মোরে হয়ে মনিপুর ও নাগাল্যান্ডের বিভিন্ন পথ ব্যবহার করে গুয়াহাটি পৌঁছার পর পাচার করা হতো ভিন রাজ্যে। তবে বর্তমানে জাতিদাঙ্গা বিধ্বস্ত মনিপুর হয়ে পাচার বাণিজ্যের জন্য কিছুটা অসুবিধাজনক হয়ে পড়েছে। তাই মিজোরাম থেকে কাছাড় হয়ে পাচারেই বিশেষ আগ্রহী হয়ে উঠেছে কারবারিরা। সাম্প্রতিককালে কাছাড়ে যে পরিমাণ মাদক ধরা পড়েছে, তা থেকেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে তা।
গত কয়েক মাসে কাছাড় পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছে ২ হাজার কোটি টাকারও বেশি মূল্যের হেরোইন। এসব পাচারের পথে গ্রেফতার করা হয়েছে বেশ কয়েকজনকে। শনিবার রাতেও এভাবে শিলচর ঘুঙ্গুর আতালবস্তি এলাকায় বাইপাস থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে প্রচুর পরিমাণ হেরোইন। পুলিশ সুপার নূমল মাহাতো জানিয়েছেন, দুজন পুরুষ ও তাদের সঙ্গী এক মহিলা মিলে একটি আই টেন গাড়িতে করে পাচার করছিল হেরোইন। গোপন সূত্রের খবরের ভিত্তিতে ঘুঙ্গুর আতাল বস্তি সংলগ্ন এলাকায় বাইপাসে গাড়িটি আটকে তল্লাশি চালানো হয়। গাড়িতে পাওয়া যায় মোট ১০’৩৩৩ কেজি হেরোইন। বাজেয়াপ্ত করা এসব হেরোইনের মূল্য
১০৫ কোটি টাকা। যে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এরা হলো, মিজোরামের মায়ান্মার সীমান্তবর্তী চাম্পাই এলাকার লালতানজভা (৩১) ও তার পত্নী মালসাওমেঙ্গি (২৬) সহ তাদের এক সঙ্গী আইজল এর বংকং এলাকার বাসিন্দা ড্যানিয়েল সি লালচান্দামা (৩২)।পুলিশ সুপার জানিয়েছেন এরা চাম্পাই থেকে হেরোইন নিয়ে বহির্রাজ্যে পাচারের জন্য গুয়াহাটিতে নিয়ে যাচ্ছিল।
এদিকে এক বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, এই পাচার চক্রের “কিংপিন”-রা রয়েছে ইন্দোনেশিয়ায়। ইন্দোনেশিয়া থেকে প্রথমে সমুদ্রপথে হেরোইন সহ অন্যান্য নেশা সামগ্রী জাহাজে করে পাঠানো হয় মায়ান্মারে। এরপর মায়ান্মার থেকে মনিপুরের মোরে
বা মিজোরামের চাম্পাই সীমান্ত দিয়ে ঢুকানো হয় ভারতে। তবে মনিপুরে আইনশৃঙ্খলা জনিত পরিস্থিতির দরুন বর্তমানে মোরের বদলে মিজোরামের চাম্পাই সীমান্তকেই প্রাধান্য দিচ্ছে পাচারকারীরা। সূত্রটি জানান “কিংপিন”-রা ইন্দোনেশিয়ায় থাকলেও মিজোরাম-কাছাড় হয়ে
পাচারের পথে স্থানে স্থানে রয়েছে তাদের স্থানীয় সহযোগীরা। এদের কাজ কমিশনের বিনিময়ে পুলিশের নজর এড়িয়ে বা ম্যানেজের মাধ্যমে পাচারের পথ সুগম করে দেওয়া।
প্রসঙ্গত গত বুধবার গুয়াহাটি বিমানবন্দরে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা থেকে বিমানে আসা সে দেশের নাগরিক এক যুবকের পেট কেটে উদ্ধার করা হয় ১১ কোটির কোকেন। যুবকটি অপারেশন করে পেটে কোকেন ঢুকিয়ে পাচার করছিল। এ থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে ইন্দোনেশিয়ার মাদকের কারবারীরা কতখানি বেপরোয়া ও ভয়ঙ্কর। বর্তমানে যারা পাচারের রুট হিসেবে ব্যবহার করছে কাছাড়কে। এ জেলায় তাদের যেসব সহযোগী রয়েছে, পুলিশ ইতিমধ্যে এমন কয়েকজনকে সনাক্ত করে ফেলেছে বলে খবর। এদের উপর শীঘ্রই থাবা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।