অনলাইন ডেস্ক : বিশ্লেষকদের মতে লড়াইটা তেমন কঠিন না হলেও শিলচর আসনকে হাল্কাভাবে নিতে রাজি নয় বিজেপি। ফলে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মাকে নিয়ে রোড শোয়ের মাধ্যমে শিলচরের পথঘাট কাঁপালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
“আবকি বার- চারশো পার”-মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে অমিত শাহ এই স্লোগান দিতেই উত্তাল হয়ে উঠেন কয়েক হাজার জনতা। শুরুতেই এভাবে স্লোগান দিয়ে কেন্দ্রীয় গৃহ মন্ত্রী যে টিউন বেঁধে দেন, “রোড শো” বা মিছিল যত এগিয়েছে, ততই যেন পাল্লা দিয়ে বেড়েছে উৎসাহের মাত্রা। সব মিলিয়ে নির্বাচনকে সামনে রেখে রবিবার শিলচরে এই “রোড শো”কে ঘিরে জনতার উচ্ছ্বাস যেন উৎসবের মেজাজ এনে দেয়। এমনকি বৃষ্টিও এই আবহে ভাটা ফেলতে পারেনি।
“রোড শো”-শুরু হবার কথা ছিল বিকেল সাড়ে তিনটেয় । তবে অমিত শাহ পৌঁছাতে পৌঁছাতে কিছুটা দেরি হয়ে যায়। ততক্ষণে এই কার্যসূচিতে যোগ দেওয়ার জন্য বিজেপির কয়েক হাজার কর্মী ও সমর্থক জমায়েত হয়ে যান জেলা ক্রীড়া সংস্থার ময়দানের আশপাশ এলাকায়।
কুম্ভীরগ্রাম বিমানবন্দরে অবতরণের পর হেলিকপ্টারে পুলিশ প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছে অমিত শাহ যখন ফের গাড়িতে চড়ে এসে মেট্রো বাজার মোড়ে (পুরাতন দেবদূত মোড়) “রোড শো”- এ শামিল হন তখন ঘড়ির কাঁটায় বিকেল ঠিক ৪টে বেজে ৪৮ মিনিট। তিনি সাজিয়ে রাখা হুড খোলা গাড়িতে উঠার পর পেছনে পেছনে ওঠেন তারই সঙ্গে আসা মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বাস শর্মা সহ শিলচরেই মজুত থাকা দলের প্রার্থী পরিমল শুক্লবৈদ্য এবং সাংসদ রাজদীপ রায়। গাড়ির চাকা ঘুরতে শুরু করার আগে অমিত শাহ হাতে মাইক্রোফোন নিয়ে “ভারত মাতা কি জয়” সহ “আবকি বার চারশ পার”- স্লোগান দেওয়ার পর দুহাত তুলে সামনে ও পেছনে থাকা জনতাকে অভিবাদন জানান। এরপর গাড়ি চলতে শুরু করলে ব্যান্ড সহযোগে নৃত্য ও গীতে মেতে সঙ্গে স্লোগান দিতে দিতে শুরু হয় জনতারও পথ চলা। শাহর এই “শো”-চাক্ষুষ করার জন্য রাস্তার দুপাশেও লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। রাস্তার দু’পাশে থাকা বিভিন্ন ভবনের ছাদে এবং বারান্দায়ও দেখা যায় লোকেদের ভীড়। অমিত শাহ ও হিমন্ত বিশ্ব শর্মারা যে সজ্জিত গাড়ির সওয়ারি হয়েছিলেন সেই গাড়িতে মজুত রাখা হয়েছিল প্রচুর গোলাব ফুলের পাপড়ি। শাহ ও হিমন্ত হাত তুলে অভিবাদন গ্রহণ করার ফাঁকে ফাঁকে মুঠো ভরে ফুলের পাপড়ি ছুড়ে মারতে থাকেন রাস্তার দুপাশে জমায়েত লোকেদের দিকে। কোনও কোনও এলাকায় পাল্টা রাস্তার পাশে জমায়েত জনতার দিক থেকেও তাদের দিকে উড়ে যেতে দেখা যায় গোলাবের পাপড়ি। এসবের মাঝে আয়োজকদের পক্ষ থেকে যাত্রাপথে বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে মঞ্চ বেঁধে পরম্পরাগত পোশাকে নৃত্যশিল্পীদের দিয়ে ধামাইল, বিহু, মনিপুরী নৃত্য, বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরী এবং নাগানৃত্য পরিবেশনেরও ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সব মিলিয়ে কিছুক্ষণের জন্য শহরে যেন উৎসবের মেজাজ এসে যায়।
এভাবে উৎসবের মেজাজ এনে দিয়ে শাহের শো দেবদূত মোড় থেকে সেন্ট্রাল রোড, নাজিরপট্টি হয়ে এগুনোর পথে এক সময় ঝিরঝিরিয়ে বৃষ্টি নামতে শুরু করে। তবে এতেও কারো যেন কোনও পরোয়া ছিল না। ভিজে ভিজেই উৎসাহভরে সবাই এগোতে থাকেন শাহের চলার সঙ্গী হয়ে । নাজিরপট্টি পার হওয়ার পর শাহের শো প্রেমতলা, হাসপাতাল রোড হয়ে লোচন বৈরাগী রোডের মুখে পৌঁছার পর শেষ হয়। সেখানে শাহ সজ্জিত গাড়ি থেকে নেমে রাস্তার পাশে থাকা কিছু লোকের সঙ্গে করমর্দন করে অন্য একটি গাড়িতে উঠে নির্ধারিত রাস্তা ধরে লোচন বৌরাগী রোড,কবরস্থান রোড হয়ে শহর ছেড়ে বেরিয়ে সড়কপথে পৌঁছান কুম্ভীরগ্রাম বিমানবন্দরে। এবং বিমানে চড়ে চলে যান তার গন্তব্যে।
এদিকে এদিনের এই “রোড শো”-কে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করে বিজেপির কাছাড় জেলা কমিটির সভাপতি বিমলেন্দু রায় দাবি করেন, অমিত শাহকে ঘিরে সব মিলিয়ে দেড় লক্ষের চেয়েও বেশি লোকের সমাগম ঘটেছিল। তার কথায়, শিলচরে তাদের দলের প্রার্থী যে বিশাল ব্যবধানে জয়ী হচ্ছেন, এদিনের এই সমাগম তা ফের প্রমাণ করে দিয়েছে। তিনি বলেন, শিলচরে রাজনৈতিক কোনও মিছিলকে ঘিরে এর আগে এত সমাগম কখনও হয়নি। যারা এদিন শো-এ সামিল হয়েছেন, তাদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন তিনি।