অনলাইন ডেস্ক : অমৃত কালে গোটা দেশের প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে। পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে বরাকেও। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো (পিআইবি) আয়োজিত ‘বার্তালাপ’ অনুষ্ঠানে এই অভিমত ব্যক্ত করলেন বিশিষ্ট জনেরা। পাশাপাশি রাজ্যের রাজধানী শহর গুয়াহাটি ছাড়াও বরাক উপত্যকায় কর্মরত সাংবাদিকদের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড প্রদান-সহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় ‘পিআইবি’-র। এ ব্যাপারে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে বলে আশ্বাস দেন প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর উত্তর-পূর্ব জোনের অতিরিক্ত সঞ্চালক-প্রধান জানে নামচু।
শিলচর এনআইটির অতিথিশালায় উপত্যকার সংবাদমাধ্যম কর্তৃপক্ষ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে শুক্রবার এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হয় প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো। উপত্যকায় পিআইবির সভা এই প্রথম। ‘বার্তালাপ’ শীর্ষক এই মতবিনিময় সভার উদ্বোধনী পর্বে মুখ্য অতিথি ছিলেন দৈনিক সাময়িক প্রসঙ্গের সম্পাদক তৈমুর রাজা চৌধুরী। বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি সবাইকে নিয়ে উপত্যকায় এধরণের মতবিনিময় সভা আরও আয়োজনের প্রস্তাব পেশ করেন। তথ্য তুলে ধরে উল্লেখ করেন, বরাক থেকে প্রকাশিত বাংলা দৈনিকের সংখ্যা -ই বেশি। কিন্তু প্রায়শই সরকারি প্রেসবার্তা অসমীয়া বা ইংরেজিতে পাঠানো হয়। এতে অনেক সময় সমস্যার সৃষ্টি হয়। সময়াভাবে ইচ্ছে থাকলেও সেই প্রেসবার্তাগুলো বাংলায় তর্জমা করা সম্ভব হয় না। এজন্য তিনি বাংলায় প্রেসবার্তা পাঠানোর প্রস্তাব পেশ করেন। বক্তব্য চলাকালে -ই এই প্রস্তাব বিবেচনা করে বাংলা প্রেস বার্তা পাঠানোর কথা ঘোষণা করেন পিআইবির অতিরিক্ত সঞ্চালক-প্রধান নামচু।
তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে তৈমুর রাজা চৌধুরী আরও বলেন, বিভিন্ন সময় বরাক থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকায় স্থানীয় সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়। সেগুলো পিআইবি যথাস্থানে তুলে ধরলে তা সরকারের দৃষ্টিগোচর হবে এবং সমস্যার প্রতিকার ত্বরান্বিত হবে। তিনি এ-ও বলেন, গুয়াহাটি ভিত্তিক সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড দেওয়া হলেও বিভিন্ন জেলা-শহর থেকে প্রকাশিত সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের প্রদান করা হয় রিকগনিশন কার্ড। ফলে সরকার প্রদত্ত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকতে হয় তাঁদের। বিষয়টি যেন বিবেচনা করা হয়। এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন নামচু।
এর আগে অভ্যাগতদের হাত ধরে প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে সূচনা হয় অনুষ্ঠানের। বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণজ্ঞাপন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক পার্থ সরকার, ইস্টার্ন ক্রনিকলের সম্পাদক ড° সুজাতা চৌধুরী ধর, প্রবীণ সাংবাদিক হারাণ দে। ছিলেন প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর উত্তরপূর্ব জোনের অতিরিক্ত সঞ্চালক প্রধান জানে নামচে, অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর প্রণব কুমার নাথ প্রমুখ।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন জানে নামচু। তিনি বলেন, সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজকর্ম সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে অবহিত করে সংবাদমাধ্যম। কিন্তু ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও কিছু বাস্তবসম্মত কারণে সেইসব সংবাদকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বা পরিচয় গড়ে ওঠে না। সেই দূরত্বটা ঘোচাতেই বরাকে আসা এবং এই মতবিনিময় সভা। তিনি উল্লেখ করেন, প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো কেন্দ্র সরকার পরিচালিত সংস্থা। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজকর্ম তুলে ধরাই এর মুখ্য কাজ। কিন্তু বেসরকারি সংবাদমাধ্যম এবং সংবাদকর্মিদের সহযোগিতা ছাড়া এই কাজ অসম্পূর্ণ থাকত। এজন্য তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
বক্তব্যে হারাণ দে বলেন, অমৃতকালে ক্ষিপ্র গতিতে এগোচ্ছে দেশ। বরাকেও লেগেছে পরিবর্তনের হাওয়া। বিশেষ করে যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি হয়েছে। ব্রড গেজ হয়েছে, চন্দ্রনাথপুর- লংকা বিকল্প রেলপথের জরিপ চলছে। কাজ চলছে মহাসড়কের। এ প্রসঙ্গে তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত অটলবিহারী বাজপেয়ীকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরার জন্য একটি বিশেষ প্ল্যাটফর্ম তৈরির ব্যাপারে প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ইস্টার্ন ক্রনিকল-এর সম্পাদক সুজাতা চৌধুরী ধর। প্রাসঙ্গিক বক্তব্যে নতুন শিক্ষানীতি নিয়ে বিশদে আলোচনা করেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণজ্ঞাপন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক পার্থ সরকার।
উদ্বোধনী পর্বের পর কাছাড়ে আনারস চাষ নিয়ে বিশদে আলোচনা করেন কৃষি আধিকারিক ড° এআর আহমদ। বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে লক্ষীপুর মারকুলিন- এলাকার আনারসের চাহিদা ব্যাপক। কিন্তু কোনও বিশেষ কারণে এই আনারসকে জিআই ট্যাগ করা যাচ্ছে না। অথচ ইতিহাস ঘেঁটে জানা গিয়েছে, ত্রিপুরা থেকে চারা এনে ১৯৩৯ সালে মারকুলিন-এ আনারস চাষ শুরু করে শ্বেতাঙ্গরা। স্বাদ এবং গুণগত দিক দিয়ে এই আনারসের জুড়ি নেই। তিনি উল্লেখ করেন, লক্ষীপুর এলাকায় প্রায় ২ হেক্টর জমিতে ফলন হয় আনারসের। ইতিমধ্যে ৫০০ হেক্টর করে দুই দফায় ১০০০ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত আনারসকে অর্গানিক সার্টিফিকেট-এর আওতায় আনা হয়েছে। এবছর আরও ৫০০ হেক্টরকে আনা হবে অর্গানিক সার্টিফিকেট-এর আওতায়। আনারস চাষীদের আর্থিক ভাবে লাভবান করার লক্ষ্যে বিদেশে রফতানির ওপর জোর দিচ্ছে সরকার। কিন্তু বাধ সেধেছে পরিবহনের খরচ। ফলে রফতানিকারকরা দাম দিতে চাইছেন না। তাই কাছাড় কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে লক্ষীপুরের আনারসকে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে স্লাইস আকারে তা প্যাকেটজাত করে রফতানির চিন্তাভাবনা চলছে। এজন্য লক্ষীপুর অঞ্চলে একটি প্রসেসিং ইউনিট স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
উপস্থিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে আগত সাংবাদিকরা আনারসের চাষ ও এর রফতানি সহ বিভিন্ন বিষয়ে কৃষি আধিকারিকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। ড° আহমেদ সব প্রশ্নের ঠিকঠাক জবাব দেন। তিনি বলেন কেমিক্যাল যুক্ত সব্জি বাজারে যেন প্রবেশ না করে, এজন্য জোরদার অভিযান শুরু হয়েছে। ধরপাকড় চলছে। এ জন্য বাইরে থেকে সব্জি বরাকের কম আসবে। তাই আনাজের দাম আরও বাড়তে পারে।
ডিজিটাল ইন্ডিয়ার ভূমিকা নিয়ে ড° সদানন্দ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন ডিজিটাল ইন্ডিয়ার হাত ধরে স্বচ্ছতা এসেছে সরকারি কাজকর্মে। তবে আক্ষেপ, একমাত্র কেরল ছাড়া অন্যান্য রাজ্যগুলিতে ডিজিটাল ব্যবস্থা এখনও পুরোপুরি চালু হয়নি। তিনি উল্লেখ করেন,১৯৬৫ সালে ইন্টারনেট পরিষেবা শুরু হয়েছিল দেশে। তারপরও আমাদের দেশ ডিজিটাল পরিষেবার ক্ষেত্রে পিছিয়ে। দেশে ৪২ শতাংশ পুরুষ এবং ৩০ শতাংশ মহিলা কর্মক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার করেন। তার কথায় ২০১৪ র আগে ভারতে ডিজিটাল প্রযুক্তি থাকলেও তা মোটেই আশাপ্রদ ছিল না। তবে এনডিএ সরকার আসার পর এই ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।
এরপর ‘মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট ইন হেলথ, স্পেশল ফোকাস অন আয়ুষ্মান ভারত’ নিয়ে আলোচনা করেন জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনে কর্মরত করিমগঞ্জের ডিস্ট্রিক্ট মিডিয়া এক্সপার্ট সুমন চৌধুরী। তিনি সংবাদমাধ্যমের ভূমিকার ওপর বক্তব্য রাখেন। বলেন, বর্তমানে ম্যালেরিয়া, কলেরার মতো রোগের প্রাদুর্ভাব কমে গেলেও ডায়বেটিজ, রক্তচাপ বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুরুতে গুরুত্ব না দিয়ে পরে সমস্যায় পড়ছেন মানুষ। তিনি বলেন, আয়ুষ্মান ভারতের কার্ড নিতে গরীব শ্রেণির লোকদের সমস্যা অনেকটা -ই লাঘব হয়েছে। অনলাইনে ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় আয়ুষ্মান কার্ড তৈরি হচ্ছে। এরপর ‘ মিডিয়া ইন্টারাকশন অন গভর্নমেন্ট ফ্ল্যাগশিপ প্রোগ্রাম বিন ইমপ্লিমেন্টেড ইন বরাকভ্যালি’— এই বিষয়ের ওপর আলোচনা করেন নববার্তা প্রসঙ্গের সম্পাদক হবিবুর রহমান চৌধুরী। মহাসড়কের কাজ সম্পূর্ণ হওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। রেল যোগাযোগ, কাছাড় পেপার মিল, সুগার মিল ইত্যাদি প্রসঙ্গ টেনে বক্তব্য রাখেন তিনি। এদিন গোটা অনুষ্ঠান অত্যন্ত নিখুঁতভাবে সঞ্চালনা করেন পরমা বন্দ্যোপাধ্যায়।