অনলাইন ডেস্ক : শিলচর -ইম্ফল রেল লাইন যেন রেলের একাংশ ইঞ্জিনিয়ার ও ঠিকাদার সংস্থার কাছে সোনার ডিম পাড়া হাঁসে পরিণত হয়েছে। এই রেল লাইন তৈরীর কাজে কিভাবে কোটি কোটি টাকা নয়ছয় করা হয়েছে সিবিআইর তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এর চিত্র।
সম্প্রতি গুয়াহাটিতে শিলচর-ইম্ফল রেললাইন তৈরির কাজে নিয়োজিত ভারতীয়া ইনফ্রা প্রজেক্টস লিমিটেড (বিআইপিএল) নামে ঠিকাদার সংস্থার কার্যালয় সহ সংস্থার অন্যান্য ঠিকানায় অভিযান চালায় সিবিআই। অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় সংস্থার চার সঞ্চালক রাম অবতার ভারতীয়া, পবন কুমার ভারতীয়া, অবিনাশ ভারতীয়া এবং শঙ্কর প্রসাদ মোরকে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে শিলচরে এন এফ রেলের নির্মাণ থাকার কার্যালয় সহ ওই কার্যালয়ে কর্মরত সিনিয়র সেকশন অফিসার সন্তোষ কুমারের বাসভবনে তল্লাশি চালিয়ে প্রচুর নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করে সিবিআই। এই অভিযান চালানোর পর, সিবিআইর দলটি সন্তোষ কুমারকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। শিলচরে বাজেয়াপ্ত করা নথিপত্র ও সন্তোষ কুমারকে জিজ্ঞাসাবাদের সূত্রে সিবিআইর কাছে উন্মোচিত হয় দুর্নীতির কাহিনী।
সিবিআই সূত্রকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থার খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, তদন্তে যে তথ্য পাওয়া গেছে সে অনুযায়ী, দীর্ঘদিন ধরে নীতিবহির্ভূতভাবে কোটি কোটি টাকা আদায় করে চলছিলেন ঠিকাদার সংস্থা বিআইপিএল-এর কর্তৃপক্ষ। সন্তোষ কুমারের সহায়তায় চালানো হয়েছে এই লুণ্ঠন। খবরে আরও উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত শিলচর-ইম্ফল লাইনের বিভিন্ন নির্মাণ কাজের বিল আদায়ের জন্য বিআইপিএল কর্তৃপক্ষ সন্তোষ কুমারকে ঘুষ দিয়েছিলেন ৭৫ লক্ষ টাকা। তবে যাতে ধরা পড়তে না হয় এর জন্য ঘুষ দেওয়ার ক্ষেত্রে অবলম্বন করা হয়েছিল ভিন্ন পন্থা। খবরের সূত্র অনুযায়ী, বিআইপিএল কর্তৃপক্ষ সন্তোষ কুমারকে সরাসরি ঘুষ না দিয়ে তার বাবা অম্বিকা শাহ এবং পত্নী পুস্পা কুমারীর নামের ৬টি ব্যাংক একাউন্টে ট্রান্সফার করেছিলেন ঘুষের এই ৭৫ লক্ষ টাকা। অবশ্য শুধু এই পরিমাণ টাকাই নয় বিভিন্ন সময়ে সংস্থার পক্ষ থেকে অন্যান্যভাবেও সন্তুষ্ট করা হয়েছিল সন্তোষ কুমারকে।
বিহারের রাজধানী পটনার বাসিন্দা সন্তোষ কুমার সম্পর্কে জানা গেছে সেই ২০০৯ সালে তিনি শিলচরে নির্মাণ শাখায় ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজে যোগ দেন। দীর্ঘ বছর তিনি এখানেই কাজ করেন। এভাবে গড়ে তোলেন মৌরসি পাট্টা।
বিআইপিএল সম্পর্কে জানা গেছে, ২০১০ সাল থেকে ২০২৩ পর্যন্ত এই সংস্থা উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের ১০৬ টি কাজের বরাত পেয়েছে। সংস্থার অন্যতম সঞ্চালক রামঅবতার ভারতীয়রার সঙ্গে সন্তোষ কুমারের সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ। আর সংস্থা যেসব কাজের বরাত পেয়েছে সেসবের বেশির ভাগেরই নিরীক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন সেই সন্তোষ কুমার।
এদিকে শিলচর- লামডিং ব্রডগেজ লাইন তৈরির সময়ও ব্যাপক হারে দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ এনে এসব নিয়েও সিবিআই তদন্তের দাবী জানিয়েছে অল বরাক ইয়ুথ-স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (অবিসা)। সংস্থার কর্মকর্তা বাহারুল ইসলাম বড়ভুইয়া বলেন, শিলচর- লামডিং লাইনের কাজ নিয়ে সিবিআই তদন্তের জন্য তারা বারবার দাবি উত্থাপন করেছেন। কিন্তু কোনও অজানা কারণে এনিয়ে নড়াচড়া টের পাওয়া যাচ্ছে না। তার কথায়, শিলচর- ইম্ফল লাইনের কাজেই যদি এমনটা হয়ে থাকে তবে শিলচর-লামডিং লাইনে কি হয়েছে তা সহজেই অনুমেয়। তাই শিলচর- লামডিং লাইনের কাজ নিয়েও সিবিআই তদন্ত জরুরী। এমনটা হলে
অনেক রাঘববোয়ালের জালে ফাঁসাটা নিশ্চিত।