অনলাইন ডেস্ক : বৃহস্পতিবার দীপাবলীর রাতে শিলচর জানিগঞ্জ ভূঁইয়াগলিতে এক বিধংসী অগ্নিকাণ্ডে ভস্মিভূত হল গুদামঘর। সন্ধ্যার পরই আগুনের সূত্রপাত হয়ে যেভাবে দেখতে দেখতেই ধাউ ধাউ করে জ্বলে ওঠে এতে ঘিঞ্জি জতুগৃহসম ওই এলাকায় সৃষ্টি হয় তীব্র আতঙ্কের। যদিও ভাগ্যক্রমে আশপাশে ছড়ানোর আগেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। এদিনের এই অগ্নিকাণ্ডকে ঘিরে ঘিঞ্জি জতুগৃহসম এলাকার ভয়ংকর চিত্রের পাশাপাশি চর্চা শুরু হয়েছে রাস্তার উপর পুজোর আয়োজন নিয়েও । রাস্তা জুড়ে পুজো মণ্ডপ গড়ে তোলায় দমকল গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে কিছুটা বিলম্ব হয়।
অগ্নিকাণ্ডে ভষ্মীভূত গুদামঘরটির মালিক এলাকার বাসিন্দা সিপিএম কর্মকর্তা দুলাল মিত্রের পরিবার। ফুলওয়াল ও উপরে টিন থাকা বেশ বড় আকারের ঘরটিতে ছিল তিনটি গুদাম। ঘরটি ভাড়া নিয়ে অন্যান্যরা তাদের সামগ্রী রাখতেন ওই ঘরে। মিত্র পরিবারের বাড়ির পেছনদিকেই ওই গুদাম ঘরের অবস্থান।
এলাকার প্রাক্তন পুরসদস্য শ্যামল দাস জানিয়েছেন ঘরটি তিনটি আলাদা আলাদা ভাবে তুলা-কম্বল এবং জুতো ও কাজু-কিসমিসের গুদাম হিসেবে ব্যবহৃত হতো। তুলা মজুত রাখতেন জানিগঞ্জ এলাকার শ্রীদুর্গা স্টোরস নামে এক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ। অন্যান্য সামগ্রী ছিল অন্য কিছু প্রতিষ্ঠানের। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে সব কিছুই।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এদিন সন্ধ্যায় হঠাৎ করে আগুন জ্বলে ওঠার পর দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ে পুরো গুদাম জুড়ে। এতে আশপাশের লোকেরা আগুন নেভাতে সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি খবর দেওয়া হয় দমকল বাহিনীকে। তবে দমকল বাহিনী কাছাকাছি পৌঁছালেও ঠিক অগ্নিকাণ্ডস্থলে যেতে পারছিল না। সেখানে যাওয়ার জন্য তিন দিক দিয়ে রাস্তা রয়েছে। ভূঁইয়া গলি, মহাবীর মার্গ (গোয়ালা পট্টি) ও শুটকিপট্টি। কিন্তু তিনটি রাস্তা জুড়েই দেখা যায় রয়েছে কালী পূজার মন্ডপ। মহাবীরমার্গের মুখেই পুরো রাস্তা জুড়ে রয়েছে স্পিরিট ইউনিয়ন নামে এক ক্লাবের মন্ডপ। আর ভূঁইয়াগলির মুখে জানিগঞ্জ পুজো কমিটির মন্ডপ। একইভাবে শুটকি পট্টিতে প্রগতি সংঘ নামে এক ক্লাবের মন্ডপ থাকায় দমকল বাহিনী সোজা গাড়ি নিয়ে ঘটনাস্থলে যেতে পারছিল না। শেষ পর্যন্ত শুটকিপট্টির দিকে প্রগতি সংঘের মন্ডপ কিছুটা সরিয়ে দমকল গাড়ি যাওয়ার পথ করে দেওয়া হয়। দমকল বাহিনী জল ছেটানো শুরু করার পর অবশ্য ঘন্টা দেড়েকের মধ্যেই আগুন মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আসে।
রাস্তা জুড়ে পূজো মন্ডপ থাকায়, দমকল গাড়িকে যেভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে বেগ পেতে হয়েছে, এনিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন এলাকার অনেকেই। রাস্তা জুড়ে এভাবে পূজো মন্ডপ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কি সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভাগ থেকে অনুমতি নেওয়া হচ্ছে, আর যদি নেওয়া হয়েও থাকে তবে কিভাবে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে, এনিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
এদিন আগুন লাগার পর দমকল বাহিনীর পাশাপাশি ঘটনাস্থলে ছুটে যেতে দেখা যায় পুলিশ সুপার নূমল মাহাতো সহ বাহিনীর অন্যান্য কর্মকর্তাদেরও। পুলিশ সুপার জানান দমকল বাহিনীর পাশাপাশি ওএনজিসি এবং সেনাবাহিনীর দমকল ইঞ্জিনও আগুন নেভানোর কাজে লাগানো হয়েছে। তিনি আরও জানান, এপর্যন্ত অগ্নিকাণ্ডে কেউ শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
দমকল বাহিনীর এক সূত্র জানান, আগুন কিভাবে লেগেছে তা খতিয়ে দেখা হবে। তবে এলাকার একাংশ বাসিন্দা জানিয়েছেন, ওই গুদামে যারা কাজ করেন তারা ভেতরে দীপাবলীর প্রদীপ জ্বালিয়ে বাইরে তালা বন্ধ করে চলে যান। তাদের অনুমান ওই প্রদীপ থেকেই সূত্রপাত ঘটেছে আগুনের।