অনলাইন ডেস্ক : শহরে রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে অবৈধভাবে ব্যবসা চালানো ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পুরসভার সম্পর্ক যেন “মামা- ভাগ্নে”-র মতো। মামা একবার শাসন করে রক্তচক্ষু দেখালেইবা কি, সাময়িকভাবে নিরস্ত হওয়ার পর স্বরূপ ধারণ করতে ভাগ্নের সময় লাগে না মোটেই। আখেরে মামার বাড়ির আবদার বলে কথা। বুধবার দুপুরে শিলচর পুরসভা ফাটক বাজার সংলগ্ন এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালানোর পর সন্ধ্যায়ই দেখা গেছে এমন ছবি।
ফটক বাজার সংলগ্ন দেওয়ানজি বাজার, ওল্ড লক্ষ্মীপুর রোড, জিএমসি রোড ও কালীবাড়ি রোড
ইত্যাদি এলাকায় তীব্র যানজট নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। বিশেষত ফাটক বাজারের সামনের অংশে
ফুটপাত এবং রাস্তার পাশ মিলিয়ে কিছু সব্জি ও ফল ব্যবসায়ী এমনভাবে দোকান মেলে বসেন যে চলাচলের জন্য আর কোনও জায়গা থাকে না বললেই চলে। এর উপর আবার বিভিন্ন যানবাহনের অবৈধ পার্কিং। পুরসভার এক কর্তাব্যক্তি জানিয়েছেন, এনিয়ে বারবার অভিযোগ আসছিল। বিশেষত কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগী নিয়ে যাওয়া অ্যাম্বুলেন্সও দীর্ঘসময় আটকে থাকার ঘটনা ঘটেছে।
এসবের জেরে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয় বুধবার।
এদিন দুপুরে পুলিশ এবং প্রশাসনিক কর্তা কুমার গৌরব দাসের উপস্থিতিতে দেওয়ানজী বাজার ও থানা রোডের মোড় থেকে শুরু হয় অভিযান। এক্সকেভেটর লাগিয়ে এই উচ্ছেদ অভিযান চলে দেওয়ানজী বাজার থেকে ধরে গোপালগঞ্জ, ওল্ড লক্ষ্মীপুর রোডে ফাটক বাজারের সামনের অংশ সহ
জিএমসি রোড, কালিবাড়ি রোড এবং থানা রোডে।
উচ্ছেদ অভিযানে ফুটপাতের ওপর মেলে রাখা বিভিন্ন দোকানের পসরা উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ভেঙ্গে দেওয়া হয় অস্থায়ীভাবে গড়ে তোলা অবৈধ সব পরিকাঠামো। উচ্ছেদ শুরু হওয়ার পর দেখা যায় নিজেদের সামগ্রী সরিয়ে নিতে ব্যবসায়ীদের দৌড়ঝাঁপ। মূহুর্তেই খালি হয়ে যায় রাস্তা। এরই মাঝে ফাটক বাজারের সামনের অংশ থেকে পুরসভার গাড়ি উঠিয়ে নিয়ে যায় কিছু শাকসব্জি এবং ফলমূলও। অভিযানের মাঝে ট্রাফিক পুলিশ রাস্তার পাশে অবৈধভাবে পার্কিং করে রাখা বিভিন্ন যানবাহনেরও অবাধে জরিমানা করে। এসব দেখে যানবাহনের মালিকরাও দ্রুত সরিয়ে নিয়ে যান তাদের যানবাহন।
অভিযানের পর উন্মুক্ত রাস্তা দেখে মনে হচ্ছিল এ যেন জাতীয় সড়ক। কোনও দখলদারি নেই, প্রশস্ত রাস্তায় যানবাহন চলছে অবাধে। কিন্তু এমন দৃশ্য স্থায়ী হয়নি কয়েক ঘন্টাও। সন্ধ্যা হতে হতেই দেখা যায় ফের সেই আগের চিত্র। রাস্তার পাশে পসরা নিয়ে বসা দোকানী, যত্রতত্র অবৈধ পার্কিং। এসব দেখে সংলগ্ন ওয়াটার ওয়ার্কস রোডের এক বাসিন্দা
থমকে থমকে বাইক নিয়ে এগোনোর পথে বিরক্তির সুরে মন্তব্য করেন, এই অবৈধ দখলকারীদের দমায় কার সাধ্য, অন্তত পুরসভার তো এমন ক্ষমতা নেই।
ফাটক বাজার ও আশপাশ এলাকায় এভাবে উচ্ছেদের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ফের রাস্তা দখল করে বসাটা নতুন কিছু নয়। বিগত দিনেও বারবার দেখা গেছে এসব। অবৈধভাবে দোকান মেনে বসা, এই দোকানিরা কিভাবে এতটা সাহসী হতে পারে, এনিয়ে খোঁজ চালিয়ে দেখা গেছে, এদের ভরসার জড় নিহিত রয়েছে পুরসভায়ই।
এদিন সন্ধ্যায় ফাটকবাজার এলাকায় রাস্তার পাশে সব্জি নিয়ে বসা এক দোকানীকে জিজ্ঞেস করলে, তিনি পুরসভার অভিযানকে পাত্তাই দিতে রাজি হননি। জানান দুপুরে অভিযানের সময় উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তার কিছু সব্জি। ছয়মাস বা বছরে এসব একদিন হয়েই থাকে। পুরসভার লোকেরাই তো সকাল এবং রাত দু’বেলা তাদের কাছ থেকে নিয়ে থাকেন দশ টাকা করে “তোলা”। পুরসভার লোকেরাই যেখানে “তোলা” নেন, তখন তিনি কেন ভয় পেতে যাবেন। কিছু লোক চিৎকার চেঁচামচি করবেন, আর এভাবে কয়েক মাসে একদিন অভিযান চলবে এর চেয়ে বেশি কিছু হওয়ার নয়। ওই ব্যবসায়ী আরও জানান, শুধু পুরসভার লোকেদেরই নয়, তিনি যে জায়গায় সব্জি নিয়ে বসেন সেই জায়গার পেছনের দোকানীকেও দৈনিক দিতে হয় ৫০ টাকা করে।
একাংশ দোকানীর এভাবে দোকানের সামনে রাস্তায় বা ফুটপাতে অন্য কাউকে পসরা নিয়ে বসার সুযোগ করে দিয়ে পকেটে টাকা ঢোকানোর রেওয়াজ চলে আসছে শহরের বিভিন্ন এলাকায়। কিন্তু পুরসভার নাম করে কারা আদায় করে নিয়ে যায় “তোলা”, এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
পুরসভার এক কর্তাব্যক্তি জানিয়েছেন, রাস্তা দখল করে ব্যবসা চালানো অবৈধ দোকানিদের কাছ থেকে সরকারিভাবে পুরসভার “তোলা” আদায়ের প্রশ্নই উঠে না। এই বাবদ এক টাকাও জমা হয় না পুরসভার তহবিলে। তবে পুরসভার নাম করে প্রতিদিন দুবেলা যে “তোলা” আদায় করা হয়ে থাকে, তা যাচ্ছে কোথায়।
এক বিশেষ সূত্রের খবর অনুযায়ী, এই “তোলা” আদায়ের পেছনে রয়েছে এক সিন্ডিকেট। যার মাথায় রয়েছেন পুরসভারই কয়েকজন কর্মী। এদের নিযুক্ত মাসলম্যানরা ভাগ বাটোয়ারার শর্তে শহরের বিভিন্ন এলাকায় পথিপ্বার্শস্থ দোকানিদের কাছ থেকে
পুরসভার নাম নিয়ে আদায় করে থাকে “তোলা”। ফাটকবাজার এলাকায় যেহেতু পথিপ্বার্শস্থ দোকানিদের সংখ্যা খুব বেশি, তাই ওই এলাকায় সিন্ডিকেটের রমরমাও বেশি। যার দরুন অভিযান চললেও রাস্তার পাশে পসরা নিয়ে বসা দোকানিরা এসবকে পাত্তা দিতে রাজি নন মোটেই।
যদিও পুরসভার এক কর্তাব্যাক্তি জানিয়েছেন, এবার থেকে এমন অভিযান চলবে প্রায়ই। ওই কর্তা ব্যক্তি কথা বলতে গিয়ে, রাস্তা জুড়ে অবৈধ ব্যবসার পেছনে পুরসভার অভ্যন্তরে সিন্ডিকেট গড়ে ওঠার সম্ভাবনাও পুরোপুরি উড়িয়ে দেননি। বলেন নিয়মিত অভিযান চললে, সিন্ডিকেটেরও কোমর ভেঙ্গে যাবে। কারণ তখন আর তাদের উপর ভরসা রাখতে পারবেন না অবৈধ দখলদার ব্যবসায়ীরা।