অনলাইন ডেস্ক : শবনম বেগম নামে মহিলার রহস্যজনক মৃত্যুর জেরে বড়খলা থানা এলাকার চান্দপুর প্রথম খন্ডে সোমবার উত্তেজনার সৃষ্টি হলেও বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত। তবে শবনমের “স্বামী” গৃহরক্ষী জওয়ান অরূপ শেখর দাস এখনও সন্ধানহীন।
শবনমের মৃত্যুর পেছনে রহস্য লুকিয়ে থাকতে পারে অভিযোগ উঠায় পুলিশ মঙ্গলবার অরূপের চান্দপুর প্রথম খন্ডের বাড়ি থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এদিন বিকেল তিনটা নাগাদ ভাঙ্গারপার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বিপুল বিশ্বাস ম্যাজিস্ট্রেট রবার্ট টলারের উপস্থিতিতে মৃতদেহ উদ্ধার করে পাঠান মেডিক্যালে।
এসবের আগে এদিন সকালে অরূপের বাবা শশাঙ্ক শেখর দাস চুপিসারে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালান। তবে স্থানীয় লোকেরা তাকে যেতে দেননি।
এদিন মৃতদেহ উদ্ধারের সময় উপস্থিত ছিলেন শবনমের মা খাদিজা বিবি ও বোন বিলকিস বেগম। বাঁশকান্দি উজান তারাপুরের বাসিন্দা খাদিজা বিবি এদিনও অভিযোগ করেন শবনমের মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। তার মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তার কথায়, তিনি শবনমের মৃতদেহে অনেক ক্ষতচিহ্ন দেখতে পেয়েছেন। তার দাঁতও ছিল ভাঙ্গা, এছাড়া গুপ্তাঙ্গ দিয়েও রক্ত ঝরার চিহ্ন নজরে পড়েছে তার। এসব দেখেই তিনি নিশ্চিত হয়ে গেছেন শবনমকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি জানান অরূপ নিজেকে রাজু উদ্দিন বড়ভূইয়া হিসেবে পরিচয় দিয়ে শবনমের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল। বছর দেড়েক আগে গৃহরক্ষী বাহিনীর পোশাক পরে অরূপ দাস ওরফে রাজু উদ্দিন তার বাড়িতে গিয়ে শবনমকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। তখন তিনি তার অভিভাবকদের পাঠাতে বলেন। কিন্তু রাজু উদ্দিন পরিচয় দেওয়া অরূপ তার অভিভাবকদের পাঠায়নি। এসবের পর বছর খানেক আগে একদিন তিনি বাড়িতে না থাকার সুযোগে অরূপ শবনমকে নিয়ে পালিয়ে যায়। এরপর কয়েক মাস তিনি মেয়ের সম্পর্কে কিছুই জানতে পারেননি। তিন- চার মাস পর মেয়ে হঠাৎ একদিন তাকে ফোন করে জানায় রাজু পরিচয় দিয়ে তাকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়া যুবকটি আসলে অরূপ, এবং সে হিন্দু ধর্মাবলম্বী। খাদিজা বিবি আরও জানান, সেদিন শবনম ফোনে তাকে জানিয়েছিলেন অরূপ তাকে ধর্ম পরিবর্তনের জন্য মারপিট করছে। এসব বলার পরই কেউ একজন শবনমের হাত থেকে ফোন কেড়ে নেয়, আর কোনও কথা হয়নি।
এভাবে পুরো ঘটনাক্রমের বিবরণ দিয়ে খাদিজা বিবি জানান তিনি শীঘ্রই অরূপ এবং তার বাবা শশাঙ্ক শেখর দাসের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করবেন।
প্রসঙ্গত গত রবিবার অরূপ ও তার বাবা শশাঙ্ক শেখর শবনমের মৃতদেহ দাহ করার জন্য পাঁচগ্রাম ঠান্ডা পুরের শ্মশানঘাটে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু “ডেথ সার্টিফিকেট” দেখাতে না পারায় শ্মশান কর্তৃপক্ষ মৃতদেহ দাহ করতে দেননি। এই অবস্থায় শ্মশান থেকেই পালিয়ে যায় অরূপ। আর সারারাত মৃতদেহ নিয়ে শ্মশানে কাটান শশাঙ্ক শেখর। পরদিন সোমবার তিনি মৃতদহ নিয়ে চলে আসেন চাঁন্দপুর প্রথম খন্ডে তার বাড়িতে। মৃতদেহ নিয়ে তিনি বাড়িতে আসার পর দাহ করার তোড়জোড় শুরু করলে আপত্তি জানান স্থানীয় লোকেরা। তাই মৃতদেহ দাহ করা সম্ভব হয়নি। এই অবস্থায় এতে হস্তক্ষেপ করে পুলিশ। আর মঙ্গলবার অরূপের বাড়ি থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।