অনলাইন ডেস্ক : পুজো ঘিরে তৈরি হয় অনেক রকমের প্ল্যানিং। নতুন জামা থেকে শুরু করে খাওয়া-দাওয়া—- সব কিছুই থাকে লিস্টে। থাকে প্যান্ডেল হপিং-এর প্রস্তুতি। তাই পুজোর মাস দেড়েক আগে থেকে-ই সন্ধানী চোখ খবর রাখে, কোন পাড়ায় কেমন চলছে প্রস্তুতি। পুজোয় যারা দল বেঁধে প্যান্ডেল হপিং করতে ভালবাসেন, তারা এবার অনায়াসে একপাক ঘুরে আসতে পারেন পদ্মনগর বিলপার শঙ্কর দিঘির পাড়ের পুজোয়। সেখানে চমক দেওয়ার মতো সব প্রস্তুতি নিচ্ছে আপনজন দুর্গা পুজা কমিটি। এবার শঙ্কর দিঘির পাড়ে পুজোমণ্ডপ হচ্ছে ডিজনি ল্যান্ড-এর আদলে। প্রায় তিন হাজার বর্গফুটের এই ডিজনিল্যান্ড-র পাশেই তৈরি হচ্ছে সাড়ে চার হাজার বর্গফুটের একটি ফলের বাগানও। সেখানে থোকা থোকা আঙুর, আপেল সহ বিভিন্ন ধরনের ফলমূল ঝুলে থাকবে গাছে !
না, এর একটাও নকল নয়। চাইলে-ই সেই বাগান থেকে টাটকা ফলের রসাস্বাদন করতে পারবেন দর্শনার্থীরা। পুকুরের আড়েবহরে এপার-ওপার জুড়ে জলের ওপর থাকবে ব্রিজের আদলে তিন-তিনটি সেলফি জোন। জলে থাকবে প্যাডেল বোট। এছাড়া অন্যান্য বছরের মতো বাহারি আলোকসজ্জা, আকর্ষণীয় প্রতিমা সহ পুকুরের জলে ফোয়ারা থাকবে এবছরও। ডিজনিল্যান্ড-র অন্তত ১০টি বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তোলা হবে মণ্ডপে। থাকবে মিকিমাউস, টম অ্যান্ড জেরি, ডোরেমন-র মতো চরিত্রগুলি। মোট কথা, গল্প মনে হলেও খাস শিলচরের বুকে একটুকরো ডিজনিল্যান্ড বানিয়ে এবারও বাজিমাতের প্রস্তুতি নিচ্ছে আপনজন। রবিবার মণ্ডপস্থলে এক সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে আপনজন দুর্গা পূজা কমিটির প্রচার সচিব শঙ্কর শীল, সভাপতি পরিমল পাল, সম্পাদক রঞ্জন রায়রা বলেন, বুদ্ধপূর্ণিমায় খুটি পূজা করে শুরু হয়েছে প্যান্ডেলের কাজ। সেই থেকে কাজ চলছে লাগাতার। পুজোর দিন যত দিন ঘনিয়ে আসছে বাড়ছে ব্যস্ততার বহর। তাঁরা জানান, এবারও পুজো হবে শাস্ত্রীয় প্রতিমায়। তারাপুর চাঁদমারি রোডে মায়ের মূর্তি গড়ছেন প্রতিমা শিল্পী শুকদেব পাল। প্রতিমার গায়ে থাকবে ঝিনুকের কারুকাজ। তবে দেবীর বসন, ঝিনুকের কারুকাজ হবে শঙ্কর দিঘির মণ্ডপে। তাই পুজোর বেশ কিছুদিন আগে দেবমূর্তি আনা হবে সেখানে। এতেও থাকবে অভিনবত্ব।
কী সেটা? রঞ্জন রায় জানান, চাঁদমারি রোড থেকে দেবীমূর্তি মণ্ডপে আনার সময় ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করা হবে রাস্তা। ছেটানো হবে গঙ্গাজল। দেবী বিদায়ের বেলায় থাকবে চমক। তবে সেটা এখনই খোলসা করছেন না তাঁরা। মণ্ডপ উদ্বোধন হবে তৃতীয়ায়। প্রবেশপথ রাখা হবে পাঁচটি। মণ্ডপ সজ্জায় রয়েছেন স্থানীয় শিল্পী কঙ্কণ কংসবণিক। আলোক সজ্জায় বিপুল নাথ। তিনিও স্থানীয়। পুজো কমিটির কর্মকর্তা রঞ্জন রায় জানান, সপ্তম বছরে পা রেখেছে আপনজন ক্লাবের দুর্গা পুজো। এই ক’বছরেই শহরে পুজো আয়োজনে স্বকীয়তার ছাপ ফেলতে সক্ষম হয়েছেন তাঁরা। কৃষ্টি,ঐতিহ্য,পরম্পরা ও শিষ্টাচার বাদ দিয়ে বিজাতীয় উল্লাস যে সেলিব্রেশন হতে পারে না, বিগত দিনে পুজো আয়োজনের মাধ্যমে সেই বার্তাই দিয়েছে আপনজন।সাত্ত্বিকতা, আথিতেয়তা এবং পাড়ার সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসই হচ্ছে এই পুজোর মূল চালিকাশক্তি।
তিনি আরও জানান, গত পুজোর পরই এবছরের থিম নিয়ে পাকা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সে অনুযায়ী সদস্যদের কাছ থেকে প্রতিদিন একটু একটু করে চাঁদা সংগ্রহ হয় বছরভর। পুজো আয়োজনে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকার বাজেট স্থির হয়েছে এ বছর। এদিন অন্যান্যদের মধ্যে সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আপনজন দুর্গা পূজা কমিটির কোষাধ্যক্ষ নবেন্দু পাল, দুই সহ-সভাপতি জহর পাল ও দীপক পাল, প্রণবাশিস কর, রঞ্জন পাল, নান্টু পাল, রাজীব পাল, অঞ্জন পাল, কল্যাণ শ্যাম, আবু পাল, তুহিন পাল প্রমুখ।