অনলাইন ডেস্ক : বন্ধ হয়ে গেল শিলং রোড। বহির্দেশের সঙ্গে বরাক উপত্যকার যোগাযোগের যে একমাত্র মাধ্যমটি কোনওমতে সচল ছিল, তাও শেষ হয়ে গেল! বৃহস্পতিবার বিকেল ২টা নাগাদ লুমসুলুঙে উপর থেকে নেমে আসা পাহাড়ি জলের তোড়ে ভেসে গেল ৬নং জাতীয় সড়ক। ফলে রেল লাইন ও মহাসড়কের পর বরাকের অবশিষ্ট সম্বলটুকুও বাকি রইলো না। এরই সঙ্গে পুরোপুরি অবরুদ্ধ হয়ে গেল কাছাড়, করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি। সঙ্গে ত্রিপুরা, মিজোরামও। এ ঘটনার পর ইষ্ট জয়ন্তিয়া হিলস জেলা প্রশাসন ৬নং জাতীয় সড়কের ওই অংশে যান চলাচল অনিদিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে। আশংকা আগে থেকেই ছিল। তবুও নমঃনমঃ করে চলছিল ৬নং জাতীয় সড়ক। সোনাপুরের সুড়ঙ্গ মুখে দুদিন আগে ধস পড়ে সাময়িক বিচ্ছিন্ন হয় যোগাযোগ ব্যবস্থা। কিন্তু লাগাতার চেষ্টা শেষে ৭ঘন্টা পর সচল হয়ে গিয়েছিল শিলং রোড। এরপরও আশংকা ছিল একেবারে মালিডহর থেকে লুমসুলুং পর্যন্ত বিস্তৃর্ণ এলাকা নিয়ে। সেখানকার বেশ কিছু স্থান ধস প্রবণ থাকায় সিঁদুরে মেঘ দেখছিলেন অনেকেই। বিগত বছরগুলোর অভিজ্ঞতা কুরে কুরে খাচ্ছিল লরি চালক থেকে শুরু করে নিত্যযাত্রীদের। এরইমধ্যে বুধবার চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করে সেখানকার প্রশাসন। অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনাকে সামনে রেখে ওই রুট দিয়ে চলাচলে কার্যত নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এরইমধ্যে ঝুঁকি নিয়ে চলতে থাকে দূরপাল্লার লরি, বাস, ছোট যান। সবকিছু মোটামুটি ঠিকই ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেল হতেই বিপদ নামে। বিকেল ২টা নাগাদ পূর্ব জয়ন্তিয়া হিলস জেলার লুমসুলুঙে খাঁড়া পাহাড় থেকে আচমকা হুড়মুড়িয়ে নেমে আসে জলের তোড়। মুষলধার থেমে তখন ঝিরঝির বৃষ্টি পড়ছিল। কোনও কিছু বুঝে ওঠার আগেই জলের তোড় ভাসিয়ে নিয়ে যায় জাতীয় সড়কের এক বড় অংশ। জলের সঙ্গে বিপরীত দিকে গলিয়ে পড়তে থাকে শিলং রোড। নিমিষেই পুকুর, পুকুর থেকে খাল হয়ে যায় জাতীয় সড়কের ওই অংশ। তবে আশার কথা, তখন ওই অংশে কোনও যানবাহন না থাকায় ঘটেনি কোনও অঘটন, হয়নি প্রাণহানি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেশ কিছু সময় এভাবে জাতীয় সড়ককে খালে পরিনত হতে দেখেন বহু চালক আর সাধারণ মানুষ। একসময় জল নেমে আসার শক্তি খানিকটা কম হলে কিছু ‘দু:সাহসী’ চালক গাড়ি নিয়ে এপার-ওপার হতে থাকেন। তবে বড় গাড়ি নিয়ে পারাপার হওয়ার সাহস কেউ করেননি। কিছু সময়ের মধ্যেই ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি অব ইন্ডিয়া-র লোকজন ঘটনাস্থলে পৌঁছেন। সঙ্গে পুলিশ, দূর্যোগ মোকাবিলা কর্মী ইত্যাদি। তাঁরা পৌঁছলে বন্ধ করে দেন সব ধরনের গাড়ি। কারণ উপর থেকে রাক্ষুসে রূপ নিয়ে জল নামা বন্ধ হয়নি। তাছাড়া সময় যত গড়াতে থাকে, জাতীয় সড়কের অবস্থা আরও বেহাল হতে থাকে। বিকেল ৫টা নাগাদ লুমসুলুং থেকে যে খবর মিলেছে, তা যথেষ্ট উদ্বেগের। সেখানকার এক বাসিন্দা জানান, জাতীয় সড়কের অবস্থা একেবারে সঙ্গীন হয়ে গেছে। যে সামান্য অংশ এখনও দেখা যাচ্ছে, তাও যেকোনও সময় বিলীন হয়ে যেতে পারে। তবে স্থানীয় প্রশাসন অবশ্য কসরত করে চলেছে। এক্সেভেটর লাগিয়ে পাথর সরাচ্ছে, নিকাশি ব্যবস্থারও তদ্বির করছে। কিন্তু পাহাড়ের চূড়া থেকে জল নামার গতি কমে না আসায় কোনও কাজে শক্তি পাচ্ছেন না সক্রিয় ব্যক্তিরা।
এদিকে, পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে মাঠে নেমেছে জেলা প্রশাসনও। বৃহস্পতিবার বিকেলে ইষ্ট জয়ন্তিয়া হিলস-এর জেলাশাসক তথা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এ বার্ণাওয়াল (আইএএস) এক নির্দেশে ৬নং জাতীয় সড়কের লুমসুলুং এলাকায় যানচলাচল সম্পুর্ন নিষিদ্ধ করেছেন। সড়কটি সম্পুর্নরূপে চলাচলের উপযোগী না হওয়া পর্যন্ত তা ব্যবহার করতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। একইসঙ্গে শীঘ্র বিহিত ব্যবস্থা নিতে ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটিকেও নির্দেশ দিয়েছেন। তাছাড়া খুব জরুরিকালিন যাত্রীদের বিকল্প পথ হিসেবে স্টার সিমেন্ট কোম্পানির ব্যক্তিগত সড়ক ব্যবহারেরও পরামর্শ দিয়েছেন ডিসি।