অনলাইন ডেস্ক : শিলচর পুরনিগমের নির্বাচনের জন্য আসন সংরক্ষণ করা হলো সোমবার। গত ৪ ডিসেম্বর সর্বদলীয় বৈঠকে লটারি প্রক্রিয়া স্থগিত রাখা হয়েছিল। তবে সোমবার দ্বিতীয় দফার বৈঠকে লটারি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চূড়ান্ত হয় সংরক্ষণ। যদিও এরমধ্যে বহু চর্চিত সেই ৩২নম্বর ওয়ার্ডকে অনুসূচিত জাতির জন্য সংরক্ষণের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। লটারির মাধ্যমে ওই ওয়ার্ড সংরক্ষিত হয়েছে মহিলাদের জন্য। এদিকে ৩২ নম্বর ওয়ার্ড অনুসূচিত সংরক্ষণমুক্ত হওয়ার সূত্র ধরে সংরক্ষণ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী দল কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেস। দুই দলেরই বক্তব্য, জনসংখ্যার যে পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করে অনুসূচিত আসন সংরক্ষণ করা হয়েছে তা সঠিক নাও হতে পারে। কারণ ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে যে ভুল ছিল, তা মেনে নিয়েই তো সংশোধন করেছে প্রশাসন। তাই অন্য ওয়ার্ডেও যে ধরনের ভুল থাকবে না এর নিশ্চয়তা কোথায়।
এদিন জেলা কমিশনারের কার্যালয়ে সর্বদলীয় বৈঠকে সংরক্ষণের যে তালিকা তৈরি করা হয়েছে সে অনুযায়ী মোট ৪২ টি ওয়ার্ডের মধ্যে অনুসূচিত জাতির জন্য সংরক্ষিত হয়েছে-৩,৪,৫, ১০,১২,১৮ ও ১৯ নম্বর এই ৭টি ওয়ার্ড। এই ৭ টি ওয়ার্ডের মধ্যে আবার ৩ ,৪ এবং ১০ নম্বর ওয়ার্ড সংরক্ষিত থাকবে অনসূচিত মহিলাদের জন্য। বাকি ৫,১২,১৮ এবং ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে লড়তে পারেন অনূসূচিত সম্প্রদায়ের নির্ধারিত যোগ্যতাসম্পন্ন যে কেউ ঠিক। এর পাশাপাশি অনুসূচিত মহিলাদের ৩ টি সহ মহিলা “কোটা”র ৫০ শতাংশ আসন সংরক্ষণের জন্য মোট ৪২ টি ওয়ার্ড-এর মধ্যে সাধারণ মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হয়েছে ১৮ টি ওয়ার্ড। এসব ওয়ার্ড হল-৭,১৪,১৫,২০,২১,২২,২৩,২৪,২৫,২৮,২৯,৩০,৩২,৩৩,৩৪,৩৫,৩৬ ও ৪১ নম্বর । সাধারণ বা “ওপেন” ক্যাটাগরিতে রয়েছে-১,২,৬,৮,৯,১১,১৩,১৬,১৭,২৬,২৭,৩১,৩৭,৩৮,৩৯,৪০ ও ৪২ নম্বর ওয়ার্ড।
এদিন জেলা কমিশনারের কার্যালয়ে বৈঠক শুরু হয় বেলা ১১ টা নাগাদ। সংরক্ষণ করা হয়েছে ২০১১ সালের জনগণনার রিপোর্টের ভিত্তিতে। ক্রমান্বয়ে যেসব ওয়ার্ডে অনুসূচিত জাতির লোকের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি, প্রথম পর্যায়ের বৈঠকে বেছে বের করা হয়েছিল এমন ৭ ওয়ার্ড। প্রাথমিকভাবে যে ৭টি ওয়ার্ডকে এক্ষেত্রে চিহ্নিত করে রাখা হয়েছিল, এর মধ্যে চেংকুড়ি রোড, কাঁঠাল রোড ও ভজন্তিপুরের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত ৩২ নম্বর ওয়ার্ডকে ঘিরে আগেই প্রশ্ন উঠেছিল। তালিকায় দেখানো হয়েছিল ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে অনুসূচিত জাতির লোকেদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ৪৯’৬৭ শতাংশ। সেই হিসেবে ওই ওয়ার্ড সবার আগে সংরক্ষণের তালিকাভুক্ত হওয়ার কথা ছিল। যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠে ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে এত অনুসূচিত লোক নেই। এই অভিযোগের সূত্র ধরে এদিন বৈঠকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হয়েছে। এতে দেখা গেছে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বেশকিছু অনুসূচিত লোকের নাম সংযোজিত হয়ে গেছে ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে। সংশোধনের পর যে হিসেবে বের করা হয়েছে সে অনুযায়ী, ৩২ নম্বর ওয়ার্ড চলে গেছে অনুসূচিত সংরক্ষণের জন্য নির্ধারিত ৭ টি ওয়ার্ডের তালিকার বাইরে। সেই স্থলে আগের তালিকার হিসেবে ক্রমপর্যায়ে অষ্টম স্থানে থাকা ১২ নম্বর ওয়ার্ড চলে এসেছে সপ্তম স্থানে। এবার আলাপ-আলোচনা করে ৩২ নম্বরকে বাদ দিয়ে ১২ নম্বরকে অন্তর্ভুক্ত করে চূড়ান্ত করা হয় অনুসূচিত জাতির জন্য সংরক্ষিত ৭টি ওয়ার্ড। এরপর এই ৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে কোন ৩ টি ওয়ার্ড অনুসূচিত মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হবে লটারির মাধ্যমে চূড়ান্ত হয় তা। এরপরের পর্বে সাধারণ মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত ১৮ টি ওয়ার্ড চূড়ান্ত করতে দ্বিতীয় দফায় করা হয় লটারি। লটারি প্রক্রিয়া শেষে জেলা কমিশনার মৃদুল যাদব জানান, লটারির মাধ্যমে সংরক্ষণের যে তালিকা তৈরি করা হয়েছে তা অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে গুয়াহাটিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে।
এদিন বৈঠকে ৩২ নম্বর ওয়ার্ড ছাড়াও অভিযোগ উঠে ১২ নম্বর ওয়ার্ড নিয়েও। কেউ কেউ অভিযোগ করেন ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ৫৬,৫৭ ও ৫৮ নম্বর এই তিনটি বুথ ভুলক্রমে ঢুকে পড়েছে ১২ নম্বর ওয়ার্ডে। যার দরুন ১২ নম্বর ওয়ার্ডের অনুসূচিত ভোটার বেড়ে গিয়ে তা চলে গেছে সংরক্ষণের আওতায়। এই অভিযোগ ওঠার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়, আপত্তি থাকলে তা আগেই জানানো উচিত ছিল। এবার তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে, যদি কিছু করার থাকে তবে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষই তা করবেন।
বৈঠকে প্রশাসনের তরফে জেলা কমিশনার মৃদুল যাদব ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জেলা উন্নয়ন কমিশনার নরসিং বে, শিলচর পুরসভার নির্বাহী আধিকারিক ভানলাল লিমপুইয়া নামপুই । ছিলেন চার বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী, মিহির কান্তি সোম, মিসবাহুল ইসলাম লস্কর এবং করিম উদ্দিন বড় ভূঁইয়া। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন বিজেপির জেলা সভাপতি বিমলেন্দু রায়, জেলা কংগ্রেস সভাপতি অভিজিৎ পাল, সিপিএমের দুলাল মিত্র, তৃণমূল কংগ্রেসের সজল কান্তি বণিক, এ আই ইউ ডি এফ এর জেলা সভাপতি সামিনূল হক বড় ভূঁইয়া,অগপর সুজিত কুমার দেব ও আপের অভিজিৎ বিশ্বাস সহ অন্যান্যরা।
এদিকে বৈঠকের পর বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী বলেন, লটারি হয়েছে সর্বসম্মতিক্রমে, আশা করা যায় স্বচ্ছ নির্বাচন হবে। জেলা কংগ্রেস সভাপতি অভিজিৎ পাল এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সজল কান্তি বণিকরাও পৃথক পৃথক ভাবে বলেন লটারি নিয়ে তাদের কোনও অভিযোগ নেই। তবে অনুসূচিত জাতির
সংরক্ষণ নিয়ে কিছু প্রশ্ন রয়েছে। দুজনেরই এক কথা, ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে যে হিসেবে গরমিল হয়েছিল তা তো মেনে নিয়েছে প্রশাসনই। এবার আবার অভিযোগ উঠছে ১২ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে। ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের গরমিল যখন প্রমাণিত হয়েছে, তখন অনুসূচিত লোক সংখ্যা নির্ধারণের ক্ষেত্রে আরও ভুল ভ্রান্তি থেকে থাকতে পারে। জেলা কমিশনারকে তারা দাবি জানিয়েছেন আর কোন ভুল ভ্রান্তি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে। সঙ্গে দুজনে আরও বলেন, ভোটার তালিকা হাতে পাওয়ার পর খতিয়ে দেখবেন তারাও। তখন ভুল ধরা পড়লে এই সংরক্ষণ বাতিল করে নতুন ভাবে লটারির আয়োজন করতে হবে।
জেলা কমিশনার মৃদুল যাদবকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ৪ নভেম্বর প্রথম দফার বৈঠকে বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিরা তো ওই দিনই লটারি করার দাবি জানিয়েছিলেন। তবে প্রশাসন সেদিন তা স্থগিত রেখে সবাইকে অভিযোগ জানানোর সুযোগ করে দিয়েছিল। ৩২ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে অভিযোগ এসেছিল, তা খতিয়ে দেখে ঠিক করা হয়েছে। অন্য কোনও ওয়ার্ড নিয়ে অভিযোগ থেকে থাকলে সুনির্দিষ্টভাবে তা আগে জানানো উচিত ছিল। কিন্তু তাতো কেউ করেননি। এবার যা করার করবেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।