অনলাইন ডেস্ক : সোমবার দুধপাতিল লারসিংপার এলাকায় রেলের ইঞ্জিনের নিচে কাটা পড়ে অনুপমা সিং ওরফে অনুপমা শর্মা (৩৩) নামে মহিলার মৃত্যুকে ঘিরে ক্রমেই দানা বেঁধে উঠছে রহস্য। অনুপমা ছিলেন উধারবন্দ শিক্ষা খন্ডের ১৫৩০ নম্বর মাঝারগ্রাম এলপি স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা। অনুপমার শ্বশুর বাড়ি আরকাটিপুর এলাকার লঙ্খাইবস্তিতে। বাবার বাড়ি লারসিংপারে যেখানে ঘটনা ঘটেছে, এর অদূরে। শ্বশুর বাড়ি আরকাটিপুর লঙ্খাই বস্তিতে হলেও স্বামী সুভাষ শর্মার সঙ্গে অনুপমা থাকতেন শিলচর রংপুর নরসিংহ আখড়া সংলগ্ন গলির ভাড়া বাড়িতে। সুভাষ পেশায় হোটেল ব্যবসায়ী, নরসিংহ আখড়া সংলগ্ন গলির কাছেই রয়েছে তার হোটেল। সুভাষ এবং অনুপমার এক কিশোর পুত্র রয়েছে।
অনুপমা রংপুরের ওই ভাড়াবাড়ি থেকেই প্রতিদিন যাওয়া আসা করতেন স্কুলে। স্কুলের সহকারী শিক্ষক উধারবন্দ এলাকার বাসিন্দা আজাদ হোসেন লস্কর জানিয়েছেন, সোমবার যথারীতি স্কুল করেছেন অনুপমা। স্কুলে তার মধ্যে কোনও অস্বাভাবিকত্ব লক্ষ্য করা যায়নি। স্কুল ছুটির পর দুপুর দু’টা নাগাদ তারা সবাই একসঙ্গে বের হন।
স্কুলে অন্য একজন সহকারী শিক্ষক রয়েছেন শিলচর রাঙ্গিরখাড়ি এলাকার পাপলু তালুকদার। অনুপমা মাঝেমাঝেই পাপলুর বাইকে চড়ে স্কুলে যাওয়া আসা করতেন। সোমবার ছুটির পরও তিনি পাপলুর বাইকে চড়েই রওয়ানা হন। এরপর রাত ৭টা নাগাদ ঘটে যায় অনাকাঙ্ক্ষিত এই ঘটনা।
এদিন পাপলু তালুকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে আজাদ জানান, সোমবার স্কুল ছুটির পর বিকেলে হঠাৎ অনুপমার স্বামী সুভাষ শর্মা তাকে ফোন করেন। জানান অনুপমা নাকি বিকেল পর্যন্ত বাড়ি ফেরেননি। আজাদ জানান সুভাষ শর্মা তাকে একথা জানালে তিনি ফোনে যোগাযোগ করেন পাপলু তালুকদারের সঙ্গে। তখন পাপলু তাকে জানান তিনি বাড়ি ফেরার পথে অনুপমাকে রংপুরে নামিয়ে দিয়ে এসেছেন। পাপলু অবশ্য সঙ্গে একথাও জানান, অন্যান্য দিন অনুপমা নামতেন নরসিং আখড়ার লাগোয়া তার ভাড়াবাড়ির গলির মুখেই। তবে সোমবার গলির মুখে পৌঁছার কিছুটা আগে নেমে যান। এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, কেন অনুপমা হঠাৎ এভাবে গলির মুখে পৌঁছার আগেই নেমে গিয়েছিলেন পাপলু তালুকদারের বাইক থেকে।
এর পাশাপাশি প্রশ্ন জেগে উঠছে মাঝারগ্রাম থেকে শিলচর রংপুরে পৌঁছার পর অনুপমা ফের কেন গিয়েছিলেন দুধপাতিল লার্সিংপারে। লার্সিংপারে
অনুপমার বাবার বাড়ি। তবে নিজের ভাড়া বাড়িতে পৌঁছার জন্য রংপুরে ফেরার পর সেখানে না ঢুকে তিনি সরাসরি বাবার বাড়িতে চলে যাবেন, এমনটা ভাবাও বেশ কষ্টকর। সব মিলিয়ে ঘটনার পেছনে কোনও রহস্য লুকিয়ে থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে সোমবার ঘটনার কথা শোনার পরই অনুপমার স্বামী সুভাষ অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে খবর। এখনও তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এরই মধ্যে মঙ্গলবার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে অনুপমার মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। ময়নাতদন্তের পর মৃতদেহ সমঝে দেওয়া হয় পরিবারের লোকেদের হাতে। জানা গেছে মৃতদেহ সুভাষের পৈত্রিক বাড়ি আরকাটিপুর লঙ্খাই বস্তি এলাকায় নিয়ে এদিনই সারা হয় অন্তিম সংস্কার।ঘটনাকে ঘিরে বর্তমানে সুভাষ ও অনুপমার পরিচিত মহলে শুরু হয়েছে নানা ফিসফিসানি। সুভাষ এক লটারি ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছিলেন বলে চর্চা শোনা যাচ্ছে তাদের পরিচিত অনেকেরই মুখে। এ নিয়ে দাবি উঠেছে তদন্তের।
জিআরপির এক সূত্র জানিয়েছেন, রেলের ইঞ্জিনে কাটা পড়ে অনুপমার মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে তদন্তে তারা সব সম্ভাবনার কথাই মাথায় রাখছেন। এটা দুর্ঘটনা না আত্মহত্যা, না এর পেছনে অন্য কোনও অধ্যায় লুকিয়ে রয়েছে, খতিয়ে দেখা হচ্ছে সবকিছুই।