অনলাইন ডেস্ক : অবশেষে পুলিশ গ্রেফতার করলো শিলচর উত্তর কৃষ্ণপুর প্রথম খন্ডের বাসিন্দা রহিম উদ্দিন লস্কর (৪৫) নামে ভুয়ো চিকিৎসককে। ডা: আর ইউ লস্কর হিসেবে বিশেষ পরিচিত এই ভুয়ো চিকিৎসককে গ্রেফতারের পর আদালতের অনুমতিতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দুদিনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে পুলিশ হেফাজতে।
রহিম উদ্দিনকে পুলিশ আটক করেছিল মঙ্গলবার। প্রাথমিক জিজ্ঞাসা বাদের পর বুধবার তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর এদিনই তাকে পেশ করা হয় আদালতে। এরপর আদালতের অনুমতিতে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় পুলিশ হেফাজতে। জানা গেছে পুলিশ ইতোমধ্যে ডা: আর ইউ লস্কর নামে তার ব্যবহৃত প্রেসক্রিপশন এবং বিভিন্ন সার্টিফিকেট বাজেয়াপ্ত করেছে। এদিকে রহিম উদ্দিন গ্রেফতার হওয়ার পর শহরের একাংশ চিকিৎসকদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে আতঙ্কের। এক বিশেষ সূত্রের খবর অনুযায়ী, শহরের বেশ কয়েকজন নামজাদা চিকিৎসকের সঙ্গে রহিম উদ্দিনের সম্পর্ক বেশ ঘনিষ্ঠ। রোগীরা রহিম উদ্দিনের কাছে যাওয়ার পর কিছুদিন চিকিৎসা চালিয়ে যদি তার পক্ষে রোগ কমানো সম্ভব না হতো তবে তিনি “রেফার” করে দিতেন নির্দিষ্ট ওই কয়েকজন নামজাদা চিকিৎসকের কাছে। আর এই
“রেফার” বাণিজ্যের নামে তার কাছে পৌঁছে যেত কমিশনও। অবশ্য শুধু কমিশনের মধ্যেই যে দু পক্ষের সম্পর্ক সীমিত ছিল এমন নয়। রহিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে রোগীদের চিকিৎসা করা নিয়ে কেউ অভিযোগ করলে সেসব চাপা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতেন ওই নামজাদা চিকিৎসকরা। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছিল দু পক্ষের কারবার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক জানান, রহিম উদ্দিনের অবৈধ কাজকারবার নিয়ে বার কয়েক উপরমহলে নালিশ জানানো হয়েছিল। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে তার পৃষ্ঠপোষক কয়েকজন নামজাদা চিকিৎসক নিজেদের ব্যবসা চাঙ্গা রাখতে প্রভাব খাটিয়ে সবকিছু চাপা দিয়ে দেন।
রহিম উদ্দিন ধরা পড়ার পর এদিন গোটা জেলায় এমন যে সব ভুয়ো চিকিৎসক চেম্বার খুলে চিকিৎসা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন, এদিন তাদের বেশিরভাগেরই চেম্বার দেখা গেছে বন্ধ। গ্রেফতারের ভয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন এরা।
এদিকে গ্রাম গঞ্জের পাশাপাশি জেলা সদর শিলচরেও কয়েকটি নামজাদা বেসরকারি হাসপাতালে রহিম উদ্দিনের মতো “মুন্না ভাই এমবিবিএস”-দের কাজ করার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের যুগ্ম সঞ্চালক ডা:
আশুতোষ বর্মনকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, ইতমধ্যে বিভাগীয় স্তরে তদন্ত শুরু হয়েছে। শহরের কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে বিভাগীয় তদন্তকারী দল গিয়ে খোঁজখবর করেছে। তিনি বলেন, সন্দেহভাজন ভুয়ো চিকিৎসকদের নথিপত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি কেউ ভূয়ো হয়ে থাকেন তবে তাদের কাউকেই ছাড়া হবে না। এছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে সার্টিফিকেট নিয়ে সেসবের দৌলতে ভুয়া চিকিৎসকরা চিকিৎসা চালিয়ে থাকেন সেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও তদন্ত চলছে বলে জানা গেছে। তদন্ত শুরু হয়েছে মাত্র। গোটা কারবার সম্পর্কে যা আঁচ পাওয়া যাচ্ছে, এতে যথাযথভাবে তদন্ত হলে জালে ফেঁসে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেকেরই।