আব্দুস সুবহান লস্কর
কাটিগড়া, ২১ আগস্ট : রাত দুপুরে রক্তে লাল হল কাটিগড়া। ফের দ্রুতগামী টিপারের ধাক্কায় নিভে গেল তিন তিনটি জীবনদীপ। মৃত্যু সজ্জায় আরও ৫ জন। ঘটনা শনিবার মাঝ রাতে। ভাংগারপারে জল জীবন মিশনের কাজ সেরে পিয়াগো অটো করে বাড়ি ফেরার পথে শনিবার রাত দেড়টা নাগাদ কাতিরাইল টিকরপাড়ায় ঘটে মর্মান্তিক এই সড়ক দুর্ঘটনা। বিপরিত দিক থেকে আসা দ্রুতগামী এক টিপার পিষ্ট করে দেয় শ্রমিক বোঝাই অটোটিকে। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনজন যথাক্রমে রাজন দাস (২৪) বাড়ি কাটিগড়া ৩য় খন্ড, ইয়াসিন আহমেদ (৪৮) বাড়ি কাটিগড়া ৩য় খন্ড, বিলাল উদ্দিন লস্কর (৪০) বাড়ি তেলিটিকর। মারাত্বক জখম হয়ে শিলচর মেডিক্যাল কলেজে মৃত্যু সজ্জায় বাপ্পি মালাকার, বিরাজ দাস, কুবাদ উদ্দিন, তাজ উদ্দিন, সেলিম উদ্দিন। রাতের সুযোগে ঘাতক ডাম্পার চালক পালিয়ে যায়।
ঘটনার পরই উত্তেজিত জনতা জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন। তবে নিয়োগ কমিশনের লিখিত পরীক্ষায় ছাত্রছাত্রীর দুর্ভোগের কথা মাথায় রেখে কাটিগড়ার থানার ওসি নবকুমার সইকিয়ার অনুরোধে প্রায় দুঘন্ঠা পর জাতীয় সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করেন উত্তেজিত জনতা। এদিকে কাটিগড়া পুলিশ মরদেহ নিয়ে থানায় পৌছাতেই দেখা যায় আরও এক হৃদয় বিদারক ঘটনা। নিজের আপন জনের এমন করুণ মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন নিকটাত্বীয়রা। রাজন দাসের তিন শিশু সন্তান নিয়ে তার সহধর্মিনী থানায় রাখা স্বামীর মরদেহ জড়িয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। রাজনের পরিবারে সেই একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম। দিন মজুরের কাজ করে তিন সন্তান ও স্ত্রীর মুখে দু মুঠো ভাত তুলে দিত রাজন। শনিবারও কাজে যায় রাজন। কিন্তু ভাগ্যের নিষ্টুর পরিহাস, রাত দুপুরে রাজপথ থেকে তুলে আনতে হল তার রক্তমাখা মরদেহ। সিঁথির সিঁদুর হারালো তার সহধর্মিনী। পিতৃহারা হল সন্তানরা। আর কতো মায়ের সিঁথির সিঁদুর হারালে, আর কত মায়ের বক্ষ উজার হলে, আর কত সন্তান পিতা মাতা হারা হলে হুস ফিরবে আসাম সরকারের পরিবহন বিভাগের? তা আজ লক্ষ টাকার প্রশ্ন।
গোটা কাটিগড়ায় কয়েক হাজার অটো, পিয়াগো অটো সহ যাত্রীবাহী গাড়ি রয়েছে যাদের বৈধ কাগজপত্র তো নেই ই, নেই চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স পর্যন্ত। এসব পরীক্ষার দায়িত্ব যাদের উপ সেই পরিবহন আধিকারিকদের কাটিগড়ার দিগরখালে কোম্বাইন চেক গেট ছাড়া তো এদের দেখাই মেলে না। অবশ্য বড়সড় দুর্ঘটনার পর তারা বিলাশ বহুল গাড়িতে চেপে কাটিগড়ায় আসেন এবং সে সময় তাদের বেশ হম্বিতম্বি নজরে আসে। দিন কয়েকের মধ্যেই সব শেষ। মূল স্রোতে ফেরে কাটিগড়া। নিয়মের চেয়ে অনেক বেশী যাত্রী বোঝাই করে চলে অটো সহ অন্যান্য ছোট গাড়ি। নিয়মের চেয়ে অনেক বেশী পাথর, লাইম স্টোন ইত্যাদি বোঝাই টিপার দুর্বার গতিতে জাতীয় সড়ক দাপিয়ে বেড়ায়। কিন্তু এসব দেখভালের দায়িত্বে থাকা পরিবহন বিভাগ তো শীত ঘুমে!