অনলাইন ডেস্ক : অসম বিধানসভায় ধ্বনিভোটে পাস হয়ে গেল ‘আসাম হিলিং (প্রিভেনশন অব ইভিল) প্র্যাকটিস বিল ২০২৪’। এই বিল আইনে পরিণত হলে অসমে বন্ধ হবে প্রথাগত রোগ নিরাময় পদ্ধতি তথা জাদুকরি বিদ্যায় রোগব্যাধির চিকিৎসা, কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসজনিত কার্যকলাপ। এছাড়া সরকারি চাকরির নিয়োগে অসাধু উপায় ব্যবহারের বিরুদ্ধে সহ মোট ১৪টি বিল বিধানসভায় পাস হয়েছে। তবে পূর্ব-ঘোষণা সত্ত্বেও বহুবিবাহ নিষিদ্ধ এবং ‘আসাম মুসলিম ম্যারেজ অ্যান্ড ডিভোর্স রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট ১৯৩৫’ বাতিল সংক্রান্ত কোনও বিল সরকার পেশ করেনি।
সোমবার অসম বিধানসভার বাজেট অধিবেশনের শেষ দিন ধ্বনিভোটে পাস হয়ে গেছে ‘আসাম হিলিং (প্রিভেনশন অব ইভিল) প্র্যাকটিস বিল ২০২৪’, বাংলায় তৰ্জমা করলে আসাম নিরাময় (অশুভ প্রতিরোধ) অনুশীলন বিল, ২০২৪। এই আইনের লক্ষ্য, প্রথাগত নিরাময়ের অভ্যাস প্রতিরোধ করা। এই বিলের উদ্দেশ্য, সামাজিক জাগরণে উৎসাহ প্রদান এবং জাদুকরি বিদ্যায় রোগব্যাধির চিকিৎসা, কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখতে বিজ্ঞানসম্মত পরিবেশের প্ৰচার করা। পাশাপাশি নিরীহ মানুষজনকে শোষণের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত অবৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পদ্ধতি রোধ করা। পাসকৃত বিলের ধারা ৩ অনুসারে কিছু কিছু রোগ ও স্বাস্থ্য বিকারের চিকিৎসার জন্য অশুভ বা জাদুকরি বিদ্যা প্ৰয়োগে আরোগ্য পদ্ধতি নিষিদ্ধ করতে সরকারের অধিকার থাকবে।
এছাড়া ধারা ৪ অনুসারে সরকারকে এ ধরনের প্ৰথার জন্য বিভ্ৰান্তিকর বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা প্ৰদান করা হয়েছে। প্ৰস্তাবিত নতুন বিলে অমানবিক, কালাজাদু বা জাদুকরি বিদ্যা প্রয়োগে আরোগ্য প্ৰণালী নিয়ন্ত্ৰণ করার লক্ষ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূৰ্ণ ধারা অন্তৰ্ভুক্ত করা হয়েছে। বিলে অন্তৰ্ভুক্ত বিধান অনুযায়ী সংঘটিত অপরাধগুলি উপলব্ধিযোগ্য হলেও তা হবে জামিন-অযোগ্য। ধারা ৫-এ সরকারকে এ ধরনের প্ৰথার যে কোনও কাৰ্য বা প্ৰচারের জন্য শাস্তি প্ৰদানের ক্ষমতাও প্ৰদান করা হয়েছে। ধারা ৬-এ এক থেকে তিন বছর পর্যন্ত কারাবাসের বিধান রাখা হয়েছে। সঙ্গে ৫০ হাজার থেকে এক লক্ষ টাকা জরিমানা হতে পারে কিংবা উভয় দণ্ডই দেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়েছে। ধারা ৯-এ সরকারকে পুলিশ আধিকারিকদের সতৰ্কতা আধিকারিক হিসেবে নিয়োগ করার ক্ষমতা প্ৰদান করা হয়েছে। বিলের ধারা ১৬ অনসারে সরকারকে বিলের ব্যবস্থাবলি সম্পাদন করতে নিয়ম তৈরি করার ক্ষমতা থাকবে।
এদিকে এই বিলের ওপর সৃষ্ট বিতর্কে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা স্পষ্ট করেছেন, বিলে ঐতিহ্যবাহী নিরাময় অনুশীলনগুলিকে নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়নি। কেবল আর্থিক লাভের জন্য দুরারোগ্য রোগ নিরাময়ের দাবি করে মানুষকে শোষণ করা বন্ধ করার লক্ষ্যে এই বিল আনা হয়েছে। সরকারের আশা, এই বিল আইনে পরিণত হলে রাজ্য থেকে অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার, জাদুকরি বিদ্যা প্ৰয়োগে আরোগ্য পদ্ধতি দূর করতে কাৰ্যকর হবে। অন্য এক বিতৰ্কের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ইউনিফর্ম সিভিল কোডের সঙ্গে এই বিলের কোনও সম্পর্ক নেই।
উল্লেখ্য, ‘আসাম হিলিং (প্রিভেনশন অব ইভিল) প্র্যাকটিস বিল ২০২৪’ বিল আইনে পরিণত হলে অপরাধ বলে গণ্য হবে ঝারফুঁক, কালা জাদু ইত্যাদির। এছাড়া ভুয়ো প্ৰচার করে কেউ বিক্ৰি করতে পারবে না জরিবটি জাতীয় ওষুধ, প্ৰকাশ করতে পারবে না এ ধরনের কোনও বিজ্ঞাপনও।
এককথায় এই বিলের মাধ্যমে কালাজাদুর বলে চিকিৎসা করে রোগ নিরাময়ের নামে বেআইনি কাজের সঙ্গে জড়িত দোষী সাব্যস্ত যে কোনও ব্যক্তি কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এছাড়া প্রস্তাবিত বিলে বধিরতা, মূক, অন্ধত্ব, শারীরিক বিকলাঙ্গ, অটিজম ইত্যাদির মতো কিছু জন্মগত রোগের চিকিৎসার নামে জাদুকরি নিরাময়ের অভ্যাসগুলিকে নিষিদ্ধ ও নির্মূল করার চেষ্টা করা হয়েছে। এ ধরনের নিরাময় ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি চিকিৎসার নামে দরিদ্র ও হতদরিদ্র মানুষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে ঠগ ‘নিরাময়কারীদের’ বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা প্রদান করবে এই আইন।