অনলাইন ডেস্ক : ডলু চা বাগানে গ্রীনফিল্ড এয়ারপোর্ট গড়ে তুলার ইস্যুকে ঘিরে শিলচরের সাংসদ রাজদীপ রায়ের বিরুদ্ধে মানহানি মামলার হুমকি দিলেন সুস্মিতা দেব।
কলকাতার কয়েকজন বাসিন্দার মামলার সূত্র ধরে সুপ্রিম কোর্ট ডলুতে এয়ারপোর্ট গড়ে তোলার প্রক্রিয়ায় স্থগিতাদেশ জারি করেছে। রাজদীপ সম্প্রতি অভিযোগ করেন যে, এয়ারপোর্ট গড়ে উঠাটা আটকে দিতে অন্তরালে থেকে সুস্মিতা দেব এই মামলা করিয়েছেন। রাজদীপের এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে অভিহিত করে বৃহস্পতিবার শিলচর তারাপুরে নিজের বাড়িতে এক সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভা সাংসদ সুস্মিতা দেব বলেন, রাজদীপ তিন দিনের মধ্যে তার অভিযোগ প্রমাণ করুন। অন্যথায় তিনি রাজদীপের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করবেন।
তিনি বিমানবন্দর গড়ে উঠা আটকাতে চাইছেন, এই অভিযোগ খন্ডন করে সুস্মিতা বলেন, রাজদীপ যখন সাংসদ ছিলেন না তখন ২০১৭ সালে তিনি (সুস্মিতা) চিঠি লিখে রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল এবং কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহনমন্ত্রী গজপতি রাজুকে বিমানবন্দর সম্প্রসারণ এর দাবী জানিয়েছিলেন। এবং এক্ষেত্রে যে অতিরিক্ত জমির প্রয়োজন সে কথাও চিঠিতে উল্লেখ করেছিলেন তিনি । সুস্মিতা বলেন, তিনি উন্নয়নের বিরোধী বলে রাজদীপ যে মন্তব্য করেছেন, তা যে কতখানি মিথ্যা ২০১৭ সালের এই চিঠিই এর প্রমাণ।
সুস্মিতা বলেন ২০১৩র জমি অধিগ্রহণ আইন অনুযায়ী কোনও জমি সরকার অধিগ্রহণ করার আগে এনভায়রনমেন্টাল ইমপেক্ট অ্যসাসমেন্ট বাপরিবেশের প্রভাব যাচাই করাটা বাধ্যতামূলক। রাজদীপ একজন উচ্চশিক্ষিত ব্যাক্তি, তার একথাটা
অবশ্যই জানা থাকা উচিৎ। এনভায়রনমেন্টাল ইমপেক্ট অ্যসাসমেন্ট হয়েছিল কিনা কিনা,একথা জানতে তিনি অসম সরকারকে ৪-৫টি চিঠি দিয়েছিলেন, কিন্তু কোনও জবাব পাননি। এবার কলকাতার তাপস গুহ এবং অন্য কয়েকজনের মামলার সূত্রে সুপ্রিম কোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছে, তা থেকেই তিনি বুঝতে পারছেন কেন তখন তার চিঠির জবাব দেওয়া হয়নি। কারণ অসম সরকার সুপ্রিম কোর্টের কাছে লিখিত জবাবে মেনে নিয়েছে ডলুতে জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট করা হয়নি।
এভাবে উল্লেখ করে তিনি রাজদীপের উদ্দেশ্যে বলেন, সরকার উন্নয়নের জন্য অবশ্যই জমি অধিগ্রহণ করতে পারে। কিন্তু এভাবে নিয়ম-নীতি না মেনে করা হলে তা ভূ-মাফিয়াদের মতোই কাজ হয়ে যায়। আর শাসক দলের সাংসদ এবং কাছাড়বাসীর অভিভাবক হিসেবে রাজদীপও এর দায়ভার এড়াতে পারেন না।
সুস্মিতা আরও বলেন, ডলু বাগানে ইস্যূতে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছেন কলকাতার জনৈক তাপস গুহ এবং আরও কয়েকজন। তিনি যদি এর পেছনে থাকতেন তবে অন্য কাউকে দিয়ে নয়, মামলা করতেন নিজেই। এইসব সৎসাহস তার আছে, তিনি বিজেপিকে ভয় পান না। ভয় পান না বলেই বায়োমেট্রিক নিয়ে এবং ডিলিমিটেশন নিয়ে নিজের নামেই মামলা করেছেন। এরপর উষ্মা ব্যক্ত করে আরও বলেন, ডলু মামলার সূত্রে রাজ্য সরকারের আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছেন বাগানে নাকি কোনও গাছ কাটা হয়নি। কিন্তু বাস্তবে কত লক্ষ গাছ কাটা হয়েছে, গোটা শিলচর, গোটা বরাক এবং গোটা অসমবাসী এর সাক্ষী রয়েছেন।
তিনি রাজদীপকে কটাক্ষ করে বলেন, উনি এতো সুন্দরভাবে তার ব্যক্তিগত হাসপাতাল চালাচ্ছেন। এই হাসপাতালকে সফল করার জন্য এতো জোর দিচ্ছেন, এমনকি নিজের সাংসদ রিপোর্ট কার্ডেও উল্লেখ করেছেন তার ব্যক্তিগত খন্ডের জীবন জ্যোতি হাসপাতালের কথা। অথচ তিনি অথচ এয়ারপোর্ট সফলভাবে গড়ে তুলতে সম্পূর্ণ বিফল।
পাঁচগ্রামের কাছাড় কাগজ কল বন্ধ হওয়ার জন্য তার (সুস্মিতা দেব) বাবা প্রয়াত সন্তোষ মোহন দেবকে জড়িয়ে রাজদীপ অভিযোগ করেছেন বলে উল্লেখ করে সুস্মিতা বলেন, এমন অভিযোগ করার আগে রাজদীপের লজ্জা হওয়া উচিত। কারণ কাছাড় কাগজ কলকে রাজদীপের দলের শীর্ষ নেতা প্রধানমন্ত্রী অতি কমমূল্যে বিক্রি করে দিয়েছেন। আর সন্তোষ মোহন দেব যখন কেন্দ্রীয় ভারি শিল্পমন্ত্রী ছিলেন, তখন কাছাড় কাগজ কল লাভেই চলছিল।