অনলাইন ডেস্ক : গান্ধী মেলায় বিভিন্ন বিনোদন সামগ্রী বসানোর বরাত নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে আগেই। এই অভিযোগের সূত্র ধরে বুধবার শিলচর জেলা কংগ্রেসের এক প্রতিনিধি দল পুরসভায় গিয়ে অ্যাসিস্টটিং অফিসার নবোত্তম শর্মার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিনোদন সামগ্রী বসানোর জন্য যে “ওয়ার্ক অর্ডার” ইস্যু করা হয়েছে তা দেখানোর দাবি জানান। যদিও অ্যাসিস্টিং অফিসার তা দেখাতে পারেননি। এর বদলে দেখানো হয় “অফার লেটার”। কংগ্রেস প্রতিনিধিরা এতে মোটেই সন্তুষ্ট হতে পারেননি। ব্যাপারটা নিয়ে যে দুর্নীতি চলছে, এসব তার প্রমাণ বলে উল্লেখ করে তারা আগামীকাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে “ওয়ার্ক অর্ডার” দেখানোর দাবি জানিয়ে তা নোটিশ বোর্ড এবং ওয়েবসাইটে তুলে ধরারও দাবি জানান।
গান্ধীমেলাকে ঘিরে পুরসভায় গড়ে উঠেছে এক সিন্ডিকেট। বিনোদন সামগ্রী বসানোর নামে সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও ওই সিন্ডিকেটের ষোগসাজসে দীর্ঘ বছর ধরে ব্যাপক হারে দুর্নীতি চলছে বলে অভিযোগ। অভিযোগ অনুযায়ী, কারসাজি করে কাগজেপত্রে বিনোদন সামগ্রী বসানোর জন্য ব্যবহৃত মেলাস্থলের জায়গা ব্যবহারের বিনিময়ে প্রদেয় ভাড়া কম দেখিয়ে সিন্ডিকেটের লোকেরা বিরাট অংকের অর্থ আত্মসাৎ করছে। শুধু তাই নয়, যে পরিমাণ জায়গা ব্যবহার করা হচ্ছে কাগজে পত্রে তাও কম দেখানো হচ্ছে। এতে যে পরিমাণ অর্থ পুরসভার তহবিলে জমা পড়ার কথা, তার তুলনায় জমা পড়ছে অনেক কম। বাকিটা ভাগ-বাটোয়ারা করে চলে যাচ্ছে সংশ্লিষ্টদের পকেটে।
এসব অভিযোগের সূত্র ধরে বুধবার বিকেলের দিকে নির্বাহী আধিকারিকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে জেলা কংগ্রেস সভাপতি অভিজিৎ পাল সহ দলের অন্যান্য কর্মকর্তা সজল বনিক, আব্দুল হাই লস্কর,রঞ্জন রায়, অনুপম পাল, কুশল দত্ত, রঞ্জিত দেবনাথ ও জাভেদ আখতার লস্কররা পুরসভায় যান। তবে সেসময় নির্বাহী আধিকারিক ভানলাল লিমপুইয়া নামপুই পুরসভায় ছিলেন না। তার বদলে তারা সাক্ষাৎ করেন অ্যসিস্টিং অফিসার নবোত্তম শর্মার সঙ্গে।
অভিজিৎবাবুরা গান্ধীমেলায় বিনোদন সামগ্রী বসানোর জায়গা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগের কথা উল্লেখ করে এ নিয়ে যে সংস্থাকে ওয়ার্কঅর্ডার দেওয়া হয়েছে তা দেখানোর দাবি জানান। তবে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরও অ্যসিস্টিং অফিসার তা দেখাতে পারেননি। এর বদলে দেখানো হয় শুধু সংস্থার নামে ইস্যু হওয়া “অফার লেটার”। এদিন কংগ্রেস প্রতিনিধি দলের অভিযানের সময় পুরসভার কর্মসংস্কৃতি কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে ফুটে উঠে তাও।
কংগ্রেস প্রতিনিধিরা অ্যাসিস্টিং অফিসারকে প্রতি বর্গাফুট জমি কত টাকায ভাড়া দেওয়া হয়েছে এবং কতটা জমি ব্যবহার করছে বরাতপ্রাপ্ত সংস্থা এসব তথ্য থাকা “ওয়ার্ক অর্ডার”দেখাতে বলেন। তখন অ্যাসিস্টিং অফিসার গৌতম দে নামে কর্মীকে
ডেকে তা নিয়ে আসার জন্য বলেন। কিন্তু দেখা যায় প্রায় ঘন্টাখানেক সময় পার হয়ে যাওয়ার পরও গৌতম তা নিয়ে হাজির হননি। তিনি কিছু জানানোরও প্রয়োজন অনুভব করেননি। এতে কংগ্রেস প্রতিনিধিরা কিছুটা উত্তেজিত হয়ে উঠেন। এই অবস্থায় অ্যসিস্টিং অফিসার ডেকে পাঠান অন্য এক কর্মী মধু শুক্লবৈদ্যকে। মধুবাবু কিছুক্ষণ পর হাজির হয়ে নানা বিভ্রান্তিকর কথাবার্তা বলতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত চাপের মুখে মধুবাবুই অন্য এক কর্মীকে মেলার ফাইল নিয়ে আসতে বলেন। মেলার ফাইল পৌঁছালে দেখা যায়, এতে ওয়ার্কঅর্ডার নেই। বরাতপ্রাপ্ত সংস্থাকে যে অফার লেটার দেওয়া হয়েছে প্রতিনিধিদের তা দেখালে তারা এতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। বলা হয় এতে বিস্তৃত কোনোও তথ্যই নেই।
এভাবে প্রায় ঘন্টা দুয়েক সময় অতিবাহিত হওয়ার পর কংগ্রেস প্রতিনিধিরা পুরসভা ছেড়ে চলে যান। তবে যাবার আগে তারা জানিয়ে যান, আগামীকালের মধ্যে যেন ওয়ার্ক অর্ডারের প্রতিলিপি তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, বিস্তারিত তথ্য সম্বলিত ওয়ার্ক অর্ডার পুরসভার নোটিশ বোর্ডে টাঙ্গানো সহ ওয়েবসাইটে আপলোড করার দাবি জানান তারা। তারা এও জানিয়ে যান, মেলায় বিনোদন সামগ্রী বসানোর জন্য কতখানি জমি ব্যবহার করা হয়েছে সরজমিনে গিয়ে তারা তা মেপে দেখবেন।
এদিন অভিজিৎ পালরা অ্যসিস্টিং অফিসারের সামনেই পুরসভার কর্মসংস্কৃতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে ক্ষোভ ব্যক্ত করেন। বলেন, আধিকারিকের নির্দেশ শুনেও পাত্তা দিতে রাজি হন না কর্মীরা, কিভাবে চলছে পুরসভার কাজকর্ম। সঙ্গে তারা এও অভিযোগ করেন, সৌরভ, রাজু এমন নামের কিছু কর্মী পুরসভায় এক সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। শুধু মেলা নয় অন্যান্য ক্ষেত্রেও এরা চালিয়ে যাচ্ছেন অনৈতিক সব কাজকর্ম। আর এই সিন্ডিকেটের মাথায় রয়েছেন খোদ নির্বাহী আধিকারিক ভানলাল লিমপুইয়া নামপুই। এসব শুনে একসময় অ্যাসিস্টিং অফিসার পরিস্থিতি ঠান্ডা করার জন্য বলে ওঠেন, তার কথামতো কাগজ নিয়ে না আসায় গৌতম দেকে শোকজ করতে পারেন তিনি।
এদিকে কংগ্রেসীদের অভিযান নিয়ে পাল্টা কটাক্ষ করা হয়েছে বিজেপির পক্ষ থেকে। বিজেপির জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অভ্রজিত চক্রবর্তী বলেন, পুরসভায় কংগ্রেসের বোর্ড থাকাকালীন মেলা থেকে আয় হত মাত্র ৫-৬ লক্ষ টাকা। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর তা বেড়ে হয় ২৪ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। নির্বাহী আধিকারিকদের জমানায়ও অব্যাহত রয়েছে এই ধারা। তার কথায়, কংগ্রেস জমানায় দুর্নীতি হয়েছে এরপর দুর্নীতির অবসান ঘটায় মেলা থেকে আয় বেড়েছে পুরসভার। তাই কংগ্রেসের মুখে দুর্নীতি নিয়ে কথা সাজে না। তিনি আরও বলেন, কংগ্রেসীরা যদি তথ্য জানতেই চান, তবে এর জন্য নিয়মমাফিক আবেদন করতে পারতেন। কিন্তু এভাবে হঠাৎ করে হাজির হলে তো কেউ তথ্য দিতে পারবে না। অস্তিত্ব বিহীন হয়ে আমজনতার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে কংগ্রেস এভাবে দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ এনে “স্ট্যান্টবাজি” শুরু করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।