বিশ্বজিৎ দত্ত
শিলচর, ২৩ ডিসেম্বর : ‘মন মে লাড্ডু ফুটা’! শিলচর পুরনিগমের মেয়র পদকে ঘিরে বর্তমানে শাসক দল বিজেপির একাংশ কর্মকর্তার মনের অবস্থা যেন চকলেটের বিজ্ঞাপনের এই শব্দবন্ধের মতোই। এই পদে আসীন হওয়ার স্বপ্নকে সাকার করতে যে যার মতো করে কসরত চালিয়ে যাচ্ছেন। এই ডামাডোলে আবার শুরু হয়ে গেছে ল্যাং মারার প্রস্তুতিও।
আগামী বছরের প্রথম ভাগেই পুরো নিগমের নির্বাচন হবে ধরে নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে শাসক দল। সম্প্রতি দলের রাজ্য সভাপতি ভবেশ কলিতাও শিলচর সফরে এসে আগামী বছরের প্রথম ভাগে নির্বাচন হবে বলে জানিয়ে কর্মীদের তৈরি হবার নির্দেশ দিয়ে গেছেন। যদিও এর আগে থেকেই বিভিন্ন ওয়ার্ডে টিকিটের জন্য দলের নেতৃত্বের মন জয়ের চেষ্টা শুরু করে দিয়েছেন অনেকেই৷ তবে এর থেকেও বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে মেয়র পদের জন্য দৌড়। মেয়রের মতো ‘গ্ল্যামারাস’ পদ, এর উপর আবার শিলচরের প্রথম মেয়র হয়ে ইতিহাসে নাম লেখানোর সুযোগ। তাই এবার এই পদের টানে অনেক ‘হেভিওয়েট’ দলীয় কর্মকর্তাদেরও দেখা যেতে পারে শাসক দলের টিকিটে বিভিন্ন ওয়ার্ডে নির্বাচনের ময়দানে অবতীর্ণ হতে। পুরসভা হলে হয়তো এদের অনেকেই নির্বাচনে অবতীর্ণ হওয়ার পথে এগোতেন না। তবে মেয়র পদে বসার সুযোগ সঙ্গে আবার ইতিহাসে নাম লেখানোর হাতছানি, তাই ঝুঁকি নিয়েও মানসিকভাবে তৈরি হয়ে রয়েছেন অনেকে।
দলীয় সূত্রের খবর, দল যে নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে এনিয়ে তাদের কারও মনেই কোনও সংশয় নেই। এই পরিস্থিতিতে মেয়র পদের দৌড়ে সামিল হতে চাইছেন অনেকেই। বর্তমানে দলের অভ্যন্তরে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে রাজ্য কমিটির সম্পাদক কনাদ পুরকায়স্থ, জেলা সভাপতি বিমলেন্দু রায়, শিলচর ডেভেলপমেন্ট অথরিটির চেয়ারম্যান মঞ্জুল দেব, জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অভ্রজিত চক্রবর্তী (ঝলক), পুরসভার প্রাক্তন সহ-সভাপতি চামেলী পালের স্বামী অমরেন্দ্র পাল, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি আধিকারিক রসরাজ দাস ও সাংসদ রাজদীপ রায়ের প্রতিনিধি পুলক দাসদের নাম। এই দৌড়ে কে এগিয়ে, কে পিছিয়ে এনিয়ে দলের অভ্যন্তরে চলছে নানা চর্চা।
চর্চা রয়েছে বর্তমানে দল থেকে বিচ্ছিন্ন এক তাবড় নেতাকে ঘিরেও৷ এসবের পাশাপাশি মেয়র পর সংরক্ষিত হবে এমন ভাবনার বশে নিজেদের অনুকূলে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন আরও কয়েকজন। এরমধ্যে রয়েছেন প্রাক্তন পুরসদস্য রাজেশ দাস,ও চামেলি পাল এবং আইনজীবী নেহের রঞ্জন দাসের মতো কয়েকজন। পদ অনুসূচিত জাতির জন্য সংরক্ষিত হলে রাজেশ ও নিহারের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়তে পারে বলে স্বপ্ন দেখছেন তাদের ঘনিষ্ঠরা। একইভাবে মহিলা সংরক্ষিত হলে খুলে যেতে পারে চামেলী পালের ভাগ্য, এমন ভাবনা রয়েছে তার ঘনিষ্ঠ মহলেও।
এদিকে মেয়র পদের এই দৌড়ের মাঝে রাজনীতির চিরাচরিত ধারা অনুযায়ী দলের অভ্যন্তরে শুরু হয়ে গেছে ল্যাং মারার খেলাও। জানা গেছে, কেউ কেউ ইতিমধ্যে অন্যান্য দাবিদারদের আটকে নিজের রাস্তা পরিষ্কার করতে গোপনে যোগাযোগ শুরু করে দিয়েছেন প্রতিপক্ষ দলের সঙ্গে।
বিরোধী দল কংগ্রেসের এক কর্মকর্তা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, শাসক দলের বিশেষ একজন যার নাম নিয়ে বর্তমানে জোর চর্চা চলছে, তার সম্ভাবনা অংকুরে বিনষ্ট করে দিতে সেই ওয়ার্ডে কোনও জোরদার প্রার্থীকে সামনে রেখে এখন থেকেই কংগ্রেস যাতে ময়দানে নেমে পড়ে এরজন্য তাদের অনুরোধ করা হচ্ছে শাসক দলের কিছু কিছু মহল থেকে। শাসকদলের ওই সব মহল থেকে তাদের আর্থিক সহায়তা সহ অন্যান্য সব ধরনের সহায়তার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে বলে জোর গলায় দাবী করেছেন কংগ্রেসের ওই কর্মকর্তা। প্রসঙ্গত, যাকে ঘিরে এসব শুরু হয়েছে, এর আগেও অন্যান্য নির্বাচনে চক্রান্ত করে তাকে বঞ্চনার অভিযোগ নিয়ে সরগরম হয়েছে দলের অন্দরমহল। সব মিলিয়ে নির্বাচন যতই এগিয়ে আসবে শাসক দলে মেয়র পদের জন্য দৌড় ও খেয়োখেয়ি আরও তীব্র হয়ে উঠার সম্ভাবনা।