অনলাইন ডেস্ক : রাজ্যে বিজেপি সরকারের দু’বছর সম্পূর্ণ হয়েছে। আর এদিনই নিজেদের দুঃখের সাতকাহন তুলে ধরলেন কাছাড় জেলা অটো মালিক সংস্থাগুলির সমন্বয় কমিটির কর্মকর্তারা। রাজ্য সরকারের দু’বছর পূর্তিতে তাদের আক্ষেপ, ভোটের আগে প্রকাশ্যে জেলার সব অটো মালিকরা বিজেপিকে সমর্থন ঘোষণা করলেও আজ পর্যন্ত তাদের দাবির একটিও পূরণের চেষ্টাও করা হয়নি।
বুধবার সংগঠনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে সমন্বয় কমিটির কর্মকর্তারা জানান, বিধানসভা নির্বাচনের আগে ২০২১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি এক প্রকাশ্য জনসভায় শিলচরের সাংসদ রাজদীপ রায় ও বিজেপির বিধায়ক পদপ্রার্থী দীপায়ন চক্রবর্তী অটো চালকদের প্রধান কিছু সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছিলেন। বিনিময়ে অটো মালিক-চালক সহ তাদের পরিবারের সবার সমর্থন চেয়েছিলেন তাঁরা। সেই অনুযায়ী সেদিনের প্রকাশ্য সভায় বিজেপিকে সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছিলেন সংস্থার কর্মকর্তারা। কিন্তু ভোট বৈতরণী পার হওয়ার দু’বছর অতিক্রান্ত হলেও অটো মালিকদের সমস্যা সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। এদিন সংস্থার নেতারা সাংবাদিকদের সামনে সেদিনের প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করিয়ে স্থানীয় সাংসদ ও বিধায়কের প্রতি তারা আস্থা হারিয়েছেন বলে সাফ জানিয়ে দেন।
কমিটির সভাপতি বিকাশ ভট্টাচার্য জানান, শিলচর তথা কাছাড়ের অটো মালিকদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, রাজ্যের অন্যান্য শহরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখানেও অটো চলাচলের পরিধি ১০ কিমি থেকে বাড়িয়ে ১৬ কিমি করা। এছাড়া অন্য দাবির মধ্যে ছিল শিলচর শহরতলির ঝুলে থাকা কিছু সংখ্যক অটোর পারমিট প্রদান এবং রাঙ্গিরখাড়ি থেকে প্রেমতলা সড়কে ‘ওয়ান ওয়ে’ প্রত্যাহার করা। নির্বাচনের আগে ‘সহজ’ এই দাবিগুলি পূরণে খুব আন্তরিকতা দেখিয়েছিলেন রাজদীপ রায়রা। সেদিন প্রকাশ্য সভাতেই তিনি ঘোষণা করেছিলেন, শিলচর খুব শীঘ্রই নগরে উন্নীত হবে। তখন পরিধি বাড়ানোর সমস্যা মিটে যাবে। বাকি দাবিও আলোচনার মাধ্যমে ভোটের পরই মিটিয়ে ফেলা হবে। কিন্তু বিগত দু’বছরে অটো মালিকদের সমস্যা নিরসনে এই জনপ্রতিনিধিদের কোনও আন্তরিকতা দেখা যায়নি বলে তাদের অভিযোগ। তাই সাংসদ-বিধায়কের ওপর আস্থা হারিয়ে এবার মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সমন্বয় কমিটি। শীঘ্রই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সমন্বয় কমিটি তাঁদের দাবি ও সমস্যা তুলে ধরে তাঁর হস্তক্ষেপ কামনা করবেন তাঁরা।
বিকাশ আরও জানান, ১৯৮৩ সালে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থের নেতৃত্বে শিলচর অটো রিকশ মালিক সংস্থার জন্ম হয়। ১৯৯০ সালে কাছাড়ে ৫ হাজারেরও বেশি অটো হয়ে গেলে অন্যান্য মালিক সংস্থার জন্ম হয়। তখন জেলায় একটি পারমিটেই সব অটো চলাচল করত। ১৯৯০ সালে জেলার ১৩টি স্থানের জন্য আলাদা পারমিটের ব্যবস্থা চালু হয়। শেষপর্যন্ত ২০১৭ সালে জেলার সব অটো সংস্থা মিলে এই সমন্বয় কমিটি গঠিত হয়। তখন থেকেই বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সরকারের কাছে তদ্বির চালিয়ে যাচ্ছে সংস্থা। বর্তমানে অটো রিকশর সমস্যাকে জিইয়ে রেখেই সরকারি গাইডলাইন অমান্য করে শহরে অবাধে ই-রিকশ চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এতে অটো মালিকদের স্বাভাবিক উপার্জন বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় বিগত দিনে অরাজনৈতিক সংগঠন হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা বিজেপিকে প্রকাশ্যে সমর্থন করেছিলেন। কিন্তু দাবি পূরণ না হওয়ায় আজ তাঁরা হতাশ। এবার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এসব নালিশ জানিয়ে সমস্যা সমাধানে তাঁর হস্তক্ষেপ কামনা করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে বিভিন্ন অটো সংস্থার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন পিন্টকুমার শীল, রণজিৎ সাহা, মলয় দাশগুপ্ত, অসীম ভট্টাচার্য, সীতু রায়, বাবলু চক্রবর্তী, অর্জুন গোয়ালা প্রমুখ।