অনলাইন ডেস্ক : গোয়ালপাড়া জেলার মাটিয়ায় রয়েছে এশিয়ার সবথেকে বড় ডিটেনশন ক্যাম্পে যা গড়ে তুলতে কেন্দ্র সরকার খরচ করেছিল ৪৬ কোটি টাকা। সরকারি সূত্রে খবর অনুযায়ী এখন এই ক্যাম্পে রয়েছেন ২২৪ জন ব্যক্তি, এর মধ্যে ২১০ জন মুসলমান এবং ১৪ জন হিন্দু। এরমধ্যে রয়েছে ৩৬ টি শিশু। বাংলাদেশ, মায়ানমার সহ বিভিন্ন দেশের বাসিন্দার রয়েছেন এই ক্যাম্পে। এছাড়া ট্রাইব্যুনালের রায়ে ঘোষিত বহু বিদেশীরা এখানে রয়েছেন। যদিও এদের সংখ্যা অনেকটাই কম। ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে বরাক উপত্যকায় এসে নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করেছিলেন তারা সরকারে এলে থাকবে না কোনও ডিটেনশন ক্যাম্প। তার সরকার থাকাকালীন সময়েই অসমে গড়ে তোলা হয়েছে এশিয়ার বৃহত্তম ডিটেনশন ক্যাম্প। প্রায় ২০ বিঘা জমির উপর গড়ে তোলা এই ক্যাম্পে তিন হাজার বিদেশিদের একসঙ্গে রাখা সম্ভব। ২০২১ সালে যখন এটি চালু হয়েছিল, সরকারের তরফে বলা হয়েছিল, এই ক্যাম্পে বিদ্যালয়, পর্যাপ্ত চিকিৎসার সহ বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে। এজন্য আলদা করে কর্মী নিয়োগ করাও হয়েছে। এই ক্যাম্পটি চালু হওয়ার আগে অসমে আটক হওয়া বিদেশি নাগরিক এবং ট্রাইবুনালের রায়ে ঘোষিত বিদেশীদের রাজ্যের ছয়টি অস্থায়ী ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হতো। একসময় সুপ্রিম কোর্ট জানায়, এই অস্থায়ী ক্যাম্পগুলো বিদেশীদের রাখা অনৈতিক কারণ সেখানে বিভিন্ন অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত লোকেদের রাখা হয়। যেহেতু বিদেশীরা সাধারণত কোনও অপরাধে সাজা প্রাপ্ত নন, তাদের একসঙ্গে রাখা ঠিক নয়। এছাড়া এই অস্থায়ী ক্যাম্পগুলোর অবস্থা করুন, ফলে একটি উন্নতমানের ডিটেনশন ক্যাম্প গড়ে তোলা প্রয়োজন। আদালতের নির্দেশেই সরকার এই ক্যাম্পটি গড়ে তোলে এবং ধীরে ধীরে রাজ্যের বিভিন্ন ডিটেনশন ক্যাম্পে থাকা লোকেদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। ২০২০ সালে সুপ্রিম কোর্টের এক নির্দেশে ট্রাইবুনালের রায়ে ঘোষিত বিদেশীদের জামিনে মুক্তি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। যারা অন্তত দুবছর ডিটেনশন ক্যাম্পে থেকেছেন, তাদের জামিনে মুক্তি দেওয়া সম্ভব বলে জানায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এদিকে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাশ হওয়ার পর থেকে সরকার সন্দেহভাজন বিদেশীদের ধরপাকর কিছুটা শিথিল করে। ফলে এখন ডিটেনশন ক্যাম্পে ট্রাইবুনালের রায়ে ঘোষিত বিদেশির সংখ্যা কম। এবছর সেপ্টেম্বর মাসে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা জানান, ২০১৪ সালে কেন্দ্রে বিজেপির সরকার আসা এবং পরবর্তীতে অসমে এনআরসি প্রক্রিয়া শুরুর পর সাময়িকভাবে স্থগিত হয়েছিল সন্দেহভাজন বিদেশিদের ধরপাকড় প্রক্রিয়া। তবে এবছর জানুয়ারি মাস থেকে শুরু করে আগস্ট পর্যন্ত রাজ্যে ৫৪ জন অবৈধ বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে এবং ৪৫ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। অবৈধ বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশ বৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে রাজ্য সরকার ২০১৪ সালের স্থগিতাদেশ বাতিল করেছে এবং নতুন করে গোটা রাজ্যে বিদেশি সনাক্তকরণ এবং ধরপাকড় প্রক্রিয়া শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দশ বছর আগে এনআরসির প্রক্রিয়া শুরু হয় সেই সময় থেকে আমরা রাজ্যে বিদেশি ধরপাকড় কমিয়ে এনেছিলাম। তবে সম্প্রতি রাজ্যে অবৈধ অনুপ্রবেশ এতটাই বেড়েছে, আমরা রাজ্যবাসীর সুরক্ষা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছি। গত দুই মাসে এই সংখ্যা সবথেকে বেশি বেড়েছে। প্রতিমাসে ২৫ জন বা ৩০ জন অবৈধ বাংলাদেশি ধরা পড়ছে। এছাড়া কিছু কিছু জেলায় জনসংখ্যা থেকে আধার পাওয়ার জন্য আবেদনের সংখ্যা বেশি। অর্থাৎ বিদেশীরা ভারতে এসে আধার এবং অন্যান্য নথি সংগ্রহ করতে চাইছে। রাজ্যের সুরক্ষার কথা ভেবে আমরা এই বিশেষ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ সরকারের এই নতুন নির্দেশে আগামীতে ডিটেনশন ক্যাম্পে থাকা লোকের সংখ্যা বাড়বে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে সুপ্রিম কোর্ট সোমবার জানিয়েছে, মাটিয়ায় থাকা ডিটেনশন ক্যাম্পের অবস্থা ভালো নয় এবং সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তারা যেন এক মাসের মধ্যে সমস্যাগুলো মেটায়।