অনলাইন ডেস্ক : চোর সন্দেহে এক ব্যক্তিকে শাস্তি দেওয়ায় অন্য পাঁচ যুবককে লাল ঘরের অতিথি হতে হয়েছে কাটিগড়ায়। এ ঘটনায় আরও অন্তত ২৫ জনকে হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশ। আইন হাতে নিয়ে ‘মরাল পুলিশিং’-এর এই কাণ্ডে চোর থেকে গৃহস্থদের দৌড় এখন লক্ষ্যনীয় হয়ে ওঠেছে কাটিগড়ায়! দেশে প্রতিষ্ঠিত আইন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা থাকার পরও গণপিটুনি দিয়ে ভিডিও ভাইরাল করায় বেজায় ক্ষেপেছেন ওসি যোশেফ কেইভম। আর এতেই বিপত্তি!
জানা যায়, গণপিটুনির ঘটনা ঘটে গত সোমবার। স্থানীয় নুননগর, মোহনপুর এলাকায় বাইক চোর সন্দেহে এক যুবককে আটক করেন স্থানীয় কিছু অতি উৎসাহী যুবক। হাইলাকান্দির বাসিন্দা অভিযুক্ত লোকটি আত্মপক্ষ সমর্থন করে বয়ান দিতে চাইলেও তা কাজে আসেনি। নুননগর মোহনপুরের জমায়েত যুবকরা প্রথমে তাকে ধোলাই দিয়ে পরে মাথার চুল ছেঁটে ন্যাড়া করে দেন। আরও অভিযোগ, তখন নাকি চোর সন্দেহে আটক লোকটির মোবাইল ফোনও কেউ হাতিয়ে নেয়। এখানেই শেষ নয়, চোর ধরে শায়েস্তা করা, পালা করে চুল ছাঁটা ইত্যাদির সব দৃশ্য ভিডিও করে আপলোড করা হয় সামাজিক মাধ্যমে। হাতে হাতে মোবাইলের সৌজন্যে রাতারাতি ভাইরাল হয়ে যায় ‘মরাল পুলিশিং’-এর পুরো ঘটনা। যা সচেতন মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলে। ঘটনাটি চোখে পড়ে পুলিশেরও৷ দেশে প্রতিষ্ঠিত আইন থাকতে এবং পুলিশ থাকতে কেন এভাবে কাউকে মারধর করা হবে? কেন কোনও মানুষের এমন অসম্মানজনক ভিডিও ধারণ করে সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করা হবে? এ রকম নানা প্রশ্ন যখন ফেসবুক, রিলস, মিম ইত্যাদিতে উঠতে থাকে, তখন মাঠে নামেন কাটিগড়ার ওসি যোশেফ কেইভম। তিনি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা গ্রহন করেন। শুরু হয় তদন্ত। এতে ভাইরাল ভিডিও থেকে ‘মরাল পুলিশিং’-এ জড়িত লোকদের হদিস পায় পুলিশ। বুধবার মামলাটি গ্রহনের পরই রাতেই অভিযানে নামেন ওসি। এতে গ্রেফতার করা হয় পাঁচ যুবককে। গ্রেফতার হওয়া যুবকরা হলেন দিলোয়ার আহমেদ চৌধুরী (গোবিন্দপুর ৩য়), আবুল হোসেন বড়ভুইয়া (টিকরপাড়া), জিয়াবুর রহমান চৌধুরী (টিকরপাড়া), রুবেল আলম চৌধুরী (টিকরপাড়া) ও শাহজাহানুল ইসলাম চৌধুরী (নুননগর)। বৃহস্পতিবার এদের সবাইকে আদালতে পেশ করা হয়। জানা গেছে, এই পাঁচ জনেই থেমে থাকছে না কাটিগড়া পুলিশ। ভাইরাল ভিডিও-র সুত্র ধরে প্রায় তিরিশ জনের এক প্রাথমিক তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ফলে অবশিষ্ট ২৫ জনকে করায়ত্ত করতে তদ্বির জারি রেখেছে পুলিশ।
‘মরাল পুলিশিং’ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কাটিগড়া থানার ওসি যোশেফ কেইভম বলেন, চোর ধরা পড়লে কমবেশি গণপিটুনি হয়। এতে অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু চোর সন্দেহে কাউকে ধরে এভাবে মারপিট, মোবাইল ছিনতাই, মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া, সমুহ ঘটনার ভিডিও করে সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করা ইত্যাদি কোনও অবস্থায় গ্রহনযোগ্য নয়। আইন হাতে তুলে নেওয়ার এসব ঘটনাকে কখনও প্রশ্রয় দেওয়া যায় না। ওসি-র প্রশ্ন, দেশে কি আইন নেই? পুলিশ নেই? এমন গণপিটুনির জেরে যদি লোকটির মৃত্যু ঘটতো, তাহলে কী হতো! বলেন, ‘মরাল পুলিশিং’ কোনও অবস্থায় বরদাস্ত করা যাবে না। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।