অনলাইন ডেস্ক : মণিপুরকে বনধ-হরতাল ও সন্ত্রাস থেকে মুক্ত করেছে বিজেপি সরকার। মণিপুরে এখন শান্তি বিরাজ করছে, দ্রুত উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে রাজ্য। রাজ্যে ১,৩১১ কোটি টাকার ২১টি উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন করে আয়োজিত সমাবেশে বলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বিষ্ণুপুর জেলার মইরাঙে আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে কেন্দ্ৰীয় স্বরাষ্ট্ৰমন্ত্ৰী তথা বিজেপির সর্বভারতীয় শীর্ষ নেতা বলেন, কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদি এবং মণিপুরে এন বীরেন সিং নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার উগ্রপন্থীদের কার্যকলাপ প্রতিহত করতে পেরেছে। এজন্য রাজ্যের ছয়টি জেলা থেকে সশস্ত্র বাহিনী (বিশেষ ক্ষমতা) আইন প্রত্যাহার করা হয়েছে। রাজ্যে উগ্রপন্থী কার্যকলাপ প্রসঙ্গে তদানীন্তন কংগ্রেস সরকারের তুলোধোনা করেছেন অমিত শাহ। বলেন, মণিপুরে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে সন্ত্রাসবাদীরা চরম রূপ ধারণ করেছিল। তবে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর মণিপুরকে সন্ত্রাসবাদ থেকে মুক্ত করেছে। শাহ বলেন, কেন্দ্রের বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার আট বছরেরও কম সময়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ৩.৪৫ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই সময়কালে ৫১ বার উত্তর-পূর্বাঞ্চল সফর করেছেন। কোন প্রধানমন্ত্রী এতবার এই অঞ্চলে এসেছেন, উপস্থিত জনতার কাছে জানতে চান তিনি। রাজ্যের এন বীরেন সিং সরকার মাদক পাচার ও মাদকদ্ৰব্য ব্যবহারের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করে ব্যাপক অভিযান চালাচ্ছে বলে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আগামী নির্বাচনে মণিপুরে ফের বিজেপি সরকার গঠন করবে। তখন রাজ্যকে একেবারে মাদকমুক্ত করবে বিজেপি সরকার। জনসভার আগে ইমফল পূৰ্ব জেলার ইবুধউ মারজিং পাহাড়ের চূড়ায় নবনির্মিত ১২০ ফুট উঁচু পোলো ট্যাচুর আবরণ উন্মোচন করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এটি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সর্বোচ্চ স্মৃতিস্তম্ভ বলে জানানো হয়েছে। খেলা এবং খেলাধুলার ক্ষেত্রে তাদের অবদানের জন্য সম্মানের প্রতীক হিসেবে মণিপুরের ১৯ জন অলিম্পিয়াডের মূর্তি পার্কে স্থাপন করা হয়েছে। এই বিশাল মূর্তিটি পোলোর আবাসস্থল মণিপুরকে জনপ্রিয় করে তোলার পাশাপাশি পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াবে। এছাড়া স্থানীয়দের জন্য কর্মসংস্থানের সম্ভাবনাও তৈরি করবে। এছাড়া আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চুড়াচাঁদপুর জেলা পরিদর্শন করে সেখানে চুড়াচাঁদপুর মেডিক্যাল কলেজের উদ্বোধন করেন। এটি মণিপুরের পার্বত্য জেলায় নির্মিত প্রথম মেডিক্যাল কলেজ। তিনি ঐতিহাসিক মইরাঙে গিয়ে সেখানে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু প্রতিষ্ঠিত আইএনএ-র সদর দফতর কমপ্লেক্সে ১৬৫ ফুট উঁচু ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। কেবল তা-ই নয়, অমিত শাহ আজ জওহরলাল নেহরু ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্স (জেএনআইএমএস) চত্বরে ১৮-শয্যার একটি প্রাইভেট ইউনিটের উদ্বোধন করেছেন।
তাছাড়া ৪০টি পুলিশ ফাঁড়ি নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন কেন্দ্ৰীয় স্বরাষ্ট্ৰমন্ত্ৰী। এগুলির মধ্যে ৩৪টি ভারত-মায়ানমার আন্তর্জাতিক সীমান্তে এবং ছয়টি ৩৭ নম্বর জাতীয় সড়ক সংলগ্ন এলাকায় তৈরি হবে। আরও যে সব প্রকল্পের উদ্বোধন তিনি করেছেন সেগুলি ফল সংরক্ষণ কারখানা নীলকুঠি, মোরে শহর পানীয়জল সরবরাহ প্রকল্প, কাংলার ইস্টার্ন সাইডে নংপোক থং ব্রিজ, ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়, মারজিং মূর্তি কমপ্লেক্স, কাংখুই গুহায় গুহা পর্যটন প্রকল্পের উন্নয়ন, উখরুলে এলএম ব্লক মডেল আবাসিক স্কুল, রেংপাঙে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট আবাসিক স্কুল, আঞ্চলিক চিকিৎসা বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে পেডিয়াট্রিক কার্ডিও-থোরাসিক অপারেশন থিয়েটার ইত্যাদি। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, গতকাল বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) রাত প্রায় ৭:০০টায় ত্রিপুরা থেকে ইম্ফলে বীর টিকেন্দ্রজিৎ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভারতীয় বায়ুসেনার উড়ানে অবতরণ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বিমানবন্দরে তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং ও তাঁর মন্ত্রিপরিষদের সহকর্মী, বিজেপির প্রদেশ সভানেত্রী এ সারদা দেবী এবং অনেক বিজেপি কার্যকতা।
ইম্ফলে পৌঁছে অমিত শাহ সিটি কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন। প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস এবং জনসভায় অসংখ্য জনতা ছাড়াও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং ও তাঁর মন্ত্রিপরিষদের সহকর্মী, দলীয় বিধায়কগণ, বিজেপির প্রদেশ সভানেত্রী এ সারদা দেবী এবং অনেক বিজেপি কার্যকতা।