অনলাইন ডেস্ক : সাধারণ সভা কেন আহ্বান করা হচ্ছে না, এই প্রশ্নকে ঘিরে রবিবার ধুন্দুমার কান্ড ঘটে যায় শিলচর ঘনিয়ালা এলাকার হজরত পীর মকা শা মোকামে। দুপক্ষের মধ্যে হাতাহাতিতে আহত হন কয়েকজন। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে ছুটে যেতে হয় পুলিশকে। এর পাশাপাশি উত্তেজনার মুহূর্তে এক পক্ষ মোকামের কার্যালয়ের তালা ভেঙ্গে দেওয়ায় পরবর্তীতে ম্যাজিস্ট্রেট সিল করে দেন ওই কার্যালয়।
ঐতিহ্যমন্ডিত এই মোকামের পরিচালন কমিটি গঠনকে ঘিরে বিবাদ অবশ্য নতুন কিছু নয়। এর আগে ২০২১ সালের ৭ মার্চ সাধারণ সভা আহবান করা হয়েছিল। কিন্তু সেদিন দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সভা আর হয়ে উঠেনি। পুলিশি হস্তক্ষেপে মোকামের মসজিদের ইমাম মেহমুদ আহমদকে মোকাম পরিচালনার জন্য দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।
এসবের মাঝে গত ৬ নভেম্বর এলাকার বেশ কিছু লোক একজোট হয়ে ইমামের কাছে গিয়ে সাধারণ সভা আহবান করার দাবি জানান। কিন্তু এরপরও সাধারণ সভা আহবান না করায় এলাকার লোকেরা এদিন ফের মোকামে গিয়ে এ নিয়ে ইমামের কাছে কৈফিয়ত তলব করেন। এতে সৃষ্টি হয় বেশ উত্তেজনার। কিছু লোক তখন তালা ভেঙ্গে মোকামের কার্যালয়ে ঢুকে পড়েন। খবর পেয়ে অপরপক্ষেরও বেশ কিছু লোক হাজির হন মোকামে। উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পর একসময় দুপক্ষের মধ্যে শুরু হয় হাতাহাতি। খবর পেয়ে মালুগ্রাম ফাঁড়ি থেকে হাজির হন বেশ কিছু পুলিস কর্মী। পুলিশি হস্তক্ষেপে নিয়ন্ত্রণে আসে পরিস্থিতি। এসবের মাঝে হাজির হন ম্যাজিস্ট্রেট টি দাসও। উভয়পক্ষের বক্তব্য শোনার পর ম্যাজিস্ট্রেট কার্যালয় সিল করে দেন।
প্রতিবাদী এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, ২০২১ সালের ৭ মার্চ সাধারণ সভা ভেস্তে যাওয়ার পর পুলিশ ইমাম মাহমুদ আহমদকে করোনার প্রকোপ চলা পর্যন্ত মোকাম পরিচালনার দায়িত্বভার অর্পণ করেছিল। কিন্তু করোনা পর্ব উতরে যাওয়ার পরও ইমাম সাধারণ সভা আহবান করে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পরিচালন কমিটি গঠন এড়িয়ে যেতে থাকেন। তাই গত ৬ নভেম্বর তারা একসঙ্গে মোকামে গিয়ে ইমামকে সাধারণ সভা আহবান করতে বলেন। সেদিন ইমাম বলেন, তিনি হজে যাচ্ছেন, হজ থেকে ফিরেই সাধারণ সভা আহ্বান করবেন। কিন্তু হজ থেকে ফেরার পরও দেখা যায় এ নিয়ে তার কোনও উদ্যোগ নেই। এরই মধ্যে তাদের কানে আসে এক আইনজীবী সহ সমসুউদ্দিন নামে আরও একজন এবং তাদের সঙ্গীসাথীদের নিয়ে ইমাম নাকি চুপিসারে ট্রাস্ট গড়ে ফেলেছেন। যা কোনওভাবেই বৈধ হতে পারে না। তাই তারা এদিন ফের ইমামের কাছে গিয়ে সাধারণ সভা আহবান করার কথা বলেন। এতে ইমাম ক্ষেপে গিয়ে ইতিমধ্যে ট্রাস্ট গড়া হয়ে গেছে বলে তাদের চলে যেতে বলেন। একথা শুনে স্বাভাবিকভাবে সৃষ্টি হয় উত্তেজনার। এসবের মাঝে ইমামকে সমর্থনকারী সমসুউদ্দিন দলবল নিয়ে চড়াও হয়ে তাদের উপর আক্রমণ চালান বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। তারা আরও অভিযোগ করেছেন, ইমাম ও তার সঙ্গী সাথীরা সাধারণ সভা আহবান করতে চাইছেন না কারণ, এর পেছনে রয়েছে তাদের ব্যক্তি স্বার্থ। গোটা ব্যাপারটার পেছনে রয়েছে বিরাট দুর্নীতি। তাই তারা সরব হয়েছেন এর প্রতিবাদে।
এদিকে ইমামের ঘনিষ্ঠ সূত্রে পাল্টা অভিযোগ করা হয়েছে, কিছু লোক সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে দলবদ্ধ হয়ে ইমামের উপর আক্রমণ চালিয়েছেন। এভাবে অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগের মাঝে এদিনের ঘটনাকে ঘিরে এলাকায় এখনও বিরাজ করছে চাপা উত্তেজনা। পুলিশ জানিয়েছে পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রাখা হচ্ছে।