অনলাইন ডেস্ক : সৌদি সরকারের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের পর অবশেষে কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় হজনীতি -২০২৩ ঘোষণা করল সোমবার। নতুন চুক্তি মর্মে ভারত থেকে এবার ১ লক্ষ ৭৫ হাজার ২৫ জন ধর্মপ্রাণ মুসলিম পবিত্র মক্কা- মদিনায় হজব্রত পালন করতে যেতে পারবেন। চুক্তির ৮০ শতাংশ হজযাত্রী যাবেন ভারতীয় হজ কমিটির মাধ্যমে। অবশিষ্ট ২০ শতাংশ হজব্রত পালন করবেন অনুমতিপ্রাপ্ত ট্যুর অপারেটরের মাধ্যমে। সম্প্রতি জিদ্দাস্থিত ভারতীয় কনসুলেট জেনারেল মোহাম্মদ সাহিদ আলম ও সৌদি সরকারের হজ ও ওমরাহ প্রতিমন্ত্রী ডঃ আব্দুল ফাত্তাহ সালাইন এই চুক্তি স্বাক্ষর করেন। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে ভারত থেকে দুলক্ষ হজযাত্রী হজ পালন করেন। ২০২২ সালে মাত্র ৭৯ হাজার ২৩৭ জন হজ পালন করেছেন। ২০২০-২০২১ সালে কোভিড উনিশ এর জন্য কোন বিদেশীকে হজব্রত পালনের অনুমতি দেওয়া হয়নি। এ দুবছর কোভিড বিধিনিষেধ মেনে শুধু নিয়ম রক্ষার হজ পালিত হয়।
দুদেশের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হবার পর অবশেষে কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় নতুন হজনীতি ২০২৩ ঘোষণা করল। নতুন হজনীতি অনুসারে যারা ইতিপূর্বে হজ কমিটির মাধ্যমে হজ পালন করেছেন তারা পুনরায় হজের আবেদনের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না। তবে একবার হজ পালনকারীরা স্বঘোষিত হলফনামা দিয়ে কোন মহিলার ‘মেহরাম’ অথবা ৭০ বছরের উর্ধ কোন পৌড় হজযাত্রীর সহযোগী হয়ে হজ পালন করতে পারবেন। নতুন হজনীতিতে যোগ্যতার নিরিখ হিসেবে বলা হয়েছে হজ আবেদনকারীর অবশ্যই মেসিনে পাঠযোগ্য বৈধ ভারতীয় পাসপোর্ট থাকতে হবে। কোন আবেদনকারী তথ্য গোপন করলে তার হজের আবেদন বাতিল হবে।দোরারোগ্য ক্যান্সার,সংকটাপন্ন হৃদরোগী, লিভার,কিডনি এবং যক্ষা রোগীরা হজের আবেদন করার যোগ্য হবেন না। এছাড়া যাদের বিদেশ ভ্রমণে আদলাতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তারাও হজের আবেদন করার সুযোগ পাবেন না।
ইতিপূর্বে সর্বাধিক পাঁচ জনের গ্রুপ থাকলেও নতুন হজ নীতিতে চারজন রাখা হয়েছে। দুবছরের শিশু মা-বাবার সঙ্গে হজব্রত পালন করতে পারবে তবে তাদের পরিণত বয়স ধরে চার্জ ধার্য করা হবে। অন্যান্য বারের মত এবারও কোন পুরুষ সঙ্গী ছাড়া চারজনের মহিলারা একটি গ্রুপ গঠন করে হজ করতে পারবেন। প্রতি তিনশত হজযাত্রীদের মধ্যে একজন খাদিমুল হুজ্জাজ পাঠাবে ভারতীয় হজ কমিটি। প্রত্যেক রাজ্য হজ কমিটি থেকে একজন করে সমন্বয়ক পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে সমন্বয়ককে আধিকারিক পদমর্যাদার হতে হবে। প্রতিটি রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের হজযাত্রীর কৌটা নির্ধারণ করা হবে পূর্বের মত লটারির মাধ্যমে। সংশ্লিষ্ট রাজ্যে নির্ধারিত কোটার অতিরিক্ত আবেদন জমা পড়লে তাও লটারির মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হবে। কোন আবেদনকারী গুরুতর অসুস্থ কিংবা মারা গেলে হজযাত্রা বাতিল করা হবে। অন্যকোন কারণে হজযাত্রা বাতিল করা হলে নতুন নির্দেশিকা মর্মে জরিমানাও ধার্য করা হবে।তবে কোন হজযাত্রী অনিবার্য কারণবশত যাত্রা বাতিল করেন তাকে সংশ্লিষ্ট রাজ্য হজ কমিটির মাধ্যমে বাতিল করার আবেদন করতে হবে। নির্বাচিত প্রত্যেক হজযাত্রীদের একটি ব্যাঙ্ক রেফারেন্স বরাদ্দ করা হবে। সেই রেফারেন্স নম্বর অগ্রিম ও অবশিষ্ট অর্থ জমার সময় উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক। মক্কায় এবারও সকল হজযাত্রীর জন্য সমমর্যাদায় থাকার ব্যবস্থা করা হবে। অন্যান্যবারের মত নতুন হজনীতিতে মেডিকেল চেকআপ রিপোর্ট জমা দেওয়া, বাধ্যতামূলক থাকবে। এছাড়াও কোভিড টিকা নেওয়ার বিষয়টি মেডিকেল চেকআপ রিপোর্টে উল্লেখ থাকতে হবে। প্রত্যেক হজযাত্রীদের স্বাস্থ্য ও প্রশিক্ষণ কার্ড সংগ্রহ করতে হবে সংশ্লিষ্ট রাজ্য হজ কমিটি থেকে। হজযাত্রার আগে প্রতিটি জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে আর টি পি সি আর রিপোর্ট সংগ্রহ করতে হবে হজযাত্রীকে। এবার দেশের মোট পচিশটি বিমানবন্দর থেকে হজযাত্রীরা মক্কা মদিনার উদ্দেশে যাত্রা করবেন। উত্তর পূর্বের একমাত্র গুয়াহাটি ও আগরতলা থেকে হজের উড়ান চলবে। হজ সফরের সময়সূচী ৩০ থেকে সর্বাধিক চল্লিশ দিন হতে পারে। আদায়ী কোরবাণী সৌদি সরকারের অনুমোদনক্রমে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক এর মাধ্যমে দেওয়া হবে।
এদিকে, নতুন হজনীতি ঘোষণা করা হলেও এখন পর্যন্ত হজের অনলাইন ও হজ গাইডলাইন ঘোষিত হয়নি। আশা করা হচ্ছে আগামী সপ্তাহ থেকে হজের আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হবে।