অনলাইন ডেস্ক : ভারতমালা প্রকল্পের অধীনে শিলচর রংপুর মধুরা সেতু থেকে আরকাটিপুর হয়ে মিজোরামের ভাইরেংটি পর্যন্ত রাস্তা তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই রাস্তা তৈরির জন্য অধিগৃহীত জমির ক্ষতিপূরণের নামে ব্যাপক হারে দুর্নীতির অভিযোগ শোনা যাচ্ছে অনেকদিন ধরেই । ফিসফিশানি শোনা যাচ্ছে,এই ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থার দৌলতে সংশ্লিষ্ট একাংশ আধিকারিক ও পাটোয়ারীর ধনভাণ্ডার উপচে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এবার ঘুষ নিতে গিয়ে এক পাটোয়ারির হাতেনাতে ধরা পড়া প্রমাণ করে দিল এসব ফিসফিশানি কতখানি বাস্তব ।
কাছাড়ের ভুবাসন আধিকারিকের কার্যালয়ে কর্মরত পাটোয়ারী নুরুল হক বড়ভূঁইয়াকে ঘুষ নেওয়ার সময় বৃহস্পতিবার হাতেনাতে পাকড়াও করে পুলিশের দুর্নীতি দমন শাখা। কাশিপুর দ্বিতীয় খন্ডের বাসিন্দা আশিক আক্তার বড়ভূঁইয়া নামে এক ব্যক্তির অভিযোগের সূত্র ধরে গুয়াহাটি থেকে আসা দুর্নীতি দমন শাখার একটি দল ফাঁদ পেতে হাতেনাতে পাকড়াও করে নুরুল হককে। এরপর গোবিন্দপুর সংলগ্ন বাঘেহর এলাকায় তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বাজেয়াপ্ত করা হয় ১১ লক্ষ টাকা।
সরকার কারও জমি অধিগ্রহণ করলে অধিগৃহীত জমির ক্ষতিপূরণ এবং জমিতে থাকা জিরাত-এর মূল্য মিটিয়ে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট পাটোয়ারীদের “ক্লিয়ারেন্স” দিতে হয়। নুরুল হক এই “ক্লিয়ারেন্স” দিতে গিয়ে আশিক আক্তারের কাছে ঘুষ দাবি করেছিলেন। আশিক আক্তার এনিয়ে পুলিশের দুর্নীতি দমন শাখার কাছে অভিযোগ করেন। এরপর দুর্নীতি দমন শাখার শাখার একটি দল বুধবার গুয়াহাটি থেকে শিলচরে এসে পৌঁছায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী দুর্নীতি দমন শাখার আধিকারিকরা বৃহস্পতিবার আশিক আক্তারকে ঘুষের অর্থ নুরুলের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য কার্যালয় যেতে বলেন। আর আগেভাগেই তারা সাদা পোশাকে কার্যালয়ে পৌঁছে ওৎ পেতে থাকেন। আক্তার কার্যালয়ে গিয়ে নুরুলের হাতে টাকা তুলে দিতেই তাকে হাতেনাতে পাকড়াও করা হয়।
আশিক আক্তার জানিয়েছেন, কাশিপুর দ্বিতীয় খন্ডে ভারতমালা প্রকল্পের অধীনে সড়ক তৈরীর জন্য তার দু’টি জমি অধিগ্রহণ করেছে সরকার। দুটি জমিতেই রয়েছে ঘর। এই বাবদ ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির জন্য সংশ্লিষ্ট পাটোয়ারী নুরুল হককে “ক্লিয়ারেন্স”দেওয়ার জন্য বললে তিনি দুটি জমি বাবদ ৩০ হাজার করে ৬০ হাজার এবং জমি দুটিতে
থাকা ঘর দুটির জন্য আরও ৩০হাজার করে দাবি করেন ৬০ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে নুরুল ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দাবি করলে তিনি জানান তার পক্ষে এত অর্থ দেওয়া সম্ভব নয়। এই অবস্থায় দরাদরি শেষে নুরুল ঘুষের পরিমাণ কিছুটা কমাতে রাজি হন। নুরুল ঘুষের পরিমাণ কিছুটা কমাতে রাজি হলেও তার মনে হয় এভাবে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া ঠিক হবে না। তাই তিনি দুর্নীতি দমন শাখার কাছে এনেরপোর্ট করেন। এরপর দুর্নীতি দমন শাখার আধিকারিকদের নির্দেশে এদিন তিনি ৫ হাজার টাকা তুলে দিতে যান। আর তখনই নুরুলকে হাতেনাতে পাকড়াও করা হয়।
ভারতমালা প্রকল্পের এই সড়কের জন্য অধিগৃহীত জমির ক্ষতিপূরণের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। যারা নিয়মমাফিক ক্ষতিপূরণের দাবিদার এদের কাছ থেকে যেমন চাপ দিয়ে ঘুষ আদায় করা হচ্ছে, তেমনি অনেকের জমিতে রাতারাতি নামকাওয়াস্তে দেখনদারির জন্য কোনও পরিকাঠামো গড়ে তোলে একাংশ পাটোয়ারীর যোগসাজশে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ। এভাবে অনেক জমি মালিককে অতিরিক্ত অর্থ পাওয়ার সুযোগ করে দিয়ে একাংশ পাটোয়ারীরও আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে উড়ছে। /ওই একাংশ পাটোয়ারীর কত অর্থ থাকতে পারে তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে নুরুলের বাড়ি থেকে ১১ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করা থেকেই। দুর্নীতি দমন শাখার এক সূত্র জানান, নুরুলকে গ্রেফতারের পর তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে তার বিছানার নিচে থেকে পাওয়া গেছে ১১ লক্ষ টাকা।
নুরুল হক সম্পর্কে অভিযোগ, ভারত মালার ক্ষতিপূরণের নামে একাংশ সরকারি কর্মী- আধিকারিক ও দালালদের নিয়ে যে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে, তিনি এই সিন্ডিকেটের এক বড় মাপের চাই। ভারত মালার ক্ষতিপূরণ পর্ব শুরু হওয়ার পর তার আর্থিক উত্থান ঘটেছে জেট গতিতে । তার হয়ে ময়দানে নেমে শিকার ধরে আনে, আরকাটিপুরের বাসিন্দা বড় ভূঁইয়া পদবীরই এক দালাল। ওই দালালকে ধরলে এই সিন্ডিকেট সম্পর্কে অনেক তথ্যই বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা।