অনলাইন ডেস্ক : ভয়ানক অগ্নিকাণ্ড থেকে রক্ষা পেল দক্ষিণ ভারত থেকে শিলচরগামী গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন। শিলচরের উদ্দেশে গত ৪ ফেব্রুয়ারি কেরলের কোয়েম্বাটোর থেকে ছেড়ে গন্তব্যে পৌঁছনোর ঘন্টা ছয়েক আগে মান্দেরদিসা স্টেশনের কাছে ঘটে এই বিপত্তি। কোয়েম্বাটোর-শিলচর ১২৫১৫ নং সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসে বুধবার দুপুরে অতর্কিতে আগুন লাগার খবরে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যাত্রীরা নিজনিজ কামরার ভেতরেই ছুটোছুটি শুরু করেন প্রাণভয়ে। এদিন লামডিং ছাড়ার খানিক পর দুপুর দুটো নাগাদ ট্রেনটির এস-৩ কোচের নীচ থেকে প্রচুর ধোঁয়া দেখে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ট্রেনটি গড়ে সাড়ে তিনঘন্টা দেরিতে চলার ফলে তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল হওয়ার পথে। পড়ন্ত দুপুরে বেশিরভাগ যাত্রীই ছিলেন মধ্যাহ্ন ভোজনের পর ভাতঘুমে। আচমকা চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে ঘুমচোখে সবাই হুড়হুড় করে আতঙ্কে বার্থ ও সিট ছেড়ে উঠে পড়েন। কেউ কেউ নিজের সঙ্গে থাকা মালপত্র নিয়ে দরজার সামনে ভিড় করতে থাকেন। কোচের ভেতরে তখন এক আতঙ্কজনক পরিস্থিতি। অবশেষে অদূরে মান্দেরদিসা জংশনে এসে তিননম্বর লাইনে ট্রেন থামান চালক। গার্ড,চালক-সহচালক ও মান্দেরদিসা স্টেশনের কর্মীরা দ্রুত ছুটে এসে অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম দিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন। কিছুক্ষণের চেষ্টার পর ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।
জানা গেছে, ওই কোচের নীচের ব্রেক ফেঁসে মারাত্মকভাবে ধোঁয়া উড়ছিল। রেলের ভাষায় এটা ‘ব্রেক বার্ন’। ট্রেনের সংলগ্ন ও অধিকাংশ বগিই ছিল পেছনের দিকে। তাই এস-৩ কোচের পেছনের স্লিপার সহ বাতানুকূল কোচগুলোর যাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক দেখা দেয়। তবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা না ঘটলেও এর থেকেই আগুন লাগার যথেষ্ট আশঙ্কা ছিল বলে ট্রেনের অ্যাটেন্ডেন্টরাও জানিয়েছেন। তারা আরও জানান, ট্রেনটির একই কোচে এর আগের ট্রিপে কোয়েম্বাটোর যাওয়ার পথে এরকম ঘটনা ঘটে।
প্রসঙ্গত, দিনদুপুরে এই ঘটনা ঘটায় সবার চোখে পড়ে এবং বিপদ এড়ানো সম্ভব হয়। এরকম ঘটনা রাতের বেলা ঘটলে ট্রেনটি ভয়ানক অগ্নিকাণ্ডের কবলে পড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। প্রশ্ন হচ্ছে, একই র্যাকে গত সপ্তাহে এরকম ঘটনার পরেও কোচটি সারানো হলো না কেন? কোচটি বাতিল না করে এই অঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণ ভারতে যাতায়াতকারী গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনে বহাল রাখা হলো কেন? বিষয়টি নিয়ে যাত্রীরা অবগত হওয়ার পর অভিশপ্ত কোচটি পাল্টানো বা সঠিকভাবে সারাই করলে এরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতো না বলে জোর মন্তব্য করেন তাঁরা। ঘটনাটি নিয়ে যাত্রীরা রেলের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন। ধোঁয়া পুরোপুরি বন্ধ হলে প্রায় আধঘন্টা পরে মান্দেরদিসা থেকে ট্রেনটি শিলচর অভিমুখে ফের যাত্রা শুরু করে। উল্লেখ্য, এই ট্রেনের যাত্রীদের বেশ বড় অংশ দক্ষিণের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যাতায়াত করেন। তাঁদের অনেকেই মুমূর্ষু। তাছাড়া দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার জন্য বরাক সহ এই অঞ্চলের ছাত্রছাত্রীরাও দক্ষিণ ভারতে যাতায়াতে এই ট্রেনের সওয়ার হন। একইসঙ্গে দক্ষিণে এখানকার পরিযায়ী শ্রমিকদের ভিড় সারাবছর ট্রেনটিতে লেগে থাকে। রেলের হিসেবে একবার যাতায়াতে দেশের এই অন্যতম দূরপাল্লার ট্রেন ( মোট দূরত্ব ৩৪৯২ কিলোমিটার ) থেকে প্রচুর আয় হয়। অথচ, এই ট্রেনের সময়ানুবর্তিতা এবং মেন্টেনেন্সে রেল যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে না বলে যাত্রীদের অভিযোগ।