অনলাইন ডেস্ক : জল বের হয়ে বেশ দ্রুত গতিতেই নেমছে বরাক নদীতে। যা দেখে উৎফুল্লিত সাংসদ রাজদীপ রায়, বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী ও জনসম্পদ বিভাগের কার্যবায়ী ব্যস্তকার কে জামান তিনজনই মন্তব্য করেন-“ধরে নেওয়া যায়, মহিষাবিলের জমা জলের সমস্যার অন্ত পড়ল এবার।”
শিলচর বরাকপারের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে থাকা মহিষাবিলের জল দীর্ঘ বছর ধরে ভোগাচ্ছে সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকেদের। শুধু বরাকপার নয়, ভোগান্তি হচ্ছে শহরবাসীরও। এসবের মাঝে গত বছরের বন্যার ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা তো রয়েছেই। এই বন্যার দরুন ভিলেন হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছিল বেতুকান্দির অর্ধনির্মিত স্লূইসগেটকেই। তাই বন্যা পরবর্তীতে স্লূইস গেটের কাজ শেষ করার জন্য অর্থ মঞ্জুর করা হয়। গেট তৈরির পর ঠিকমত কাজ করছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে “টেস্ট ড্রাইভ”-দেওয়া হয় রবিবার। সাংসদ রাজদীপ রায় , বিধায়ক দিপায়ন চক্রবর্তী ও জেলাশাসক রোহন কুমার ঝা-র উপস্থিতিতে সকাল ৯টা ৩৫ মিনিট নাগাদ হুইল ঘুরিয়ে গেট খুলতেই হড় হড় করে দ্রুত গতিতে মহিষাবিলের জল নামতে শুরু করে বরাক নদীতে।
এ মাসের প্রথম ভাগে বরাক উপত্যকা সফরে এসে জলসম্পদ মন্ত্রী পীযুষ হাজরিকা পরিদর্শন করেন বেতূকান্দির নবনির্মিত স্লূইসগেট সহ বাঁধের কাজ। মন্ত্রী সেদিনই জানিয়েছিলেন, স্লূইসগেটে কোনও কারিগরি সমস্যা রয়ে গেছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে “টেস্ট ড্রাইভ”-এর ব্যবস্থা করা হবে। এই টেস্ট ড্রাইভ বা মহড়া পর্বে এদিন দেখা গেছে স্লূইসগেট উত্তরে গেছে সম্পূর্ণ সফলভাবে। যা দেখে নিজের খুশি লুকিয়ে রাখতে পারেননি জল সম্পদ বিভাগের শিলচর সংমন্ডলের কার্যবাহী ব্যস্ততার কে জামান । তিনি জানান,”টেস্ট ড্রাইভ” হলেও যেভাবে জল নামছে তা দেখে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আপাতত বেশ কিছুদিন গেট খোলাই থাকবে। যাতে করে মহিষা বিলের জল নেমে যেতে পারে নদীতে। জল নামার গতি দেখে সন্তোষ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, এবার আর বরাকপারবাসী ও শহরবাসীকে মহিষাবিলের জমা জলের দরুন ভুগতে হবে না। তিনি জানান, গেট কার্যকর হয়ে উঠলেও বিলের দিকে আনুসাঙ্গিক কিছুটা কাজ এখনও বাকি রয়ে গেছে। এই কাজ হবে আগামী বছর। তবে এতে করে জল নিষ্কাশনে কোনও সমস্যা হবে না।
সাংসদ রাজদীপ রায় বলেন, রাজ্য সরকারের দ্রুত পদক্ষেপে দীর্ঘদিনের এই সমস্যার সমাধান হল এবার। আর মহিষাবিল নিয়ে আতঙ্কে ভুগতে হবে না। এদিন সাংসদ ও বিধায়ক ফিতা কেটে এবং নারকেল ফাটিয়ে গেটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনও করেন।
বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তীও জল নিষ্কাশনের নমুনা দেখে বলেন, এবার আর মহিষাবিলের জমা জল নিয়ে ভুগতে হবে না। এর জন্য তিনি মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ও জল সম্পদ মন্ত্রী পীযুষ হাজরিকাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, মহিষা বিলের জমা জলের সমস্যা অনেক পুরনো। বিগত দিনে কংগ্রেস রাজ্যের ক্ষমতায় থাকার সময়কালে এ নিয়ে শুধু রাজনীতিই হয়েছে। প্রতিশ্রুতির পর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। উল্টে বিল থেকে সংযোগকারী রাঙ্গিরখালের জমি কংগ্রেস জমানায় জবরদখলের দরুন এই সমস্যা বেড়েছে দিন কে দিন। এবার বিজেপি সরকার স্লূইসগেটের কাজ করিয়ে সরাসরি বিলের জল নদীতে নামার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। তাই নিরসন হবে ভোগান্তির।
প্রসঙ্গত এই গেটের জন্য দীর্ঘ বছর আগে বক্স কালভার্ট তৈরি করেছিল জল সেচ বিভাগ। এরপর এভাবেই পড়ে থাকে তা। এই অর্ধ নির্মিত গেট কে ঘিরেই গত বছরের বন্যায় সৃষ্টি হয়েছিল যত সমস্যার। এরপর জল সম্পদ বিভাগকে গেট তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়। জল সম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগের বক্স কালভার্ট থেকে এবার উচ্চতা বাড়ানো হয়েছে আরও ২ মিটার। আর আগে অর্ধ নির্মিত গেটে এমনিতেই বসিয়ে রাখা হয়েছিল ১ কুইন্টাল ওজনের একটি শাটার প্লেট। এবার সেই স্থলে লাগানো হয়েছে ৮ কুইন্টাল ওজনের শাটার প্লেট। আর আনুষাঙ্গিক অন্যান্য কাজও বিশেষ ব্যবস্থায় করা হয়েছে খুব শক্তপোক্তভাবে। সব মিলিয়ে পুরানো অর্ধ নির্মিত গেটকে নতুন রূপ দিতে সময় লেগেছে প্রায় দুমাস। এবার এই গেট শিলচর বাসীর কান্নার অবসান ঘটাতে পারবে বলে আশা ব্যক্ত করেছেন বিভাগীয় সংশ্লিষ্ কর্মী-আধিকারিকরাও।