অনলাইন ডেস্ক : বুধবার দিনভর উৎকন্ঠায় রেখেছিল বেতুকান্দির স্লুইসগেট, তবে বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে এই সমস্যা অনেকটাই মিটে যায়। অন্তত জল সম্পদ কর্তাদের দাবি অনুযায়ী, অনেক কসরতের পর গেট এদিন পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। বেতুকান্দি স্লূইসগেটকে ঘিরে এমন স্বস্তিদায়ক খবরের পাশাপাশি এদিন দ্বিগুণ উৎকণ্ঠা বয়ে নিয়ে এসেছে তারাপুর শিববাড়ি বাঁধ। বাঁধের বর্তমানে যা অবস্থা, এতে সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা যে কয়েকদিন বিনিদ্র রাত কাটাবেন, তা পুরোপুরি নিশ্চিত।
শিববাড়ি রোডে বরাক নদীর তীরে থাকা এই বাঁধ তথা সড়ক বেশ কিছুদিন ধরেই যেন একটা সিঁড়ির রূপ নিয়ে রয়েছে। অর্ধেক অংশ অনেকটা বসে যাওয়ায় এই রূপ নিয়েছে বাঁধ। আর এর উপর দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে চলছে যান চলাচল। যার দরুন দুর্ঘটনার কবলেও পড়েছেন অনেকে। বুধবার নদীতে জল বাড়ার দরুন ওই বাঁধ তথা সড়ক আরও বসে যেতে পারে এই আশঙ্কায় বন্ধ করে দেওয়া হয় ভারী যান চলাচল। তবে এতেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। নদীর জল বাড়তে বাড়তে বৃহস্পতিবার ভোর রাতে এসে যায় বাধের বসে যাওয়া অংশের উপরে। এসবের মাঝেই চলতে থাকে দুই চাকা, তিন চাকা সহ চার চাকার হালকা যানবাহন। বালির বস্তা দিয়ে জল আটকানোর চেষ্টা চালানো হলেও দেখা যায় কিছুক্ষণ পরপরই বাঁধার উপরের তুলনামূলকভাবে উঁচু অংশে স্থানে স্থানে ১ ফুট -২ ফুট ব্যাস এলাকায় গর্তের সৃষ্টি হয়ে নিচে বসে যাচ্ছে মাটি। আর গর্তের নিচে দেখা যায় জল। এই দৃশ্য দেখার পর এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। জল সম্পদ বিভাগের যেসব কর্মী সেখানে নিরীক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন আতংকিত হয়ে তারা যোগাযোগ করেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। এরপর দেখা যায় যেখানেই গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে সেখানে মাটি ফেলে ফের ভরাটের পর উপরে চাপা দেওয়া হচ্ছে বালির বস্তা। পরিস্থিতি বিবেচনায় পরবর্তীতে ওই বাঁধ দিয়ে হালকা চার চাকার যান চলাচলও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বাঁধের এই অবস্থা নিয়ে সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা এতটাই আতঙ্কিত হয়ে উঠেছেন যে, প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই পালা করে একেকজন রাত জাগতে শুরু করেছেন। সুনীল রায় নামে এলাকার বাসিন্দা
এক প্রৌঢ় আতঙ্কের সুরে বলেন, যেভাবে কিছুক্ষণ পরপর বাঁধের উপর স্থানে স্তানে গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে, এতে এই বাঁধ এবার টিকবে কিনা এনিয়ে তিনি যথেষ্ট সংশয়ে রয়েছেন। গতি প্রকৃতি দেখে মনে হচ্ছে, বাঁধের নিচে দিয়ে কোনওভাবে প্রবাহিত হচ্ছে জল। এতে যেকোনও সময় বড়সড় বিপদের মুখে পড়তে হতে পারে তাদের। সুনীল বাবুর মতো আতঙ্কের সুর শোনা গেছে এলাকার আরও অনেকেরই মুখে। সবারই এক কথা, শিববাড়ি রোডের বাঁধের এই সমস্যা তো আজকের নয়। দীর্ঘ বছর ধরে চলে আসা এই সমস্যা সমাধানে কেন স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। যার দরুন প্রতিবছরই বর্ষার সময় নদীতে জল বাড়লেই তাদের দিন কাটাতে হয় আতঙ্কে। আর এদিন গর্তের সৃষ্টি হওয়া এবং নিচে জল দেখে তো তাদের গাঁয়ের লোম খাড়া হয়ে গেছে।
ব্যাপারটা যে খুবই উদ্বেগের তা স্বীকার করেছেন জল সম্পদ বিভাগের কার্যবাহী বাস্তুকার কে জামানও। তিনি বলেন, বাঁধের নিচে কোনওভাবে চুইয়ে চলে এসেছে নদীর জল। এতে বাঁধ আরও বসে যাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। যদিও বাঁধ পুরো ভেঙ্গে যাবে, এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।