অনলাইন ডেস্ক : “আমাদের ছেলেও এই সাফল্যের ভাগীদার”। চন্দ্রযান-৩-এর সফল অবতরণের পর বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ায় শিলচরবাসী ভরিয়ে দিচ্ছেন এমন পোস্ট। সৌজন্যে ওয়াই বিশাল সিনহা নামে বছর আঠাশের এক যুবক।
শিলচর শহর সংলগ্ন রামনগর টুকো এলাকার বাসিন্দা বিশাল ইসরোয় সায়েন্টিস্ট হিসেবে কর্মরত। চন্দ্রজয় অভিযানের জন্য ইসরোর গড়া বিভিন্ন টিমের মধ্যে “থার্মাল কন্ট্রোল টিম”-এ রয়েছেন বিশাল। তাই চন্দ্রজয় যেন শিলচরবাসীর খুশিতে আলাদা এক মাত্রা এনে দিয়েছে।
বিশালের বাবা ওয়াই খাম্বাতন সিনহা সয়েল কনজারভেশন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। মা ইলারানি সিনহা শিলচর সরকারি বালিকা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। রামনগর টুকোয় এফসিআই গুদাম সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা সিনহা পরিবারে শিক্ষার ধারা চলে আসছে অনেক আগে থেকেই। এর উত্তরাধিকার বহন করে বিশাল ইসরোর মতো এক ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানে সায়েন্টিস্ট হিসেবে নিযুক্ত হন ২০১৯ সালে। বিশালের বাবা মায়ের পাশাপাশি তার ঠাকুরদা এন জি ব্রজলাল সিনহা জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী, ঠাকুমা ইবমন সিনহা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা। বিশাল খাম্বাতন ও ইলারাণীর বড় ছেলে। তাদের অন্য এক ছেলেও রয়েছে।
পরিবারের এই প্রজন্মের বড়ছেলের এমন এক ইতিহাসের অঙ্গ হওয়ার দরুন বাড়ির লোকেদের মধ্যে যেন খুশির সীমা নেই। বাবা খাম্বাতন সিনহা জানিয়েছেন, বিশাল বরাবরই পড়াশোনায় ভালো । শিলচর কলেজিয়েট স্কুল থেকে ভালোভাবে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পড়াশোনা করেন গুয়াহাটির গুরুকুল হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে। এরপর গুয়াহাটি আই আই টি তে
ভর্তি হন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। ২০১৯ সালে আইআইটি থেকে বিটেক কোর্স শেষ করার পর ওই বছরই নিযুক্ত হন ইসরোয়।
খাম্বাতন সিনহা জানিয়েছেন, এদিন চন্দ্রযানের সফল অবতরণের পরই তিনি ছেলেকে ফোন করেছিলেন। তখন ব্যস্ততার দরুন ছেলের সঙ্গে বিশেষ কথা হয়ে ওঠেনি। পরে রাত পৌনে আটটা নাগাদ ছেলে ফের ফোন করে বাড়ির সবার সঙ্গে কথাবার্তা বলে। বাবার কথায়, তার ছেলে এমনিতে
আবেগ অনুভূতি খুব একটা প্রকাশ করে না। তবে এদিন কথা বলে মনে হয়েছে, শেষ পর্যন্ত অভিযান সফল হওয়ায় তার খুশির সীমা নেই। কথার সূত্রে তিনি বলেন ছেলের খুশি হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। ২০১৯ সালে যখন ইসরোর চন্দ্রাভিযান শেষ মুহূর্তে ব্যর্থ হয়, এর কিছুদিন আগেই চাকরি পেয়েছিল বিশাল। তাই চার বছর আগের ব্যর্থতাকে পেছনে ফেলে ইসরো টিম এবার যেভাবে সফল হয়েছে, এতে বিশাল তো বটেই খুশি হবেন এদেশের যে কেউ। তিনি আরও বলেন, চার বছর আগের অভিজ্ঞতায় বাবা হিসেবে এবার তার মনেও কিছুটা হলে জেগে উঠেছিল আশঙ্কা। তবে শেষ পর্যন্ত ঈশ্বরের আশীর্বাদে দেশ অর্জন করলো এক বিরাট সফলতা।
মা ইলারানী এদিন স্কুলেই পড়ুয়া ও অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে দেখেছেন চন্দ্রযানের সফল অবতরণপর্ব। তিনি জানান, গত দুই তিন দিন ধরে বেশ উৎকণ্ঠায় ছিলেন তিনি। এর জন্য দিনরাত শুধু স্মরণ করে গেছেন ঈশ্বরকে। এবার ঈশ্বরের আশীর্বাদে সফল হয়েছে অভিযান।
আর ঠাকুরদা এন জি ব্রজলাল সিনহা বলেন, এই সফলতায় তার নাতিও ভাগীদার, এটা অবশ্যই তার কাছে গর্বের ব্যাপার। সঙ্গে তিনি আশা ব্যক্ত করেন, ভারত নিশ্চয়ই অদূর ভবিষ্যতে মনুষ্যবাহী যান পাঠাতে সক্ষম হবে চাঁদে। এবং এতে ভূমিকা থাকবে তার নাতিরও।