অনলাইন ডেস্ক : রাস্তায় কোনও শিশুকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গেলে অনেকেই কোলে তুলে নিয়ে লালন পালন শুরু করেন। তবে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে এমন লালন পালন বা দত্তক নেওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এর জন্য তিন বছরের কারাবাস ভোগ করা সহ জরিমানা গুনতে হবে এক লক্ষ টাকা। গুয়াহাটিতে ডা: সঙ্গীতা দত্তের পরিবারে দত্তক নেওয়া শিশুদের উপর নির্যাতনের কাহিনি প্রকাশ্যে আসার পর সরকার এনিয়ে সতর্ক হয়ে উঠেছে। এমন আইন ছিল আগেই, তবে ডা: সঙ্গীতা দত্ত কাণ্ডের পর সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে দত্তক নেওয়ার নিয়মাবলী নিয়ে বিশেষভাবে প্রচার চালানো হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে।
বৃহস্পতিবার কাছাড়ের জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক কিষান চরাই, ডিস্ট্রিক্ট চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি (সিডব্লুসি)-র চেয়ারপার্সন সুজিৎ কুমার নাথ, সিডব্লুসি-র সদস্য আইনজীবী কল্পিতা সেন সহ অন্যান্যরা শিলচরে এক সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে বলেন, শিশু দত্তক নেওয়াকে ঘিরে যে বিশেষ কিছু প্রক্রিয়া রয়েছে এ সম্পর্কে সবার সচেতন হওয়া জরুরি। তারা বলেন, পরিত্যক্ত অবস্থায় বা নির্যাতনের শিকার হওয়া বা অন্য কোনও কারণে অভিভাবকহীন হয়ে পড়া শিশুদের অনেকেই এমনিতেই দত্তক নিয়ে লালন পালন শুরু করেন। যারা এমনটা করে থাকেন তাদের অনেকেই হয়তো আবেগের বশে এমন শিশুদের কোলে তুলে নেন। আপাতদৃষ্টিতে ব্যাপারটা মানবিক মনে হলেও, এর পেছনে অনেক প্রশ্ন থেকে যায়। যার দরুন শিশু দত্তক নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট জেলার ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নেওয়া জরুরি। এমনকি ঘনিষ্ঠ আত্মীয় কোনও শিশুকে দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রেও এই অনুমতি নেওয়াটা বাধ্যতামূলক।
তারা বলেন, কোনও শিশুকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে ১০৯৮ নম্বরে ফোন করে ব্যাপারটা জানাতে হবে চাইল্ড লাইন কর্তৃপক্ষকে। জানানো যেতে পারে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ বা সিডব্লুসি-কেও। এভাবে রিপোর্ট করার পর সেই শিশুকে উদ্ধার করে আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া সেরে রাখা হবে হোমে। পরবর্তীতে যদি কেউ এই শিশুকে দত্তক নিতে চান তবে এর জন্য নির্ধারিত প্রক্রিয়ায় আবেদন করতে হবে তাকে। আবেদনের পর সবকিছু যাচাই করে যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদনকারীকে সন্তোষজনক মনে হয় তখন এ নিয়ে রিপোর্ট পেশ করা হবে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে। এর ভিত্তিতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দত্তক নেওয়ার জন্য অনুমতি দেবেন।
তবে এক দফায়ই গোটা জীবনের জন্য অনুমতি দেওয়া হবে না। প্রথম পর্যায়ে এক বছরের জন্য অনুমতি দিয়ে সেই সময়কালে শিশুটিকে কি অবস্থায় রাখা হয়েছে তা নিয়মিত যাচাই করে দেখা হয়ে থাকে। এই পর্ব সন্তোষজনকভাবে পার হলে তবেই মেলে চূড়ান্ত ছাড়পত্র।
কেন এমন ব্যবস্থা, এ নিয়ে চরাই সহ অন্যান্যরা বলেন, দেখা গেছে দত্তক নেওয়া অনেক শিশুকেই পরবর্তী জীবনে অবহেলার শিকার হওয়া বা সেই পরিবারের সূত্রে প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমনও হয়ে থাকে, পরিত্যক্ত শিশুকে কোলে তুলে নেওয়া লোকেদের ভালোভাবে লালন পালনের সেই সংগতিও থাকে না। তাই শিশুদের ভবিষ্যৎ জীবন যাতে সুরক্ষিত হয় এবং তাদের কোনও অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে না হয়, এর জন্য যারা দত্তক নিতে আগ্রহী হয়ে থাকেন আগে তাদের সবকিছু যাচাই করে দেখা হয়। সিডব্লুসি-র চেয়ারপার্সন সুজিত কুমার নাথ বলেন, ডা: সঙ্গীতা দত্তের পরিবারের ঘটনাটা খুবই উদ্বেগ জনক। এমন ঘটনা এড়াতে সমাজেরও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসা উচিত।
এদিকে এক বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ পর্যন্ত কাছাড়ে সব প্রক্রিয়া সেরে ২ শিশুকে দত্তক নেওয়া হয়েছে। আর ২০১৯-২০ থেকে ধরে এপর্যন্ত কাছাড়ে বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার হওয়া বা নির্যাতনের শিকার সহ অন্যান্য কারণে সিডব্লুসি-র তত্ত্বাবধানে এসেছে ৪৩১টি শিশু। এর মধ্যে ছেলের সংখ্যা ১৯৫ এবং মেয়ে ২৩৬। তবে বর্তমানে এদের মধ্যে ৩৪টি শিশু রয়েছে সিডব্লুসির তত্ত্বাবধানে। বাকিদের পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে তাদের অভিভাবক বা সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের হাতে। আর যে ৩৪টি শিশু এখনও রয়ে গেছে, এর মধ্যে ২৪টি শিশু রয়েছে হোমে।