অনলাইন ডেস্ক : অসম বিধানসভা ভবনটি অত্যাধুনিক, ঐতিহ্য এবং কলা ও সংস্কৃতির সংমিশ্রণে তৈরি হয়েছে৷ গৌরবের সঙ্গে প্রায় পাঁচ দশক অতিক্রমকারী অসম বিধানসভার আজ ঠিকানা নতুন ভবন৷ বিধানসভার এই নতুন ভবন আত্মনিৰ্ভর অসমের সাক্ষী হয়ে থাকবে৷ আজ উত্তরপূর্বীয় রাজ্যগুলির কাছে এক ঐতিহাসিক দিন৷ এ কথাগুলি বলেছেন লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লা৷
সূচি অনুযায়ী অসম বিধানসভার অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ যথাক্রমে বিশ্বজিৎ দৈমারি ও ডা. নোমল মমিন, মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা, কেন্দ্রীয় দুই মন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল ও রামেশ্বর তেলি, রাজ্যের সব মন্ত্রী ও বিধায়ক, বিরোধী দলনেতা দেবব্রত শইকিয়া সহ বহু বিশিষ্টজনদের সঙ্গে নিয়ে রবিবার সকাল ১১:০৫টায় প্রায় ৩৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে নবনির্মিত অসম বিধানসভা ভবনের দ্বারোদ্ঘাটন করেন লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লা। নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেছেন বিধানসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, বেশ কয়েকজন প্রাক্তন বিধায়কও।
তিনি অসমের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী লোকপ্রিয় গোপীনাথ বরদলৈয়ের স্মৃতিচারণ করে বলেন, বস্তুত তাঁর প্রচেষ্টায় অসম আজ সুরক্ষিত স্থানে অবস্থান করছে। পরবর্তী সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রীদের অবদানকেও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছেন বিড়লা। তিনি বলেন, ‘রাজ্য বিধানসভাকে কেবলমাত্র একটি সুদৃশ্য ও অত্যাধুনিক ভবন বলে ভাবলে হবে না। বিধানসভা হল গণতন্ত্রের মন্দির। এই মন্দিরে বসে আমরা, সে-দেশই হোক, কিংবা রাজ্য, সর্বস্তরের জনসাধারণের কল্যাণে নীতি-নির্ধারণ করি। এজন্যই ৭৫ বছরের অমৃতকালে আমরা গণতন্ত্রের মাধ্যমে দেশকে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছি। অতএব সংসদ বা বিধানসভার মান-সম্মান মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার, বলেন লোকসভার অধ্যক্ষ।’
তিনি বলেন, ‘নবনির্মিত বিধানসভা ভবনের লক্ষ্য হবে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের সঠিকভাবে বাস্তবায়ন, ন্যায়নীতির প্ৰতিষ্ঠা, ইচ্ছাশক্তিকে ক্ৰিয়া শক্তিতে, সংকল্পকে সিদ্ধির মাধ্যমে সংযোজন করার এক গুরুত্বপূৰ্ণ ভূমিকা গ্রহণ। অসমের মহান মনিষীগণ, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিতে এই বিধানসভা ভবন গুরুত্বপূৰ্ণ ভূমিকা গ্ৰহণ করবে।’ লোকসভার অধ্যক্ষ আরও বলেন, ‘এই বিধানসভা ভবনে গৃহীত প্ৰতিটি সিদ্ধান্ত অসমের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আধার হবে। এই বিধানসভা ভবনে গৃহীত প্ৰতিটি আইন বিকশিত অসম গড়বে।’ তিনি বলেন, ‘আজকের এই মূহূৰ্ত এক ঐতিহাসিক মূহূৰ্ত। অসমের নতুন বিধানসভা ভবন উদ্বোধন করে যারপরনাই আনন্দিত অনুভব করছি।’
অবিভক্ত অসমের রাজধানী যখন শিলঙে ছিল, তখন সেখানে কীভাবে বিধানসভা স্থাপিত হয়েছিল, সেই ইতিহাসও সংক্ষেপে তাঁর বক্তব্যে পেশ করেছেন ওম বিড়লা। তিনি ওই স্বৰ্ণময় ইতিহাসকে স্মরণ করে বলেন, দেশ স্বাধীনতা লাভ করার আগে ১৯৩৭ সালে অসম বিধানসভা অস্তিত্ব লাভ করেছিল এবং এর প্ৰথম অধিবেশন যে ভবনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তাতে আজ শিলঙে মেঘালয় বিধানসভা অবস্থান করছে। স্বাধীনতার পর অসম থেকে বিভক্ত হয়ে বহু নতুন রাজ্য গঠন হয়েছে। প্রায় ৫০ বছর আগে, অৰ্থাৎ ১৯৭২ সালে শিলং থেকে দিশপুরে (গুয়াহাটি) রাজধানী স্থানান্তরিত হয়। সে সময় ১৯৭৩ সালের ১৬ মার্চ থেকে জনতা ভবন-এ অসম বিধানসভার কাজকর্ম চলছিল। শিলং থেকে গুয়াহাটির দিশপুর, দীর্ঘ ওই পরিক্ৰমা গণতান্ত্ৰিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূৰ্ণ স্থান লাভ করেছে।
তিনি বলেন, ‘অসম বিধানসভার নতুন ভবনে বৃহত্তর অসমিয়া জাতির কলা-সংস্কৃতি সহ সব জাতি-জনগোষ্ঠীয় সংস্কৃতির রূপরেখা দেখে অভিভূত আমি। বিড়লা বলেন, নতুন ভবন অসমের বিকাশে সংকল্প সিদ্ধি তথা আত্মনিৰ্ভর অসম গড়ার সাক্ষী হয়ে থাকবে। আজি এই নতুন ভবন উদ্বোধন হয়েছে ঠিক, কিন্তু অসম বিধানসভার পুরনো ভবন থেকে অসমের গণতান্ত্ৰিক যাত্ৰায় যে গুরুত্বপূৰ্ণ ভূমিকা ছিল তা আমাদের বিস্মৃত হলে চলবে না। পুরনো বিধানসভা ভবনও বিভিন্ন যুগান্তকারী বিল তথা আইনের প্রণয়নের সাক্ষী। ওই ভবন থেকেই অসমের জনতার কল্যাণে বহু আইন প্ৰণয়ন হয়েছে। স্বাধীনতার পর ৭৫ বছরে অসমে যে আৰ্থ-সামাজিক পরিবৰ্তন হয়েছে, তা ওই পুরনো বিধানসভা ভবনের মাধ্যমেই হয়েছিল, বলে, লোকসভার অধ্যক্ষ।’
লোকসভার অধ্যক্ষ বলেন, নতুন বিধানসভা ভবনটি আজকের সময়ের আহ্বান। এতে বৰ্তমান সময়ের আবশ্যকতা, আধুনিক প্ৰযুক্তি ইত্যাদির সঙ্গে অত্যাধুনিক দৃশ্য-শ্ৰাব্য সুবিধাবলি সংযুক্ত। এর অধিকাংশ কাজ এখন থেকে হবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। তিনি বলেন, ‘ভারত আজ বৈশ্বিক গণতন্ত্ৰের সৰ্বপ্ৰমুখ আধার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। গণতন্ত্ৰ আমাদের জন্য কেবল সরকার গঠন ব্যবস্থা নয়, এটা আমাদের সংস্কার, আমাদের পরম্পরা, জীবনশৈলী। তাই আজ গোটা বিশ্ব গণতন্ত্ৰকেই শাসন চালানোর সৰ্বশ্ৰেষ্ঠ পদ্ধতি হিসেবে মেনে নিয়েছে।’ লোকসভার অধ্যক্ষ বিড়লার আগে অনুষ্ঠানে বক্তব্য পেশ করেছেন অসম বিধানসভার অধ্যক্ষ বিশ্বজিৎ দৈমারি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল এবং মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা।