অনলাইন ডেস্ক : ছিল না বড় কোনও আনুষ্ঠানিকতা। খোলা মঞ্চ। সাদামাটা সাজগোজ। তারপরও বলবো অভিন্ন একটা আয়োজন। যেখানে ডান – বাম, ক্রীড়া – অক্রীড়ক, সংস্কৃতি – সবাই যেন মিলেমিশে একাকার। সম্মান, আবেগ, প্রশংসার বহরে আবারও এক বর্ষসেরা অনুষ্ঠানের আয়োজন করল কাছাড় বাকস। যেখানে ছোট্ট সুদীপ্ত পাল থেকে শুরু করে বর্ষীয়ান সীতাংশু দাস একই মঞ্চ শেয়ার করলেন।
জন্মলগ্ন থেকে এই ২৫ টা বছর। প্রত্যেকবারই ক্রীড়াক্ষেত্রে জেলার কৃতিদের সম্মানিত করেছে বরাক উপত্যকা ক্রীড়া সাংবাদিক সংস্থা ( বাকস )। এবারও এর কোনও হেরফের হল না। শহরের এক বেসরকারি হোটেলের কনফারেন্স হলে দর্শকঠাসা সমাবেশে আয়োজিত হয় এই বর্ষসেরা অনুষ্ঠান। এতে খেলাধুলার জগতের লোক থেকে শুরু রাজনীতির কুশিলব – কেউই বাদ জাননি। ডান – বাম, বন্ধু – শত্রু, সবই যেন নিরাকার বাকসের এই ইভেন্টে। একেবারে পাশাপাশি আসনে বসেছিলেন বিজেপির শিলচরের বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী এবং সোনাইর এআইইউডিএফ বিধায়ক করিম উদ্দিন বড়ভূঁইয়া ( সাজু )!! ছিল না কোনও দ্বন্দ্ব না ছিল কোনও রাজনীতির ক্লেশ। স্বভাবজাত উজ্জ্বল আলাপে একে অপরের প্রশংসা করলেন আবার খেলাধুলার জগতে দাপিয়ে বেড়ানো কুশিলবদের হাতে পুরস্কারও তুলে দেন। নিজের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে করিম উদ্দিন বলেন,’ রাজনীতির বাইরেও আমাদের একটা পৃথিবী রয়েছে। খেলাধুলার জগতে আমরা সবাই এক। প্রিয়া দেবীর মত এশিয়ান গেমসে অংশগ্রহকারীকে যেভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে সেজন্য প্রশংসার দাবি রাখে বাকস।’ একইভাবে বাকসের জন্য প্রশংসার বাক্য উচ্চারিত হয় ডিআইজি কঙ্কনজ্যোতি শইকিয়া এবং জেলা পরিষদ সিইও আর কে লস্কর। নিজের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে এডিসি যুবরাজ ঠাকুর বলেন,’ নিজেদের স্বাস্থ্যবান রাখার জন্য খেলাধুলার কোনও বিকল্প নেই। তাই সরকার খেল মহারণের মাধ্যমে খেলোয়াড়দের বিকাশে তৎপর হয়েছে। ‘ বাকসের অন্যতম উপদেষ্টা দৈনিক সাময়িক প্রসঙ্গের সম্পাদক তৈমুর রাজা চৌধুরী বলেন,’ বাকস হল আমার প্রাণপ্ৰিয় সংগঠন। তাই প্রচুর ব্যস্ততার মধ্যেও এই অনুষ্ঠানে সাড়া না দিয়ে পারিনি। সত্যি কথা বলতে বাকস হল ব্যতিক্রমী সংগঠন। স্বচ্ছতাই তাঁদের মূলমন্ত্র। এখানে বড় ছোট বলে কিছু নেই। সবাই এক। ফলে সর্বদা তাঁদের সঙ্গে থাকবো, এতটুকু কথা দিতে পারি। ‘
১৫ জন ক্রীড়াবিদের পাশাপাশি হানঝউ এশিয়ান গেমসে সেপাকটাকরোতে দেশের প্রতিনিধিত্বকারী প্রিয়া দেবী, সেরা ক্রীড়াসংগঠক সীতাংশু দাস এবং বর্ষীয়ান দুই চিত্রসাংবাদিক সুদীপ সিং এবং হিমাংশু দেকে সংবর্ধনা জানানো হয় বাকসের পক্ষ থেকে। আয়ুস্মিতা দাসের সরস্বতী বন্দনা নৃত্য দিয়ে বর্ষসেরা অনুষ্ঠানের সূচনা হয়েছিল। এরপর একে একে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় বর্ষসেরাদের হাতে। মাঝে আবার ছিল তরুণ সংঘের মেয়েদের গান। তাঁদের কৃষ্ণ পদাবলী এবং কীর্তন যথেষ্ট প্রশংসা কুড়িয়ে নেয়।
পুরস্কার বিতরণের ফাঁকে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন শিলচরের বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী। তিনি বলেন,’ নিষ্ঠা এবং সততা রয়েছে বলেই একটা সংস্থার স্থায়িত্ব ২৫ বছর ধরে রয়েছে। এই স্থায়িত্বের জন্য প্রশংসার দাবি রাখে বাকস। ক্রীড়া সাংবাদিকদের জন্য একটা কথা বলবো, সাংবাদিকতা পেশা নয় নেশা। তাই সমাজ সাংবাদিকদের শ্রদ্ধার চোখে দেখে থাকে। খেল মহারণের মাধ্যমে রাজ্যে খেলাধুলার উন্নতিতে বিরাট একটা প্রকল্প হাতে নিয়েছে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সরকার। তাছাড়া শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার পরিকাঠামোগত উন্নয়নেও দশ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে সরকার। পাঁচ কোটি টাকা ইতিমধ্যে রিলিজও হয়েছে। বুঝে উঠতে পারছি না কেন এখনো কাজ শুরু হয়নি। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমার মেয়াদ শেষ হতে হতে ডিএসএর গ্যালারির কাজ শেষ করব। ‘ ক্রীড়া সংগটক বাবুল হোড় বলেন,’ জন্মলগ্ন থেকেই বাকস -র সঙ্গে আমার সম্পর্ক রয়েছে। বেশ ভাল একটা সংগঘটন। ক্রীড়াক্ষেত্রে তাঁদের অবদানকে অবহেলা করা যাবে না। ‘ নিজের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে আবেগের সুরে বর্ষসেরা ক্রীড়া সংগঠক সীতাংশু দাস বলেন,’ এই সম্মানে আমি আপ্লুত। তা সারাজীবন মনে থাকবে। এই কৃতিত্ব আমার একার নয়, পুরো ধলাই মাতৃভূমি ক্লাবের। তাছাড়া ক্রীড়া সাংবাদিকদের প্রচারের জন্যই এতদূর এগোতে পেরেছি।’ এছাড়াও বক্তব্য রাখেন নীলোৎপল চৌধুরী, কাছাড় সেপাকটাকরো সংস্থার সভাপতি আর কে সোনায়াল, কাছাড় বাকস সভাপতি দেবাশীষ সোম, সচিব অভিজিৎ ভট্টাচাৰ্য, ডিআইজি কঙ্কনজ্যোতি শইকিয়া, রূদ্রনারায়ণ গুপ্ত।