অনলাইন ডেস্ক : আদালতে মামলা চলাকালীন অবস্থায়ও শিলচর পুরসভা হুমকি দিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বর্ধিত হারে ট্রেড লাইসেন্স ফি আদায় করতে চাইছে। যা আদালত অবমাননা বলে অভিমত ব্যক্ত করে ব্যবসায়ীদের এই হুমকির কাছে মাথা নত না করার আবেদন জানিয়েছে প্রগতিশীল নাগরিক সমন্বয় মঞ্চ।
পুরসভায় নির্বাচিত বোর্ড না থাকা অবস্থায়ও
বিভিন্ন কর সহ ফি ও আবেদনপত্রের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বেশ কিছুদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে নাগরিক সমন্বয় মঞ্চ। আন্দোলনের পাশাপাশি এনিয়ে গৌহাটি হাইকোর্টে এক রিট পিটিশনও করা হয়েছে। শুক্রবার এক সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে মঞ্চের কর্মকর্তারা উষ্মা ব্যক্ত করে বলেন, সাম্প্রতিক কালে তাদের নজরে পড়েছে পুরকর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ীদের কাছে হুমকি দিয়ে নোটিশ পাঠিয়েছেন। যারা বর্ধিত ফি দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স নবীকরণ করাতে রাজি হচ্ছেন না তাদের কাছে নোটিশ পাঠানো হয়েছে, আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে লাইসেন্স নবীকরণ না করালে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ সহ তাদের বিদ্যুৎ সংযোগ ও জল সংযোগ কেটে দেওয়া হবে।
মঞ্চের কর্মকর্তা আইনজীবী ধ্রুব কুমার সাহা বলেন মামলা চলা অবস্থায় পুরসভা এভাবে নোটিশ জারি করতে পারে না। তাও আবার বিদ্যুৎ সংযোগ ও জল সংযোগ কেটে দেওয়ার মতো হুমকি। ট্রেড লাইসেন্স নবীকরণ না করালে এমন হুমকি দেওয়া যায় না কোনও অবস্থায়ই।
ধ্রুববাবু বলেন, মঞ্চ শীঘ্র পুরসভার নির্বাচন করানো সহ বর্ধিত কর ও ফি প্রত্যাহারের জন্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন করার পর গত ৪ অক্টোবর প্রথম শুনানির দিন ধৈর্য হয়। সেদিন আদালত পুরসভা তথা সরকার পক্ষের আইনজীবীকে লিখিতভাবে তাদের জবাব পেশ করতে বলে। এর জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয় ৪ নভেম্বর পর্যন্ত। তবে ৪ নভেম্বর পুরসভা তথা সরকার পক্ষের আইনজীবী লিখিত কোনও জবাব না দিয়ে আরও সময় চেয়ে নেন। এভাবে আরও কয়েক দফা নির্ধারিত দিনগুলোতে পুরসভা তথা সরকার পক্ষের আইনজীবী সময় চাওয়ার পর এবার শুনানির দিন ধার্য হয়েছে আগামী ৮ জানুয়ারি।
এসব তথ্য তুলে ধরে ধ্রুববাবু বলেন, একদিকে পুরসভা আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী লিখিত জবাব না দিয়ে অতিরিক্ত সময় চেয়ে নিচ্ছে বারবার। এর বিপরীতে আবার ব্যবসায়ীদের হুমকি দিয়ে বিচারাধীন সেই বিষয় অর্থাৎ বর্ধিত ট্রেড লাইসেন্স ফি আদায় করে নিতে চাইছে। এটা আদালত অবমাননা ছাড়া আর কিছু নয়। আগামী শুনানির দিনে আদালতের কাছে এসব তুলে ধরা হবে বলে তিনি জানান। ধ্রুববাবু সঙ্গে বলেন, পুরসভার হুমকিতে ভীত হওয়ার কোনও কারণ নেই ব্যবসায়ীদের। তারা যেন বর্ধিত হারে ফি দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স নবীকরণ না করানোর অবস্থানে অনড় থাকেন। কারণ পুরসভা বিভিন্ন কর ও ফি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোনও লিখিত বিজ্ঞপ্তি জারি করেনি। যার দরুন বারবার ওই পক্ষ থেকে আদালতে লিখিতভাবে
জবাব না দিয়ে অতিরিক্ত সময় চাওয়া হচ্ছে। তাই শেষপর্যন্ত পুরসভার কর ও ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ধোপে টিকবে না। তিনি আরও বলেন, এবার পুরনিগম গঠনের জন্য চূড়ান্ত বিজ্ঞপ্তি জারির পর মনে হচ্ছে গোটা মামলা নিয়ে পুরসভা একটা ন্যাক্কারজনক খেলা খেলতে চাইছে। যেহেতু কর ও ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিল সহ নির্বাচন করানোর জন্য আদালতে মামলা করা হয়েছে, তাই এবার নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করে হয়তো বলা হবে মামলা অবান্তর হয়ে পড়েছে। এভাবে হয়তো কর ও ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে বাতিলের আর্জিও যাতে বিচারের বাইরে চলে যায় সেই অপচেষ্টা চালানো হবে। তবে মঞ্চ এনিয়ে সতর্ক রয়েছে। পুরসভা এই অপচেষ্টা চালালেও তা সফল হতে দেওয়া হবে না।
অন্য কর্মকর্তা কিশোর ভট্টাচার্য, নন্দ দুলাল সাহা , অরিন্দম দেব ও মলয় দত্তরা বলেন, মঞ্চের আহবানে সাড়া দিয়ে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীই বর্ধিত হারে ফি দিয়ে লাইসেন্স নবীকরণ করাতে রাজি হননি। তাই পুরসভা এবার হুমকির পন্থা নিয়েছে। তারাও ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে পুরসভার হুমকির কাছে মাথা নত না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, পুরসভা যা করছে তা অবশ্যই আদালত অবমাননা। সীমান্ত ভট্টাচার্য বলেন, কর এবং ফি বৃদ্ধি নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মতামত কি তারা যেন তা তুলে ধরেন প্রকাশ্যে ।