অনলাইন ডেস্ক : সব্জির মূল্যবৃদ্ধির জেরে গত কিছুদিন ধরে প্রতিটি বাড়িতেই হেঁসেল “ম্যানেজমেন্ট” হয়ে পড়েছে খুবই মুশকিল। “মাইক্রো” পরিবারের জমানায় সব্জিকে ঘিরে পারিবারিক অর্থনীতিতে যতটা প্রভাব পড়েছে সংখ্যাধিক্যের দরুন স্কুলের রান্নাঘর কেন্দ্রিক অর্থনীতিতে এই সমস্যা বা টানাটানি অনেক বেশি। তবে এই সমস্যা খুব একটা বেশি দিন স্থায়ী হবার নয়। বর্তমান মরশুম পার হয়ে শরতের আগমন ঘটলেই সবজি অনেকটাই সস্তা হয়ে যাওয়ার কথা।
এভাবে সব্জি কেন্দ্রিক আর্থিক টানাটানির একটা সুরাহার রাস্তা দেখা গেলেও ডিম যেন স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের কাছে হয়ে উঠেছে বারোমাসি সমস্যা।
সরকার “মিড ডে মিল” প্রকল্পের জন্য প্রাথমিক স্কুলের (পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত) একেক জন পড়ুয়া পিছু বরাদ্দ করে থাকে ৫ টাকা ৪৫ পয়সা। আর এম ই স্তরের পড়ুয়াদের (ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী) জন্য ৮ টাকা ১৭ পয়সা। চাল অবশ্য সরবরাহ করা হয় পৃথকভাবে। বরাদ্দ অর্থ দিয়ে সংগ্রহ করতে হয় খাবারের আনুসাঙ্গিক সামগ্রী। “মিড ডে মিল”-এর গাইডলাইন অনুযায়ী সপ্তাহে একদিন পড়ুয়াদের ডিম খাওয়ানো বাধ্যতামূলক। এই একদিন ডিম খাওয়াতে গিয়ে বর্তমানে প্রধান শিক্ষকদের গুনতে হচ্ছে পকেটের অর্থ।
বর্তমানে এ অঞ্চলের বাজারে এক একটি পোল্ট্রি ডিম বিক্রি হয় গড়ে সাড়ে ৭ টাকায়। একসঙ্গে বেশি ক্রয় করলে কিছুটা কম হয় মূল্য। এম ই স্তরের শিক্ষক শিক্ষিকাদেরই পড়ুয়া পিছু বরাদ্দ ৮ টাকা ১৭ পয়সা দিয়ে যেখানে পোষানোটা মুশকিল হয়ে দাঁড়ায় সেখানে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অবস্থা খুবই সঙ্গীন। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কথায়, ৭ থেকে সাড়ে ৭ টাকায় ডিম কেনার পর তেল-মসলা ইত্যাদিরওতো যোগান দিতে হয়। তাই এম ই স্তরে ৮ টাকা ১৭ পয়সা বরাদ্দের পরও চলতে হয় টেনেটুনে। সেখানে প্রাথমিক স্তরে ৫ টাকা ৪৫ পয়সা পেয়ে কিভাবে সাড়ে ৭ টাকায় ডিম কিনে খাওয়ানো সম্ভব। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে পকেটের অর্থ গুনেই খাওয়াতে হচ্ছে ডিম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলার কাটিগড়া এলাকার প্রাথমিক স্কুলের এক শিক্ষক জানান, প্রকল্প যখন শুরু হয়েছিল তখনকার হিসেবে ৫ টাকা ৪৫ পয়সা বরাদ্দ ঠিকই ছিল। কিন্তু এ অঞ্চলে ডিমের মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছে অনেক দিন। আগে তারা পড়ুয়াদের সংখ্যা কিছুটা বেশি দেখিয়ে অতিরিক্ত এই ব্যায় মিটিয়ে নিতেন। ব্যাপারটা দুর্নীতি বা অনিয়ম জেনেও আর্থিক টানাটানি মেটাতে বাধ্য হয়ে এমনটা করতেন তারা। কিন্তু বর্তমানে পোর্টাল চালু হওয়ার পর এমনটা করা আর সম্ভব হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে অনেক স্কুলেই অর্ধেক ডিম খাওয়ানো শুরু হয়। কচিকাঁচা পড়ুয়াদের পাত থেকে অর্ধেক ডিম কেড়ে নেওয়া হচ্ছে জেনেও এই ব্যবস্থায় চালিয়ে যাচ্ছিলেন তারা। কিন্তু অর্ধেক ডিম খাওয়ানোয় অনেক স্কুলের প্রধান শিক্ষককেই “শো-কজ”-এর মুখে পড়তে হয়। এরপর আর এই পন্থা অবলম্বনে অনেকেই সাহস পাচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে পকেটের অর্থ খরচ করেই মেটাতে হচ্ছে আস্ত ডিমের ব্যায়।
এ নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষক সংস্থার কাছাড় জেলা কমিটির সভাপতি তথা রাজ্য কমিটির মুখ্য উপদেষ্টা সুদীপ ভট্টাচার্য বলেন, এই সমস্যা নিয়ে বারবার তারা শিক্ষা বিভাগের কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে না। গত বুধবারও সংস্থার রাজ্য কমিটি প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের সঞ্চালককে স্মারকপত্র দিয়ে বরাদ্দ বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত সরকারের তরফে কোনও সাড়া পরিলক্ষিত হচ্ছে না। আর এতে শাস্তির কবলে না পড়ার জন্য শিক্ষক শিক্ষিকারা ডিমের ব্যয় মেটাতে পকেট থেকে গুনে চলেছেন অর্থ।