অনলাইন ডেস্ক : বরাক বিজেপি দলে যেভাবে একের পর এক অঘটন ঘটে চলেছে তাঁতে এই দলের প্রতি মা কাঁচাকান্তি বিমুখ হয়েছেন বলে মন্তব্য করলেন বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায়। বুধবার সাংবাদিকদের সাথে আলাপচারিতায় প্রদীপবাবু বলেন, বরাক বিজেপিতে একের পর এক অঘটন ঘটে চলেছে। মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্যের গাড়ি চালক দশ বছর ধরে নিখোঁজ। তাঁর প্রাসাদোপম বাড়ীতে রাজস্থান থেকে আনা টাইলস লাগাতে গিয়ে নিহত হন এক শ্রমিক। এরপর কালাইনে তাঁর দেহরক্ষীর সাথে দুর্ঘটনায় মারা যান আরেক পথচারী। কিছুদিন আগে কাছাড় বিজেপির কার্যালয়ে পাওয়া গেল একটি মৃতদেহ। যাকে আবার সভাপতি তাঁদের কর্মচারী নয় বলে মন্তব্য করলেন। অথচ মৃতদেহটি পাওয়া গেল তাঁদের অফিসের ভিআইপি কক্ষে। ইদানীং আবার শিলচরের সাংসদের বাড়িতে পাওয়া গেল ১০ বছরের আরেক শিশুর মৃতদেহ। প্রদীপবাবু বলেন, ডিলিমিটেশনের মাধ্যমে যেভাবে গ্রাম শহরকে যথেচ্ছ কাটাছেঁড়া করে জনগনকে চূড়ান্ত দুর্ভোগে ফেলা হয়েছে বোঝা যাচ্ছে এতে মা কামাখ্যা ও মা কাঁচাকান্তি এভাবেই এই দলের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করছেন।
প্রদীপ দত্তরায় এদিন আরো বলেন, বর্তমান বিজেপিতে পুরনো নেতাদের কোনও গুরুত্ব নেই। যে কবীন্দ্র পুরকায়স্থ বরাক থেকে এই দলের যাত্রা শুরু করিয়েছিলেন তিনিই আজ ব্রাত্য। নারায়ন বরকটকী, রমেন ডেকা, সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্যের মতো প্রবীন ও একনিষ্ঠ নেতাদের সম্পুর্ন গুরুত্বহীন করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি বরাকেও যে উদয় নারায়ন গোস্বামী, অজিত ভট্টাচার্যরা একসময় সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন তাঁরাও অভিমানে দল সংগঠন থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছেন। তাই বর্তমানে যে বিজেপি রয়েছে এটি বকলমে কংগ্রেস দল ছাড়া আর কিছু নয়।
প্রদীপ দত্তরায় এদিন বলেন, সাম্প্রতিক ডিলিমিটেশনের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন রাজ্যের এক কোটি বিশ লক্ষ বাঙালি। ৪২ লক্ষ জনসংখ্যার বরাকে যেখানে ন্যুনতম ২০টি বিধানসভা আসন হওয়া উচিত সেখানে আসন সংখ্যা ১৫ থেকে কমিয়ে ১৩টি করে দেওয়া হল। অথচ ২২ লক্ষ জনসংখ্যার বোড়োল্যান্ডের আসন সংখ্যা ১২ থেকে বাড়িয়ে ১৫ করা হল। রাজ্যে ৮৬০০০ সরকারি চাকরি হল অথচ তাঁতে বরাক থেকে নিযুক্তি একহাজারও হয়নি বলে মনে করছেন স্থানীয় জনগন। এনার্সি করে ১৯ লক্ষ বাঙালির নাগরিকত্ব ঝুলিয়ে রাখা হল। আজো ডি নোটিশ ইস্যু হয় বাঙালির নামে। বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক বলেন, শিলচর লোকসভা কেন্দ্রটি বাঙালি অধ্যুষিত এবং এখান থেকে নীহার লস্কর, রশিদা হক চৌধুরী, সন্তোষ মোহন দেব, কবীন্দ্র পুরকায়স্থ প্রমুখ বহু বাঙালি সাংসদ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছেন। রাজদীপ রায় যদি দ্বিতীয়বার এই কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হতেন তবে তিনিও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীত্বের দাবিদার হতেন। কিন্তু শিলচর আসন সংরক্ষিত করে সেই সুযোগও চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া হল।
প্রদীপবাবু বলেন, এসবের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে আর আসামের সাথে এই উপত্যাকার থাকার কোনও মানে হয়না। তাই অনতিবিলম্বে বরাক পৃথকীকরণের দাবিতে তাঁরা আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। এদিন বিডিএফ মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক হৃষীকেশ দে, মুখ্য আহ্বায়ক জয়দীপ ভট্টাচার্য, আইনজীবী ভাস্কর ভট্টাচার্য, যুবফ্রন্ট সদস্য দেবায়ন দেব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।