অনলাইন ডেস্ক : ‘বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট একটি অস্তিত্বহীন দল। যে দলের কোনও অস্তিত্ব নেই, বা যারা মানুষের বিপদে এগিয়ে আসে না, সেসব সংগঠন কোন অধিকারে বরাক বনধের ডাক দিয়েছে?’ এভাবেই বিডিএফকে তুলোধুনো করেছে বরাক উপত্যকা কৈবর্ত সমাজ উন্নয়ন পরিষদ। শনিবার সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি সহ জেলার দশটি ব্লকের সভাপতি ও সম্পাদকরা এক সভায় মিলিত হয়ে বরাক বনধের বিরোধিতা করেছেন।
এদিন শিলচরে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে পরিষদের কর্মকর্তারা ডিলিমিটেশনের খসড়ার সমর্থনে এসসি সম্প্রদায়ের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এ নিয়ে প্রতিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। পরিষদের কর্মকর্তারা জানান, শনিবার আয়োজিত মতবিনিময় সভায় আগামী দিনের রূপরেখা তৈরি করার পাশাপাশি ডিলিমিটেশনের পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন তাঁরা। পরিষদের সভাপতি সুজিত দাস চৌধুরী জানান, ডিলিমিটেশন খসড়া তালিকা নিয়ে যারা বিরোধিতা করছেন এতে উপত্যকার উন্নয়নে বাধার সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, রাজ্যে লোকসভা এবং বিধানসভা কেন্দ্রের সীমানা পুনর্নির্ধারণ তো ২০০৭ সালেই হওয়ার কথা ছিল। দেরিতে হলেও বর্তমান রাজ্যের হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সরকার এ বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছে। অতি সম্প্রতি ডিলিমিটেশনের খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে। এই খসড়ার সামগ্রিক দিক পর্যালোচনা করেই সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিষদ। দীর্ঘ ৪৭ বছর করিমগঞ্জ লোকসভা আসন ছিল তফসিলি সংরক্ষিত।
২০০১ সালের লোকগণনা মতে, এখন করিমগঞ্জের চেয়ে শিলচর লোকসভায় তফসিলি লোকের সংখ্যা বেশি। তাই শিলচর লোকসভাকে তফসিলি সংরক্ষিত করা হয়েছে ডিলিমিটেশনের খসড়ায়। যারা এর বিরোধিতা করছেন তারা আসলেই তফসিলি মানুষের বিরোধী। কেউ কেউ বলছেন, শিলচর তফসিলি সংরক্ষিত হলে বরাকে হিন্দু বাঙালির অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। তবে কী তফসিলিরা ধর্মে হিন্দু এবং জাতিতে বাঙালি নন, সেই প্রশ্ন তুলে সুজিত বলেন, ডিলিমিটেশন নিয়ে কিছু লোক বিভ্রান্ত ছড়াচ্ছেন। শিলচরকে তফসিলি করায় তাদের কেন গাত্রদাহ হচ্ছে, সেটাই বোধগম্য হচ্ছে না। এতদিন তো শিলচর ছিল সংরক্ষণ মুক্ত। তফসিলিরা তো কোনদিন শিলচর লোকসভাকে তফসিলি সংরক্ষিত করার দাবি করেননি। দ্বিধাহীন ভাবে ভোট দিয়ে গেছেন তফসিলি মানুষ। এখন যখন তফসিলিরা নেতৃত্ব প্রদানের সুযোগ পাচ্ছেন, তখন বিরোধিতা করছেন শাসকদলের নেতারা। যা দুর্ভাগ্যজনক। এছাড়া বরাক বনধ বা বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিবাদ করছেন অনেকে, এসব বিরোধিতা করে কোনও লাভ হবে না বলে দাবি করেন সুজিত।
ডিলিমিটেশনের খসড়া নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে পরিষদের উপদেষ্টা ব্রজেন্দ্র দাস বলেছেন, শিলচরকে এসসি সংরক্ষিত করার বিরোধিতা যে করবে, সে কংগ্রেস হোক আর বিজেপি বা অন্য কোন সংগঠন, এর বিরুদ্ধে অবশ্যই রুখে দাঁড়াবে পরিষদ। তাই বিডিএফের ডাকা বনধের তীব্র বিরোধিতা করবে পরিষদ। শনিবার শিলচর চেংকুড়ি রোডে বরাক উপত্যকা কৈবর্ত সমাজ উন্নয়ন পরিষদের এক সভায় ডিলিমিটেশন বিরোধীদের বিরোধিতায় সরব হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে পথে নেমে প্রতিবাদ করবেন তারা। পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুজিত দাস চৌধুরীর পৌরোহিত্যে সভায় উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা অঞ্জন চৌধুরী, সুধাংশু কুমার দাস, ব্রজেন্দ্র কুমার দাস, পরিষদের তাপাঙ ব্লক সভাপতি হীরেন্দ্র দাস, গুণমণি দাস, বড়খলার সভাপতি লালবাসী দাস, বড়জালেঙ্গার সভাপতি বিজয় দাস, শিলচর ব্লক সভাপতি অশোক সরকার, শিলচর শহর সভাপতি অর্জুন চৌধুরী, উধারবন্দের সভাপতি নেপাল চন্দ্র দাস, সজলকান্তি দাস, কুলেন্দ্র দাস সহ শতাধিক কর্মকর্তা।