অনলাইন ডেস্ক : বার্মিজ সুপারি নিয়ে গোটা উপত্যকা যখন জেরবার, তখন আবিষ্কার হল আরেক কাণ্ড। এবার ধরা পড়ল বার্মিজ গরু! তা-ও এক দু’টি নয়, পুরো সতেরোটি ইয়া মস্ত গরু। কাটিগড়া পুলিশ মঙ্গলবার এই নয়া কারবারের হদিশ পায়। খবর পেয়ে ছুটে আসেন পুলিশ সুপার নুমোল মাহাত্তা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার সেন। এসপি বললেন, গরু কারবারিদের দু’এক দিনের মধ্যেই পাকড়াও করা হবে। সুত্র মতে, পুরো বরাকে রয়েছে বার্মিজ গরুর এক বড়সড় সিণ্ডিকেট। চলছে দেদার কারবার।
বার্মিজ সুপারি ব্যবসা নিয়ে এই উপত্যকায় নতুন করে তথ্য দেওয়ার কিছু নেই। এই ব্যবসা নিয়ে অনেকের ল্যাজেগোবরে অবস্থা হয়েছে। নাছোড়বান্দা পুলিশও বার্মিজ সুপারি কারবারিদের দমাতে কার্যত কোমর কষে মাঠে রয়েছে। যদিও একাংশের অভিযোগ, এক শ্রেণির পুলিশের মদত ছাড়া এমন ব্যবসার পথে হাঁটার সাহস করতেন না কালো কারবারিরা। তাছাড়া বার্মিজ সুপারি ধরার নামে এবছর স্থানীয় সুপারি ব্যবসায়ও বারোটা বেজেছে। যা নিয়ে এরাজ্যে কম রাজনীতিও হয়নি। এখনও চলছে!
এসব ডামাডোলের মধ্যেই মঙ্গলবার কাটিগড়া থানার অদূরবর্তী লাঠিমারা থেকে ধরা হল ১৭টি গরু। যেগুলি এ অঞ্চলের গরু থেকে বেশ খানিকটা বড়ো। উচ্চতা এবং সাইজে এখানকার গরু থেকে দ্বিগুণ হবে। জানা যায়, এদিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ লাঠিমারার মাঠে বিদেশি গরু ছয়লাপ হয়ে আছে বলে কাটিগড়া পুলিশের কাছে খবর আসে। গোপন এই খবর পেয়ে তড়িঘড়ি পুলিশ ছুটে যায় লাঠিমারায়। প্রথমে তিনটি গরু থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। পরে তারা জানতে পারে আরও গরু রয়েছে সেখানে। তাই আবার ছুটে যায় পুলিশ। তখনই মেলে আরও ১৪টি গরু। লাঠিমারা, চেরাগী হয়ে গরু নিয়ে তখন রওনা দেয় পুলিশ দল। গরুর মস্ত বড় দল নিয়ে বন্দুকধারী পুলিশকে রাজপথ দিয়ে আসার দৃশ্য অনেকেই তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেন। একসময় কাটিগড়া থানা চত্বর ‘গরুময়’ হয়ে ওঠে। ভিড় লাগে উৎসুক জনতার।
এদিকে এতো বেশি সংখ্যক গরু ধরা পড়ার খবর পেয়ে শিলচর থেকে কাটিগড়া ছুটে আসেন পুলিশ সুপার নুমোল মাহাত্তা। সঙ্গে এএসপি সুব্রত কুমার সেন। তাঁরা এসে গোটা ব্যাপার অবগত হন। পরে এসপি নুমাল মাহাত্তা সাংবাদিকদের জানান, বহির্রাজ্য থেকে গরু পাচারের খবর ছিল পুলিশের কাছে। ওই গরুগুলি বিদেশে পাচার হয় হয় বলেও জানতে পারেন তারা। একদল লোক ওই কুকাজে জড়িত রয়েছে। পুলিশ খবর পায়, একটি চক্র কাছাড়ের মাটি ব্যবহার করে গরুর ওই বড়সড় দল লাঠিমারা, চেরাগিতে এনে মজুত রেখেছে। এরপরই পুলিশ ছুটে গিয়ে গরুগুলো উদ্ধার করে। কাছাড়ের পুলিশ সুপার আরও বলেন, গরুগুলো দেখে মনে হচ্ছে এগুলো বার্মিজ। বার্মা থেকে তা আনা হয়েছে। তবে যে বা যারা এই চক্রে জড়িত, তাদের দু’এক দিনের মধ্যে পাকড়াও করা হবে। খবর মতে, উদ্ধার হওয়া গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে শিলচর থেকে পশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়ে আসা হয়। তিনি প্রাথমিক চিকিৎসা করার পর বিকেলে ১৭টি গরুকে খোঁয়াড়ে নিয়ে রাখা হয়েছে।
এদিকে, গরুর এই বৃহৎ চক্র ফাঁস হওয়ার পর নানা খবর সামনে আসতে শুরু করেছে। সুত্র মতে, বার্মিজ গরু বছর খানেক ধরেই এভাবে পাচার হচ্ছে। মিজোরাম হয়ে গরুর বিশাল দল নিয়ে আসা হয় কাছাড়ের বিভিন্ন স্থানে। সময় সুযোগে এগুলো এখানে-ওখানে পাচার হয়। যায় মেঘালয়, বাংলাদেশেও। এজন্য রয়েছে নিদিষ্ট রুট। জড়িত আছে গরু ব্যবসায় কুখ্যাত বেশ কিছু ব্যক্তিও। এদের রয়েছে এক বড়সড় সিণ্ডিকেট। একেকটা গরুর স্থানীয় বাজারমূল্য লক্ষাধিক টাকা। কোনও কোনও গরু বিক্রি হয় দেড় লাখ টাকায়ও। মংগলবার ধৃত গরুর বাজারমূল্যও একই। সুত্র জানান, চেরাগি বা লাঠিমারায় দু’দিন আগে আনা হয় এই গরুর দল। বরাক নদীর ওপার থেকে নদীপথে এপারে আসে গরু। এতে সঙ্গ দেয় বদরপুরের আরেকদল গো-কারবারি। সোনাই, ধলাই এলাকায়ও আছে টিম মেম্বার। অভিযোগ, পুলিশ বার্মিজ গরু পাচার নিয়ে সরব হলেও বিষয়টি তাঁদের একেবারে অজানা নয়। কিংবা পুলিশের কাছে এটা নতুন কোনও খবর নয়। ধলাই, শিলচর, বড়খলা, কাটিগড়া, কালাইন, গুমড়া, পাঁচগ্রাম, বদরপুর, আলগাপুর, লালা, কাটলিছড়া, রামনাথপুর ইত্যাদি থানার সংগে গো-কারবারিদের দহরম মহরম ওপেন সিক্রেট! তাই স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন ওঠেছে, বার্মিজ গরু এতটা পথ পেরিয়ে কাটিগড়া এল কীভাবে? তাহলে কি এই সিণ্ডিকেটও বার্মিজ সুপারির মতো সুরভি গাভী!