সাময়িক প্রসঙ্গ, হাইলাকান্দি, ২৬ ডিসেম্বর : বরাক উপত্যকা বঙ্গসাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের কেন্দ্রীয় সমিতির উদ্যোগে ও হাইলাকান্দি জেলা সমিতির ব্যবস্থাপনায় সোমবার থেকে সপ্তাহ ব্যাপী নাট্য কর্মশালা শুরু হয়েছে। স্থানীয় বঙ্গভবনে এদিন সন্ধ্যায় কর্মশালার সূচনা করেন প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম রায়। বরাক উপত্যকার বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব তথা প্রশিক্ষক চিত্রভানু ভৌমিকের উপস্থিতিতে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে কর্মশালার সূচনা হয়।
অনুষ্ঠানে অতিতের নাট্য আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ১৩ জন নাট্যকর্মীকে সম্মাননা জ্ঞাপন করা হয়। এদের মধ্যে তিনজনকে মরনোত্তর সম্মান প্রদান করে বঙ্গ সাহিত্য। এরা হলেন- বর্ষীয়ান নাট্য ব্যাক্তিত্ব নেপাল চক্রবর্তী, সুব্রত শর্মা মজুমদার, প্রদীপ দে সেন, বিধুভূষণ দাস, পুষ্পিতা দেব চৌধুরী, দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য, কল্লোল কর পুরকায়স্থ, বিজয় সিংহ দাস, চম্পা দত্ত পুরকায়স্থ, ঋতা চন্দ। এছাড়াও মরনোত্তর সম্মাননা প্রদান করা হয় মিহির চৌধুরী, চন্দন চৌধুরী ও দীপ্তেন্দ্র ভট্টাচার্যকে। মিহির চৌধুরীর হয়ে সম্মাননাপত্র গ্রহণ করেন তাঁর ভাই নীহারেন্দু চৌধুরী। চন্দন চৌধুরীর পক্ষে তাঁর পুত্র কিশলয় চৌধুরী সম্মাননা গ্রহণ করেন। সম্মাননা প্রাপক কয়েকজন শারীরিক কারনে কিংবা বাইরে থাকায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে না পারায় সম্মেলনের পক্ষ থেকে তাদের বাড়িতে পরবর্তীতে মানপত্র পৌছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। সংবর্ধনা হিসেবে উত্তরীয় এবং মানপত্র প্রবীন নাট্য ব্যক্তিত্বদের হাতে আয়োজকদের পক্ষ থেকে তুলে দেন ময়ূরী রায়, পূর্ণিমা রানি দে, শঙ্করী চক্রবর্তী, কবিতা দাস, পিনাকী ভট্টাচার্য, যজ্ঞেশ্বর দেব প্রমুখ।
এর আগে অনুষ্ঠানের মুখ্য অতিথি গৌতম রায় বরাক বঙ্গের এই উদ্যোগের প্রশংসা করে আয়োজকদের সাধুবাদ জানান। পাশাপাশি বাংলা ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি বঙ্গ সাহিত্যের প্রতিজন কর্মীর নিরলস প্রয়াসকে সাধুবাদ জানান। তিনি বলেন, বাংলা সংস্কৃতির কর্মযজ্ঞে বরাবরই সামিল ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। আগামী দিনেও তিনি সর্বতো সাহায্য সহযোগিতা করে যাবেন। এছাড়াও নাটক মঞ্চস্থ করার সুবিধার্থে ওইদিন সম্মেলনের কর্মকর্তাদের হাতে ১৫ হাজার টাকা তুলে দেন তিনি। কর্মশালার প্রশিক্ষক চিত্রভানু ভৌমিক নাট্যশিক্ষার গুরুত্ব এবং নতুন ছেলেমেয়েদের এগিয়ে আসার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন। শুরুতে জেলা সম্পাদক রনেন্দ্র নারায়ন দে স্বাগত ভাষণ দেন ও কর্মশালা আয়োজনের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেন। সভাপতি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা সভাপতি ইন্দিরা ভট্টাচার্য।
এদিনের অনুষ্ঠানে অভিনয় জগতের নিজ নিজ অভিজ্ঞতা, এখানকার নাট্য আন্দোলনের গতি প্রকৃতি এবং চর্চার স্বরূপ নিয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করেন নাট্য ব্যক্তিত্ব বিজয় সিংহ দাস, নেপাল চক্রবর্তী, সুব্রত শর্মা মজুমদার, শহর সমিতির সভাপতি সুরজিৎ দেবরা। অনুষ্ঠানে সম্মেলনের কেন্দ্রীয় সমিতির পক্ষে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সহ সম্পাদক পিনাকপাণি ভট্টাচার্য ও কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক সব্যসাচী রুদ্রগুপ্ত। তাঁরা তিন জেলায় কেন্দ্রীয় সমিতির প্রস্তাব অনুযায়ী কী কী কার্যক্রমের আয়োজন হয়েছে, এর সংক্ষিপ্ত রূপরেখা তুলে ধরেন।এতে প্রত্যেক জেলা সমিতির সহযোগিতার জন্য তাদেরে ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠান স্থলে কবি পূর্ণিমা রানি দে স্বরচিত একটি কবিতা পাঠ করেন এবং পরে একটি কাব্যগ্রন্থ উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের হাতে উপহার হিসেবে তুলে দেন। অনুষ্ঠানে মানপত্র পাঠ করেন ময়ূরী রায়। সমগ্র অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পূরবী মিশ্র দেবনাথ।উল্লেখ্য, প্রতিদিন বিকেল তিনটা থেকে সন্ধ্যা পাঁচটা পর্যন্ত এই কর্মশালা চলবে। এদিকে, এই কর্মশালা আয়োজন করার জন্য তরুণ প্রজন্মের পক্ষ থেকে ও আয়োজকদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়েছে।