অনলাইন ডেস্ক : কাছাড়ে জল সম্পদ বিভাগের কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরকারকে বিধলেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভা সাংসদ সুস্মিতা দেব। তার কথায় বন্যার অনেক পর রাজ্য এবং কেন্দ্রের মন্ত্রীরা আসছেন। কিন্তু বন্যা মোকাবিলায় কাজের কাজ হচ্ছে না মোটেই।
শুক্রবার শিলচরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সুস্মিতা বলেন, জেলায় ৯৯ শতাংশ স্লূইসগেটই কাজ করে না। যার দরুন বিভিন্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়ংকর হয়ে ওঠে। দফায় দফায় বন্যা হচ্ছে কিন্তু জল সম্পদ বিভাগের মেকানিক্যাল সংমন্ডল কার্যালয় চলছে কার্যবাহী বাস্তুকার বিনেই। প্রায় ছয় মাস থেকে ওই কার্যালয়ে সামলাচ্ছেন একজন সহকারী কার্যাবাহী বাস্তুকার। যিনি কাজ করছেন ভারপ্রাপ্ত কার্যবাহী ব্যস্তকার হিসেবে। কাছাড়ের মতো বন্যাপ্রবণ এক বিশাল জেলায় এতো এতো স্লূইসগেট একজন সহকারী কার্যাবাহী বাস্তুকারের পক্ষে কি সামাল দেওয়া সম্ভব। এর ফল দেখা গেছে এবার বন্যার সময়। অকেজো স্লূইসগেটগুলোর দরুন বানভাসী হয়েছেন কয়েক লক্ষ লোক। তিনি বলেন সরকার মিনি সেক্রেটারিয়েট নিয়ে বড় বড় কথা বলে থাকে। কিন্তু মিনি সেক্রেটারিয়েট তৈরির আগে উচিত জল সম্পদ বিভাগের মেকানিক্যাল সংমন্ডলেএকজন কার্যকরী বাস্তুকার নিযুক্ত করা।
সুস্মিতা জেলার একাংশ ত্রান শিবিরকে মডেল ত্রাণ হিসেবে ঘোষণা নিয়েও প্রশ্ন উত্থাপন করেন। বলেন মডেল ত্রাণ শিবির আবার কি। এসব শিবিরে কি বিশেষ কোনও সুবিধা রয়েছে। যদি থেকে থাকে, তবে তো বলতে হয় অন্যান্য ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়া বানভাসিদের সঙ্গে সরকার বৈষম্য করছে। আসলে এই সরকার স্টান্টবাজি ছাড়া কাজের কাজ কিছুই করছে না বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন,শাসক দলের মন্ত্রীরা শিলচরে এসে বলছেন , বন্যা শেষে জল কমার পর ভাঙা বাঁধগুলি ঠিকঠাক হবে। ৮ বছর থেকে বিজেপি অসমে রাজত্ব করছে। কেন্দ্রে ১০ বছর । ৮ বছরে ৮টি শুকনোর মরশুম এসেছে,তখন কেন কাজ হলো না। বেতুকান্দি স্লূইসগেট নিয়েও প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, এই স্লূইসগেটকে ঘিরে প্রাক্তন সাংসদ রাজদীপ রায় এবং বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী নিজেদের জাহির করেছেন নানাভাবে। কিন্তু কাজের সময় দেখা যায় স্লূইসগেট কাজ করছে না।
প্রসঙ্গান্তরে গিয়ে তিনি শিলচর পুরসভার নির্বাচন আটকে থাকা নিয়েও খেদ ব্যক্ত করে বলেন, নিগম যখন হওয়ার হবে। কিন্তু এর আগে পুর এলাকার ২৮ টি ওয়ার্ডে তো নির্বাচন করে নেওয়া উচিত। পুর নির্বাচন না হওয়ায় পুরসভায় বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তীর একনায়কতন্ত্র কায়েম হয়েছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, একনায়কতন্ত্র কায়েম করলেও বিধায়ক শিলচরের সমস্যা সমাধানে পরিকল্পনা তৈরি করতে পারছেন না। এরপর এর সূত্র ধরে বলেন, শিলচরে পাম্প হাউস তৈরির জন্য এনবিসিসি অনেক আগেই ডিপিআর তৈরি করেছিল। পরিকল্পনা ছিল ইটখোলায় মেডিল্যান্ড নাসিংহোমর পাশে, কালীবাড়ি চর, সোনাই রোড, রাঙ্গিরখাড়ি, এই চারটি এলাকায় পাম্প হাউস হবে। জমা জল পাম্প করে বরাকে ফেলা হবে। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়েছে কি। শিলচরে না হলেও গুয়াহাটিতে ভরলুমুখে কিন্তু পাম্প হাউস খুব ভালোভাবে কাজ করছে। গুয়াহাটির বিভিন্ন এলাকায় ৭ টি পাম্প হাউস তৈরি করে জমা জল ফেলা হচ্ছে ব্রহ্মপুত্রে । তিনি আরও বলেন,বারবার দাবি জানানো সত্ত্বেও বিজ্ঞানসম্মতভাবে বরাকে খনন হচ্ছে না । কিন্তু যতই ব্যয়সাপেক্ষ হোক না কেন, বরাকে খনন অবশ্যই জরুরী। শিলচরের প্রবীণ অধ্যাপক দিলীপকুমার দে-র উত্থাপিত বিষয়ের সূত্র ধরে তিনি এও বলেন, নদীর ধরন ধারন যাচাইয়ে প্রকৌশলগত বিদ্যা কাজে লাগানো জরুরী। কিন্তু আসাম বিশ্ববিদ্যালয় ও গুয়াহাটি আইআইটিতে রিভার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থাকলেও সেসব বিভাগের বিশেষজ্ঞদের এক্ষেত্রে কাজে লাগানো হচ্ছে না।
এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে ছিলেন দলের কাছাড় জেলা সভাপতি রাজেশ দেব,মোহনলাল দাস, রাজদীপ দেবরায়, অনুপম পাল,,সন্তু দাস, ও রাজ দাস প্রমুখ।