অনলাইন ডেস্ক, করিমগঞ্জ : বহু বছর ধরে ঝুলে থাকা রাজ্যে বিধানসভা ও লোকসভা কেন্দ্রের সীমানা পুননির্ধারণ হচ্ছে। গত সপ্তাহেই এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করে নির্বাচন আয়োগ। সেই অনুযায়ী নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই রাজ্যে নতুন করে জেলা বা মহকুমা স্তরে প্রশাসনিক অদলবদলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে নির্বাচন কমিশন।
এদিকে নির্বাচন আয়োগের জারি করা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার ঠিক একদিন আগে রাজ্য সরকার বিভিন্ন জেলার সীমানা পরিবর্তন করেছে। এর ফলে বরাক উপত্যকার তিন জেলাতেই বড়সড় বদল এসেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বদরপুরের করিমগঞ্জ জেলা থেকে বেরিয়ে কাছাড়ে অন্তর্ভুক্তি ঘটা। এই সিদ্ধান্তকে অনেকেই বড় হিসেবে দেখছেন। একাংশ যে এতে ক্ষুব্ধ তাতে সন্দেহ নেই। করিমগঞ্জ জেলা হিসাবে গঠন হওয়ার পর থেকেই বদুরপুর ওই জেলার অংশ ছিল। এবার আচমকাই রাতারাতি বদরপুরকে কাছাড়ে ঠেলে দেওয়ার ফলে চাপা ক্ষোভ রয়েছে। তবে এর থেকেও বেশি স্থানীয়রা এখনও একপ্রকার ঘোরের মধ্যে রয়েছেন। এই সিদ্ধান্তের ফলে বদরপুরের বাসিন্দাদের সুবিধা হবে না সমস্যা বাড়বে, তা এখনও ঠাহর করতে ব্যর্থ হয়েছেন অধিকাংশরাই।
হোজাই, বজালি, বিশ্বনাথ ও তামুলপুর – এই চার জেলার বিলুপ্তিও ঘটেছে। সারা অসম ছাত্র সংস্থা (আসু)-সহ বেশ কিছু সংগঠন রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। বিশ্বনাথ ও বাজালি জেলায় ইতিমধ্যেই এ নিয়ে একদফা বিক্ষোভ প্রদর্শন হয়ে গিয়েছে। অবশ্য বরাক উপত্যকায় এখন অবধি কোনও বিরোধ দেখা যায়নি। তবে বিরোধী দলের নেতারা রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন।
রাজ্যের চারটি জেলার মর্যাদা বিলোপ করে পুরোনো ভৌগোলিক পরিসরের সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার পিছনে কি যুক্তি রয়েছে সে প্রশ্ন তুলেছেন কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ। কংগ্রেস বিধায়ক বলেন, করিমগঞ্জ জেলা থেকে বদরপুর বেশ কিছু অংশ সরিয়ে কাছাড়ের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া এবং কাঠিগড়ার কিছু অংশ করিমগঞ্জের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। বদরপুর থেকে বিভিন্ন কাজে করিমগঞ্জ যাতায়াতে সাধারণের যে সুবিধে ছিল শিলচর দূরত্বে থাকায় সে ক্ষেত্রে অনেক অসুবিধে হবে বলে ক্ষোভ ব্যক্ত করেন তিনি। তাঁর মন্তব্য, ‘কেবল ভোটের স্বার্থে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হিমন্ত বিশ্ব শর্মা নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার।’ এ নিয়ে আইনের দ্বারস্থ হওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ।
বস্তুত, করিমগঞ্জের অনেকেই এদিন এভাবে জেলার সীমানা বদলের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এ নিয়ে বিজেপির প্রবীণ নেতা মিশন রঞ্জন দাস বলেন, ‘রাজ্য সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা বিজ্ঞপ্তি জারির পরই দেখেছি। এর ফল ভাল হবে না খারাপ তা এখনই বলে দেওয়ার সময় আসেনি। পাশাপাশি, মানুষের কী অসুবিধা হতে পারে সেসব খতিয়ে দেখতে সময়ের প্রয়োজন। এত দ্রুত সমস্ত বিষয় নিয়ে উপসংহার দেওয়া অনুচিত।’
বদরপুর ছাড়াও উপত্যকার বেশ কিছু স্থানের সীমান পরিবর্তন হয়েছে। কার্যত তিন জেলার চেহারাতেই বড়সড় বদল এসেছে। করিমগঞ্জ জেলার চাপরা, আলাকুলিপুর, জুম পার্ট ৩, জুম পার্ট ৪, জুম পার্ট ৫, জুম পার্ট ৭, পাহাড়কাটি, চাপরাকাটি, বৃন্দাশিল এলাকা ঢুকেছে কাছাড় জেলায়। উল্টোদিকে কাছাড়ের মাধবপুর, নিজ হাতিখোয়া পার্ট ১, হাতিনগর পার্ট ২, হাতিনগর পার্ট ৩, চণ্ডিনগর পার্ট ২, টুরেকগ্রাম, চণ্ডিনগর পার্ট ১, লাঠিমারা, নাজাতপুর, করইকান্দি, পার্ট ২, লোহামালি ইত্যাদি এলাকা ঢুকে পড়েছে করিমগঞ্জ জেলায়।
হাইলাকান্দি ও কাছাড়ের পারস্পরিক সীমানায়ও পরিবর্তন এসেছে। কাছাড় জেলার দুধপুর পার্ট টু, মহাদেবপুর, গণিরগ্রাম পার্ট ১, গণিরগ্রাম পার্ট ৩ এবং শিরপুর পার্ট ২ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে হাইলাকান্দি জেলায়। আবার হাইলাকান্দির পাঁচগ্রাম, উত্তর বদরপুর, ঠাণ্ডাপুর, বড়পুর, উত্তর কমলপুর, বদরপুর গ্রাম, বক্রিহাওর নম্বর ১, দক্ষিণ বদরপুর কাছাড়ে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এছাড়া কামরূপ, নগাওঁ, মরিগাওঁ, নলবাড়ি ইত্যাদি জেলার সীমানায়ও বেশ কিছু পরিবর্তন করেছে রাজ্য সরকার।