অনলাইন ডেস্ক : না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন প্রবীণ বিজেপি নেতা অজিতকুমার ভট্টাচার্য। মঙ্গলবার ভোরে গুয়াহাটির বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। এরইসঙ্গে গেরুয়া রাজনীতির অঙ্গনে অবসান ঘটে এক সংগ্রামী অধ্যায়ের। বিচক্ষণ এই রাজনীতিবিদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা-সহ বিশিষ্টজনেরা। রাজনৈতিক মতাদর্শের ঊর্ধ্বে উঠে শোক জানান বিভিন্ন দল-সংগঠনের কর্মকর্তারাও।
পরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, সোমবার রাতে যথা সময়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন অজিতবাবু। কিন্তু রাত পোহালে মঙ্গলবার ভোরে তাঁকে মৃত অবস্থায় আবিষ্কার করেন পরিবারের সদস্যরা। এদিনই রাতে গুয়াহাটির নবগ্রহ শ্মশানে পঞ্চভূতে লীন হয়ে যায় প্রয়াতের নিথর দেহ।মৃত্যুকালে বয়স ছিল ৮৪ বছর। রেখে গিয়েছেন পত্নী এক সময়ের সুপরিচিত কণ্ঠশিল্পী অপর্ণা ভট্টাচার্য, ২ বিবাহিতা কন্যা সুব্রতা ভট্টাচার্য ও সুচেতা ভট্টাচার্য, জামাতা জার্নাল সিং ও শুভশেখর ভট্টাচার্য-সহ বহু গুণমুগ্ধ ও আত্মীয়স্বজন।
১৯৪২ সালে করিমগঞ্জের ইছাবিল চা বাগানে জন্ম অজিতবাবুর। বাবা চাকরি করতেন সেই বাগানে। রাজনীতির বাইরে অন্য এক পরিচয় ছিল প্রয়াতের। অসম পুলিশে উঁচু পদে চাকরি করতেন তিনি। ছিলেন অসম পুলিশের ডেপুটি সুপারিন্টেন্ডেন্ট অব পুলিশ (ডিএসপি)। তবে পুলিশের চাকরি থেকে তিনি স্বেচ্ছাবসর নেন ১৯৮৬ সালে। চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর তিনি বিজেপির সদস্যপদ নেন ১৯৯১ সালে। দল তাঁকে রাজ্য সম্পাদকের পদে অধিষ্ঠিত করে ১৯৯৩ সালে। এর দু’বছর পর তাঁকে বিজেপির রাজ্য কমিটিতে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৯৯৭ সালে তিনি কাছাড় জেলা বিজেপির সভাপতি মনোনীত হন এবং দক্ষতার সঙ্গে ৬বছরের কার্যকাল অতিবাহিত করেন। ২০০৩ সালে তিনি বিজেপি ন্যাশনাল কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে মনোনীত হন। ২০০৯ সালে ফের তাঁকে দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০১২ সালে তিনি প্রদেশ বিজেপির সহ-সভাপতি মনোনীত হন।
বরাক উপত্যকায় বিজেপিকে শক্তিশালী করে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে গিয়েছেন অজিত কুমার ভট্টাচার্য। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘ভারতীয় জনতা পার্টির একনিষ্ঠ সেবক, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক অজিত কুমার ভট্টাচার্যের প্রয়াণে আমি দুঃখিত। ১৯৯১ সাল থেকে দলের হয়ে কাজ করেছেন তিনি। ক্রমান্বয়ে দলের রাজ্য সম্পাদক, রাজ্য সাধারণ সম্পাদক, কাছাড় জেলা সভাপতি, রাজ্য কমিটির সহ সভাপতি ইত্যাদি পদে থেকে তিনি দেশ ও দলের সেবা করেছেন। বরাক উপত্যকায় আমাদের দলের ভিত শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। তাঁর এভাবে চলে যাওয়ায় দল ও সমাজের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। এই কঠিন সময়ে শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।’
তাঁর সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে লক্ষীপুরের বিধায়ক কৌশিক রায় বলেন, রাজনীতিতে আমাকে প্রতিষ্ঠিত করার পেছনে অজিতকুমার ভট্টাচার্যের অবদান অপরিসীম। আজ আক্ষরিক অর্থেই আমি রাজনৈতিক গুরুকে হারালাম।’ তিনি আরও বলেন, সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা রাখতেন অজিতকুমার ভট্টাচার্য। তিনি যখন বিজেপিতে যোগ দেন, তখন সারা দেশেই কংগ্রেসিদের দাপট। তাইবলে পিছিয়ে যাননি তিনি।’
অজিতকুমার ভট্টাচার্যের মৃত্যুতে গভীর শোক ব্যক্ত করেন বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের কাছাড় জেলা সমিতির প্রাক্তন সভাপতি তৈমুর রাজা চৌধুরী। প্রয়াতের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সুসম্পর্কের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিকটাত্মীয় বিয়োগের যন্ত্রণা বয়ে এনেছে তাঁর মৃত্যু সংবাদ। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ১৯৯১ সালে শিলচরে অনুষ্ঠিত বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের একাদশ অধিবেশনে অর্থ উপসমিতির সদস্য ছিলেন অজিত কুমার ভট্টাচার্য। সেবছর অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে তিনি তাঁর দায়িত্ব পালন করেছিলেন বলেই অধিবেশনের পর দেখা যায়, বেশ বড় অংকের অর্থ সাশ্রয় হয়েছে। সেই উদ্বৃত্ত অর্থ ব্যাংক ফিক্সড ডিপোজিট করে রাখা হয়। পরে সেই টাকা মূল বঙ্গভবন নির্মাণে কাজে লাগানো হয়।