অনলাইন ডেস্ক : সরকারের লক্ষ্য সবার মাথার উপর ছাদ তৈরি করে দেওয়া। এর জন্য প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে,
, অনেক হিতাধিকারী অর্থ পাওয়ার পর তা ব্যয় করে ফেলেন অন্য ক্ষেত্রে। এমনটা না করার জন্য অনুরোধ জানালেন রাজ্যের মীন, আবগারি সহ অন্যান্য বিভাগের মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য।
বৃহস্পতিবার গোটা রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (গ্রামীণ) র তিন লক্ষ আশি হাজার হিতাধীকারীকে অনুজ্ঞাপত্র তুলে দেওয়া হয়। সঙ্গে এই হিতাধীকারীদের একাউন্টে জমা করা হয়েছে প্রথম কিস্তির ৩২,৫০০ টাকা। তিন লক্ষ আশি হাজার হিতাধিকারীর মধ্যে কাছাড়ে রয়েছেন ২০,০৫৭ জন। অনুজ্ঞাপত্র তুলে দেওয়ার জন্য গুয়াহাটির শংকরদেব কলা ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয়ভাবে আয়োজন করা হয় অনুষ্ঠানের। সঙ্গে প্রতিটি জেলার জেলাসদর এবং গাঁও পঞ্চায়েত স্তরেও অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কাছাড়ের ২০,০৫৭ জন হিতাধীকারীর মধ্যে ১৭০ জনকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুজ্ঞাপত্র তুলে দেওয়া হয় শিলচর গান্ধীভবনে আয়োজিত জেলা স্তরের অনুষ্ঠানে। আর গাওপঞ্চায়েত স্তরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তুলে দেওয়া হয় অন্যান্যদের হাতে। শিলচর গান্ধীভবনে আয়োজিত জেলাস্তরের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মন্ত্রী শুক্লবৈদ্য, প্রধানমন্ত্রী আবাসের অর্থ যথাযথভাবে ঘর তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য হিতাধীকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, একাউন্টে টাকা জমা হওয়ার পরই কেউ কেউ চিন্তাভাবনা শুরু করেন, ঘর তৈরি করে কি হবে। টাকাটা ব্যয় করবেন অন্যান্য প্রয়োজন মেটাতে। কিন্তু এমনটা হওয়া মোটেই বাঞ্চনীয় নয়। এর জেরে এই যোজনার ক্ষেত্রে ভুগতে হয় গোটা জেলাকে।
মন্ত্রী আরও বলেন, আগে ছিল ইন্দিরা আবাস বর্তমান সরকারের আমলে তা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী আবাস। কিন্তু আগের সরকারগুলোর জমানার ইন্দিরা আবাসের হাল কি তা সবাই জানেন। এমন কোনও জিপি দেখানো যাবে না যে জিপিতে এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে ইন্দিরা আবাস যোজনার ন্যূনতম পাঁচটি ঘর। কিন্তু বর্তমান সরকার যেভাবে প্রধানমন্ত্রী আবাস তৈরীর ব্যবস্থা করেছে তাতে করে একজন হিতাধিকারীর দীর্ঘ বছর ঘর নিয়ে আর কোনও দুশ্চিন্তা থাকার কথা নয়। এর চেয়েও বড় ব্যাপার বর্তমানে এক্ষেত্রে মধ্যভোগী ব্যবস্থার অবসানেও কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বিশিষ্ট অতিথি সাংসদ রাজদীপ রায় বলেন, বর্তমান সরকার মানুষের সব ধরনের সমস্যা সমাধানের কথা চিন্তা করছে। শুধু আবাস তৈরি করে দেওয়াই নয়, সঙ্গে জল জীবন মিশনের মাধ্যমে ঘরে ঘরে পানীয় জল, উজ্জ্বলা যোজনার মাধ্যমে রান্নার গ্যাস এমন কি বিদ্যুৎ পৌঁছে দেবারও ব্যবস্থা করছে। তিনিও প্রথম কিস্তির টাকার কাজ শীঘ্র শেষ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী আবাসের হিতাধিকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এতে করে দ্বিতীয় কিস্তি সহজে পাবার পথ প্রশস্থ হবে।
বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী বলেন, বিগত দিনে ইন্দিরা আবাস যোজনার নামে অনেক কেলেঙ্কারি হয়েছে। বর্তমান সরকার প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ক্ষেত্রে মধ্যভোগীদের অনৈতিক সুবিধা আদায়ের পথ রুদ্ধ করতে সরাসরি হিতাধিকারীদের একাউন্টে টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে। বিধায়কও এই টাকা অন্য ক্ষেত্রে ব্যবহার না করে যথাযথভাবে ঘর তৈরির কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন প্রধানমন্ত্রী আবাসের ক্ষেত্রে কেউ অনৈতিক সুবিধে আদায় করতে চাইলে যেন তাদের এ নিয়ে অবগত করা হয়। এতে অবশ্যই কড়া হাতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কেউ অনৈতিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করলে তাদের জানানোর জন্য হিতাধিকারীদের প্রতি আহ্বান জানান জেলা পরিষদের সভাপতি অমিতাভ রাইও। বলেন সরকার বিনামূল্যে ঘর তৈরি করে দেবার ব্যবস্থা করেছে। এর জন্য কাউকে এক টাকাও দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
শুরুতে উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জেলা পরিষদের সিইও রঞ্জিত কুমার লস্কর জানান, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার অধীনে ঘর তৈরির জন্য তিন কিস্তিতে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা দেওয়ার পাশাপাশি হিতাধিকারীদের এমজিএনরেগা প্রকল্পের অধীনে ৯৫ কর্মদিবসের হিসেবে মজুরির টাকাও দেওয়া হয়ে থাকে।
শেষে ধন্যবাদ সূচক বক্তব্য রাখতে গিয়ে জেলাশাসক রোহন কুমার ঝা বলেন, যারা প্রথমকিস্তির টাকা পেয়েছেন, তাদের তা দিয়ে শীঘ্র কাজ শুরু করে দেওয়া উচিত। বর্তমানে কাজের মরশুম চলছে, এই মরশুমেই প্রথম কিস্তির কাজ গুটিয়ে আনতে হবে। এতে প্রশস্ত হবে শীঘ্র দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পাওয়ার রাস্তা। এভাবে দ্রুত বাস্তবায়িত হবে ঘর তৈরির স্বপ্ন। জেলাশাসক ৯৫ কর্ম দিবসের মজুরির টাকা পাওয়ার জন্য জব কার্ডের সঙ্গে আধার কার্ড লিঙ্ক করার উপরও জোর দিয়ে বলেন, বরাদ্দকৃত টাকা দিয়ে ঘর তৈরি করতে হবে অবশ্যই। কোনভাবেই যেন তা অন্য খাতে ব্যবহার না করেন হিতাধিকারীরা। এতে আখেরে মঙ্গল তাদের নিজেদেরই।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের সহ-সভাপতি লাভলি চক্রবর্তী, জেলা পরিষদ সদস্য মানব সিং প্রমূখ। গান্ধীভবনের এই অনুষ্ঠানের মাঝে সম্প্রচার করা হয় গুয়াহাটি শংকরদেব কলা ক্ষেত্রে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানও।