অনলাইন ডেস্ক : ঋণ পাইয়ে দেওয়ার নামে প্রতারণা। গ্রেফতার বিজেপি সংখ্যালঘু মোর্চার হাইলাকান্দি জেলা সভাপতি। শিলচর থেকে তারাপুর পুলিশের সহায়তায় হাইলাকান্দি পুলিশ সোমবার সন্ধ্যায় গ্রেফতার করে আমজাদুল হুসেন মজুমদারকে। পাশাপাশি সোমবার বিকেলে পুলিশ গ্রেফতার করে তার ছোট ভাই মিলু মজুমদার সহ অন্য ৯ জনকে। এরা সবাই সিংহানিয়া ফিনটেক এগ্রিবিসনেস কনসোর্টিয়াম কোম্পানি লিমিটেডের হাইলাকান্দি শাখার কর্মী। বৃহৎ ঋণ পাইয়ে দেওয়ার নামে কয়েক সহস্রাধিক মানুষ থেকে দুই হাজার টাকা করে অগ্রিম সংগ্রহ করার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে পুলিশ সিল করে সিংহানিয়া ফিনটেক এগ্রিবিসনেস কনসোর্টিয়াম কোম্পানি লিমিটেডের হাইলাকান্দির শাখা কার্যালয়ও।
গত প্রায় ৮ মাস আগে হাইলাকান্দি শহরের ষ্টেশন রোডে ঘটা করে দ্বারোদঘাটন করা হয়েছিল একটি কার্যালয়ের। বাইরে ফলকে নাম লিখা ছিলো সিংহানিয়া ফিনটেক এগ্রিবিসনেস কনসোর্টিয়াম কোম্পানি লিমিটেড। কিন্তু যাবতীয় কাগজ পত্রে ব্যবহৃত হতো প্রাগজ্যোতিশ ফিনটেক কেপিটেল সলিউশন লিমিটেড৷ সাধারণ মানুষকে জানানো হয়েছিল এটি একটি মাইক্রো ফাইনেন্স সংস্থা। যা অন্যান্য মাইক্রো ফাইন্যান্সের মতোই ঋণ দেবে। আর কিছু দিনের মধ্যেই একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে রূপান্তর হবে৷ একথা বলে হাইলাকান্দি শহরের বেশ কিছু শিক্ষিত যুবক যুবতীকে চাকরিতেও নিয়োগ করা হয়েছিল। বিশেষ করে টার্গেট করা হয়েছিলো গৃহবধূদের। প্রত্যেকটি গ্রাম ও ওয়ার্ডে মহিলাদের এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল৷ আর এদের মাধ্যমেই সাধারণ মানুষ থেকে দুই হাজার টাকা করে সংগ্রহ করা হয়েছিল। একই ধাঁচে শিলচর, করিমগঞ্জ সহ বরাকের বিভিন্ন শহরে কার্যালয় চালু করা হয়েছিল। আর এই সব কিছুর পেছনে ছিলেন হাইলাকান্দি বিজেপি সংখ্যালঘু মোর্চার জেলা সভাপতি আমজাদুল হুসেন মজুমদার ওরফে লিলু। এদিকে ২০০০ টাকা করে ফি নেওয়ার পর যখন ঋণ দেওয়ার সময় আসে তখনই স্পষ্ট হয়ে উঠে প্রতারণার ছক। আজ কাল পরশু বলে গ্রাহকদের হয়রানি আরম্ভ হয়৷ গত কয়েকদিন থেকে হাইলাকান্দি শাখায় বার বার আসা যাওয়া করতে করতে অবশেষে সোমবার কোম্পানির হাইলাকান্দি স্টেশন রোড কার্যালয় ঘেরাও করেন গ্রাহকেরা। তাঁরা দুই হাজার টাকা জমা দেওয়ার পরও কেন তাদের ঋণ দেওয়া হচ্ছে না তা’ জানতে চান। কিন্তু কার্যালয়ের কর্মীদের কাছে এর সঠিক কোনো জবাব ছিল না। এনিয়ে এসব গরীব মেহনতী সহজ সরল পুরুষ মহিলারা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারা একজোট হয়ে কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখতে থাকেন। চোখে মুখে উদ্বিগ্নের সুর নিয়ে এসব পুরুষ মহিলারা জানান, সিংহানিয়া ফিনটেক এগ্রিবিসনেস কনসোর্টিয়াম কোম্পানি হাইলাকান্দিতে শাখা খোলার পর হাইলাকান্দি শহর ও গ্রামে পুরুষ মহিলা এজেন্ট নিযুক্তি দেওয়া হয়। এসব এজেন্টরা শহরের সহজ সরল খেটে খাওয়া মানুষদের বাড়িতে গিয়ে বলেন, মাত্র দুই হাজার টাকা এই কোম্পানিতে জমা দিলে পঁচিশ হাজার টাকা লোন হিসেবে দেওয়া হবে। জুন মাস থেকে লোন দেওয়া হবে বলে তাদের জানানো হয়। মাত্র দুই হাজার টাকা জমা দিয়ে পঁচিশ হাজার টাকা ঋণ, এমন এক শোভনীয় অফার পেয়ে হাত ছাড়া না করে তাদের অনেকেই দুই হাজার টাকা করে জমা দেন এজেন্ট মারফৎ। কিন্তু জুন মাস গিয়ে সেপ্টেম্বর প্রথম সপ্তাহ এলেও তাঁদের লোন দেওয়া হয় নি বলে অভিযোগ। উল্টো তাদেরকে নানা যুক্তি অজুহাত দেখানো হয় বলেও অভিযোগ করেন এসব ঋণপ্রাপকরা। ফলে সোমবার তারা স্টেশন রোডের কার্যালয়ে এ ব্যাপারে জানতে এলে এখানে কর্মীরাও ঋণ পাইয়ে দেওয়ার নামে কোনো সদুত্তর দেন নি। এদিকে, এনিয়ে কার্যালয়ের সামনে এনিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করে। পরে বিষয়টি তারা পুলিশকে জানান। পুলিশ এসে দীর্ঘ প্রায় তিন ঘন্টা কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে কার্যালয়টি সিল করে। পাশাপাশি কার্যালয় থেকে ৯ জন কর্মীকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে৷ এরমধ্যে রয়েছেন আমজাদুল হুসেনের নিজের ছোট ভাই মিলু মজুমদারও। এদিকে, তারাপুর পুলিশের সহায়তায় হাইলাকান্দি পুলিশ গ্রেফতার করে সংস্থার বরাক ভ্যালির কোর্ডিনেটর আমজাদুল হুসেন মজুমদারকে। তিনি আবার ভারতীয় জনতা পার্টির হাইলাকান্দি জেলা কমিটির সভাপতি। সোমবার রাতেই তাকে হাইলাকান্দিতে নিয়ে আসে পুলিশ। প্রতিবেদন লিখা পর্যন্ত এদের হাইলাকান্দি থানায় বসিয়ে টানা জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। এদিকে প্রাপ্ত অভিযোগ অনুযায়ী এই সংস্থা কেবল মাত্র হাইলাকান্দি জেলা থেকে পঞ্চাশ লক্ষাধীক টাকা সংগ্রহ করেছে বলে জানা গেছে।