অনলাইন ডেস্ক : আগেই মণিপুরকে দুভাগ করার এবং আদিবাসীদের জন্য আলাদা প্রশাসন করার দাবি উঠেছিল। এই দাবি করেছিলেন মণিপুরের কুকি বিধায়করা। তাদের এই দাবিকে সমর্থন করে সেখানের আদিবাসী সমাজ। নাগাল্যান্ডের শাসকদল সহ একাধিক সংগঠনও এই দাবিকে সমর্থন করে। সেই সঙ্গেই এবার পৃথক প্রশাসনের দাবিতে এবার হোর্ডিং পড়েছে মণিপুরে। মঙ্গলবার রাতেই হামলা হয় কাংপোকপির খামেনলোক গ্রামে। সেখানে গুলিতে অন্তত ১১ জন মারা গিয়েছেন এবং ২৫ জন আহত হয়েছেন।
সেখানের লমকা সহ আশেপাশের এলাকায় এই হোর্ডিং দেখা গিয়েছে। একটি বা দুটি নয়, পৃথক প্রশাসনের দাবি জানিয়ে অনেকগুলি বড় আকারের হোর্ডিং দেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর এই হোর্ডিং দেওয়া হয়েছে কুকি-জো সম্প্রদায়ের তরফে। কারণ সেখানের আদিবাসী এবং জনজাতি মানুষের নিরাপত্তা এবং সুরক্ষার স্বার্থে আলাদা প্রশাসন দাবি করে তাঁরা।
এই সঙ্গে সবার জন্য ন্যায়বিচার, ন্যায্য সাম্য, অত্যাচারমুক্ত একটি ন্যায়পরায়ণ ও শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক সমাজ এবং সুশাসনের দাবি করে কুকি উপজাতির লোকজন। বুধবার যে হোর্ডিং দেওয়া হয়েছে তাতেও মূলত এই দাবিগুলিই করা হয়েছে। তাতে লেখা হয়েছে ‘শান্তির আগে ন্যায়বিচার; বিচ্ছেদই সমাধান’। এদিন সেখানের একেবারে প্রকাশ্য স্থানে, বড় বাড়ির মাথায় এই হোর্ডিংগুলি দেওয়া হয়। অন্যদিকে, এই একই দাবিতে মণিপুরের রাজ্যপালের কাছে চিঠি দিয়েছে আদিবাসীদের সংগঠন। মণিপুরের রাজ্যপালকে লেখা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, মৈতেই এবং কুকি-জো দের পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে দেওয়াই হিংসা থামানোর একমাত্র পথ। কারণ এই দুই পক্ষের মধ্যেই অবিশ্বাস জন্ম নিয়েছে। তাই আলাদা প্রশাসন ছাড়া শান্তির ফেরানোর রাস্তা নেই।
মণিপুর শান্তি কমিটি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন প্রখ্যাত নাট্য ব্যক্তিত্ব রতন থিয়াম। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পক্ষ থেকে রাজ্যের বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠীর মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াকে সহজতর করার জন্য এই মণিপুর শান্তি কমিটি তৈরি করা হয়েছিল। ১৯৮৭ সালে সঙ্গীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার বিজয়ী রতন থিয়াম জানিয়েছেন, শুধুমাত্র কেন্দ্রের হস্তক্ষেপেই মণিপুর সংকট সমাধান করা সম্ভব। ৭৫ বছর বয়সী থিয়াম সংবাদমাধ্যমে জানান, এক মাস ধরে জাতিগত সঙ্কট চলা সত্ত্বেও, প্রধানমন্ত্রী (নরেন্দ্র মোদি) এই বিষয়ে সম্পূর্ণ নীরব। দু’হাজার বছর ধরে ৩৫টি সম্প্রদায়ের মানুষ শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে একত্রে বসবাস করে আসছে। আমরা খুবই শান্তিপ্রিয় মানুষ।
তিনি বলেন, মণিপুরে বিদ্যমান জাতিগত সংকট নিরসনে আন্তরিক রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন। ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামার প্রাক্তন চেয়ারপার্সন (২০১৩ থেকে ২০১৭), রতন থিয়াম এর আগে রাজ্যের ধর্মীয় নেতাদের শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। রাজ্যপালের নেতৃত্বে গঠিত ৫১ সদস্যের শান্তি কমিটি রাজ্যের বিবাদমান দল বা গোষ্ঠীগুলির মধ্যে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠীর মধ্যে শান্তি বজায় রাখার জন্য গঠিত হয়েছিল।
এদিকে মণিপুর অখণ্ডতার সমন্বয়কারী কমিটির আহ্বায়ক জিতেন্দ্র নিংওম্বা জানিয়েছেন, তারা শান্তি কমিটির গঠন নিয়ে “অত্যন্ত অসন্তুষ্ট”। তিনি সংবাদমাধ্যমে জানান, তাঁরা এই কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করছেন। ‘যেহেতু উপত্যকা অঞ্চলে বসবাসকারী জনগণের অনুভূতি কুকি জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে খুব বেশি এবং আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছিলাম যে প্রথম জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযানের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা উচিত।’ তিনি বলেন, মাদক-সন্ত্রাস এবং অবৈধ অভিবাসনের চাপের সমস্যাগুলি কার্যকরভাবে সমাধান না করা পর্যন্ত মণিপুরে শান্তি অর্জন করা যাবে না, কিন্তু সরকার কিছুই করেনি।
অন্যদিকে, কুকি ইনপি মণিপুর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের সংগঠনের সভাপতিকে কোনও পরামর্শ ও তথ্য ছাড়াই শান্তি কমিটির সদস্য হিসাবে মনোনীত করা হয়েছিল। সংগঠন সরকারের এই একতরফা সিদ্ধান্তে আপত্তি জানাচ্ছে। ‘এটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের নেতৃত্বাধীন মণিপুর সরকার সাম্প্রদায়িক হামলার মদত দিয়ে এবং কুকিদের বিরুদ্ধে মৌলবাদী এবং চরমপন্থী আরামবাই টেঙ্গোল এবং মিতেই লিপুন গোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষকতা করে সমস্ত বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে।’ কুকি-ভিত্তিক নাগরিক সমাজ সংস্থা আদিবাসী উপজাতি নেতা ফোরাম মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংহকে শান্তি কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার নিন্দা জানিয়েছে।