অনলাইন ডেস্ক : হয়তো পুলিশ সুপার হিসেবে আরও কিছুদিন নিজের প্রতারণার কারবার চালিয়ে যেতে পারতো জাবির আহমদ। তবে “শিকার” ভেবে আসল পুলিশ সুপারকে ফোন করেই বিপদে পড়ে গেল সে। বদরপুর শ্রীগৌরী এলাকার কুচিরকোনার বাসিন্দা বছর ৩০-এর এই নকল পুলিশ সুপার জাবির আহমদকে রবিবার গ্রেফতার করেছে কাছাড় পুলিশ।
জাবির পেশায় যানচালক। বাঙ্গালুরুতে মারুতির এক শোরুমে কাজ করে সে। কোনওভাবে জালিয়াতি করে গুগলে নিজের মোবাইল নম্বর কাছাড়ের পুলিশ সুপারের নম্বর হিসেবে “সেভ” করে নিয়েছিল । এরপর এর সূত্র ধরে চালিয়ে যাচ্ছিল শিকারদের নানাভাবে চাপ দিয়ে অর্থ আদায়ের কারবার।
কাছাড়ের পুলিশ সুপার নূমল মাহাতো জানিয়েছেন, কিছুদিন ধরেই তাদের কাছে অভিযোগ আসছিল তার নাম নিয়ে ফোন করে চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হচ্ছে। যে মোবাইল নম্বর থেকে ফোন করা হচ্ছিল, গুগলে সেই নম্বর “সেভ” করা রয়েছে কাছাড়ের পুলিশ সুপারের নম্বর হিসেবে। এমন গুরুতর অভিযোগ পেয়ে শুরু হয় তদন্ত। এসবের মাঝে গতকাল শনিবার জাবির শিকার ভেবে নিজেকে পুলিশ সুপার পরিচয় দিয়ে তাকেই (পুলিশ সুপারকে) ফোন করে বসে।এরপর সেই কলের সূত্রে অনুসন্ধান চালিয়ে রবিবার সকালে জাবিরকে তার বদরপুর শ্রীগৌরী কুচিরকোনার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ সুপার জানান, অনেকে কোনও বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে গুগলে নম্বর সার্চ করতেন। তখন ভেসে উঠত জাবিরের নম্বর। আর আসল পুলিশ সুপার ভেবে ফোনকারী ব্যক্তিরা নিজেদের সমস্যার কথা তুলে ধরলে সবকিছু জেনে কাজ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বা অন্যভাবে চাপ সৃষ্টি করে জাবির তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করতো। কোনও কোনও ক্ষেত্রে বিষয়বৃত্তান্ত জেনে সে নিজেই ফোন করতো সংশ্লিষ্ট লোকেদের। বিশেষত যারা পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছেন তাদের অনেককে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের কর্মী পরিচয় দিয়েও ভেরিফিকেশনের নামেও আদায় করতো অর্থ। আর অর্থ আদায়ের ক্ষেত্রেও খুব চতুরতা অবলম্বন করত সে।
ফোনে যোগাযোগের পর লোকেদের বলতো তার
(কাছাড়ের পুলিশ সুপারের) কার্যালয়ে হাজির হতে। সংশ্লিষ্ট শিকাররা কার্যালয়ে হাজির হয়ে ফোনে যোগাযোগ করলে বলতো জরুরী কাজে সে কার্যালয় থেকে বেরিয়ে গেছে। গুগল পে-র মাধ্যমে যেন তাকে টাকাটা দিয়ে দেওয়া হয়। এভাবে বহু লোককে প্রতারণা করে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়েছে সে। আর গতকাল খোদ তাকেই শিকার ভেবে ফোন করে বসে। পুলিশ সুপার বলেন, জাবিরের মোবাইলের তার (পুলিশ সুপারের) নম্বরও সেভ করা রয়েছে। খুব সম্ভবত ভুল করে অন্য কাউকে ফোন করতে গিয়ে তাকে ফোন করে বসে।
জাবির জানিয়েছে, দিন কয়েক আগে সে ছুটিতে বেঙ্গালুরু থেকে বাড়িতে এসেছে। তবে এই প্রতারণা নিয়ে তার কিছু জানা নেই বলে দাবি করে সে। তার কথায়, মোবাইলে সে খুব গড়সড় নয়। হয়তো তার পরিচিত কেউ তার মোবাইল নিয়ে এমন কান্ড ঘটিয়েছে।
যদিও পুলিশ তার এসব কথা মোটেই বিশ্বাস করতে রাজি নয়। প্রতারণা কান্ডের মাধ্যমে শুধু পুলিশ সুপারের নামে শুধু অর্থ আদায় না সে অন্য ধরনেরও কিছু করেছে খতিয়ে দেখা হচ্ছে তাও।