বিকাশের ক্ষেত্রে পৃথিবীর সব দেশেই নতুন সব সম্ভাবনাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমাদের দেশও পিছিয়ে নেই। বিভিন্ন রাজ্যে ইতিমধ্যে অন্যান্য ক্ষেত্রের সঙ্গে পর্যটনকে শিল্পের মর্যাদা দিয়ে আর্থিক বিকাশে নতুন দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা গেলেও অসম ছিল পিছিয়ে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে এ রাজ্যে পর্যটন এখন আগের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পেলেও নানা প্রতিবন্ধকতায় তার অগ্রগতি ছিল কিছুটা মন্থর। এই অন্তরায় দূর করতে রাজ্য মন্ত্রিসভা সোমবার সময়োচিত পদক্ষেপ নিয়ে পর্যটনকে শিল্পের মর্যাদা প্রদানের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে । এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর সরকারি ভাষ্যে বলা হয়েছে, রাজ্যের উল্লেখযোগ্য স্থানগুলোতে পর্যটকদের আকর্ষণ করতে এখন একদিকে যেমন নানা পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তেমনি এই শিল্পের সঙ্গে যারা যুক্ত রয়েছেন তাদের বিভিন্নভাবে সহায়তা প্রদান করবে রাজ্য সরকার। এর ফলে কর্মসংস্থানের নতুন ক্ষেত্র উন্মোচিত হবে বলে আশা ব্যক্ত করা হয়েছে।
এ রাজ্যে পর্যটনের ক্ষেত্র প্রস্তুতির কাজ অবশ্য অনেকদিন আগেই শুরু হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে আকর্ষণীয় ঐতিহাসিক, ধর্মীয় এবং প্রাকৃতিক স্থান রয়েছে যেগুলো সহজেই মানুষের হৃদয় জয় করে নেয়।জৈব বৈচিত্র্য এ রাজ্যের পর্যটনের অন্যতম আধার। প্রকৃতির মনোরম ছবিগুলো এ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে, যা অনবরত ভ্রমণ পিপাসুদের হাতছানি দেয়। বহুভাষিক এ রাজ্যে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র এক অনন্য ধারা তৈরি করেছে। এক অনাবিল আনন্দ অনুভূত হয় রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত সফরের সময়। অসমে আনুষ্ঠানিকভাবে পর্যটন নীতি প্রথম প্রণয়ন করা হয়েছিল ২০০৮ সালে।ওই নীতির প্রস্তাবনায় পর্যটন ক্ষেত্রকে আর্থিক বিকাশের অন্যতম দ্যোতক বলা হয়েছিল। এই নীতির আঁধারে সরকারী পর্যায়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিতেই বেসরকারি পর্যায়েও যথেষ্ট উৎসাহ পরিলক্ষিত হয়। দেশি-বিদেশি ভ্রমণ পিপাসুদের এ রাজ্যে আগমনের মাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।
তবে রাজ্যে পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে আরো সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণের যথেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে। পর্যটকরা সবসময়ই সাবলীল যোগাযোগ ব্যবস্থা পছন্দ করেন। হালে এক্ষেত্রে যথেষ্ট জোর দেওয়া হলেও রাজ্যের সব প্রান্তে সড়ক যোগাযোগ এখনো কাঙ্খিত পর্যায়ে পৌঁছয়নি। পাশাপাশি পর্যটনের ক্ষেত্রগুলোর বৈশিষ্ট্য প্রচারের ক্ষেত্রে আরো বেশি আন্তরিকতা এবং উদার মনের আবশ্যকতা রয়েছে। অসমের পর্যটন মানচিত্রে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা এক বিশিষ্ট স্থান দখল করে রয়েছে। রাজ্যের মধ্যভাগে পাহাড়ি জেলাগুলোতে আকর্ষণীয় অনেক স্থান থাকলেও এগুলো যেমন তেমন প্রচারের আলোয় আসছে না ,তেমনি ওইসব স্থানে যাতায়াত এবং রাত্রিযাপনের উপযুক্ত পরিকাঠামোও প্রত্যাশিতভাবে গড়ে ওঠেনি। দক্ষিণ প্রান্তে বরাক উপত্যকায় পর্যটনের বিরাট সম্ভাবনা থাকলেও রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে এ অঞ্চল এখন পর্যন্ত কার্যত উপেক্ষিত। অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে শিলচরে একটি পর্যটন নিবাস স্থাপন করা হলেও সেটা অনাদরে অবহেলায় উপেক্ষার সাক্ষ্য দিচ্ছে। এই উপত্যকার আকর্ষণীয় ভৌগোলিক এবং ধর্মীয় ঐতিহ্যপূর্ণ স্থানগুলোকে প্রচারের আলোয় আনা জরুরি। পর্যটন মানচিত্রে বরাক উপত্যকাকে গুরুত্ব দেওয়ার দাবি অনেক দিনের হলেও সেটা উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে না । এ ক্ষেত্রে আমাদের জনপ্রতিনিধিদের সক্রিয় ভূমিকা আবশ্যক হলেও তার যথেষ্ট খামতি রয়েছে। হালে উপত্যকার রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটা উন্নত হলেও এক্ষেত্রে আরো সুবিধা সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তার কথা রেলের উচ্চ মহলে যথাযথভাবে পৌঁছে দিয়ে দাবি আদায়ের চেষ্টা হচ্ছে না। সড়ক যোগাযোগ আগের চেয়ে যথেষ্ট ভালো হলেও এমন পিপাসুদের জন্য আকর্ষণীয় স্থানগুলোতে উন্নত মানের পথ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। জাতীয় জল পরিবহন মানচিত্রে বরাক স্থান পেলেও এখন পর্যন্ত কার্যত কিছুই হয়নি। অথচ এটা পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হতে পারে। সব মিলিয়ে গোটা রাজ্যে সব অঞ্চলে পর্যটকদের টানতে সরকারকে আরো সুবিন্যস্ত উদার পর্যটন নীতি প্রণয়ন জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে। পর্যটনকে লাভদায়ক শিল্পে পরিণত করতে হলে এটা অপরিহার্য।