অনলাইন ডেস্ক : কেউ থাকবে, কেউ ছিটকে যাবে। আপাতত শিলচর ডিএসএর বিজিএমের বাহুবলি পার্ট থ্রি (!) তে ভল্লালদেব কিন্তু পুরোনো কমিটির কিছু কর্তাব্যক্তি। পরিবর্তনের কসম খেয়ে তাঁদের হটাতেই তৈরি স্পষ্ট একটা ব্লু প্রিন্ট। কারোর নাম এসেছে স্কুল – কলেজ থেকে। আবার কেউ বা বলে কয়ে মানিয়ে নিয়েছেন বড় ক্লাবের মাথাদের। ব্যয় হয়েছে টাকা কড়িও ( অভিযোগ মতে )। এবার মহারণে শেষহাসি হাসতে ‘ আমাদের লোক ‘ নিতেই তৎপর ছিল সবাই। আর এসবের সাক্ষী দিচ্ছে ক্লাবগুলির পাঠানো সদস্য তালিকা। অ্যাডভান্টেজ যার দিকেই থাক না কেন, এটা তো সিউর ‘ খেলা হবে ‘।
বুধবার প্রকাশিত শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার বহুচর্চিত দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভার খসড়া তালিকা প্রকাশের মাধ্যমে একটা বিষয় তো পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে যে এবার বেশ কোমর কষেই আসরে নেমেছে গেরুয়া শিবির। স্কুল, কলেজ, ইনস্টিটিউট কিংবা ক্লাব – সবেতেই কম বেশি রয়েছে পদ্ম-র ‘ নিজেদের লোক ‘। শেষবার শতচেষ্টা করেও ডিএসএ – র মসনদে দাঁত ফোটাতে পারেনি শাসক গোষ্ঠী। তবে এবার খেলাটা কিন্তু অন্যপথেই এগোচ্ছে। ক্লাবগুলি বিজিএমের জন্য যে তালিকাটা পাঠিয়েছে তাতে পরিবর্তনের একটা হাওয়া অবশ্যই বইছে ডিএসএতে। সূত্রের দাবি মানলে এবারের রণাঙ্গনে অভিমন্যুর মতই একা হয়ে গিয়েছেন সভাপতি বাবুল হোড় । শক্ত একটা চক্রব্যহু। চারিদিকে রয়েছেন পরিবর্তনের স্লোগান আউরে চলা রথী মহারথীরা।
খসড়া তালিকায় নামগুলির দিকে তাকালে প্রথমেই চোখে পড়ে তিন এক্স অফিসিয়াল হিসেবে নাম রয়েছে সভাপতি বাবুল হোড়, সচিব বিজেন্দ্রপ্রসাদ সিং এবং কোষাধক্ষ্য অনিমেষ সেনগুপ্ত। কোনো ক্লাবের অনুমোদন ছাড়াই তারা বিজিএমে যোগ দেবেন তারা। বৌদ্দিক, ক্রীড়া মহল থেকে শুরু করে রাজনীতি – খসড়া তালিকায় রয়েছে জানা পেহেচানা অনেকের নাম। শিলচরের বিধায়ক তথা চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা শিলচরের বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তীর নাম পাঠিয়েছে শ্যামচরণ দেব বিদ্যাপীঠ। সূত্রের দাবিতে কান পাতলে, দীপায়নের নেতৃত্বেই পদ্ম কাঁটায় বিদ্দ্ব হতে যাচ্ছেন বাবুল হোড়রা। ব্যায়াম বিদ্যালয়ের নমিনেশনে বিজিএমে এন্ট্রি হবে সাংসদ ড. রাজদীপ রায়, উধারবন্দের বিধায়ক মিহিরকান্তি সোম, রাজীব রায়, প্রীতম দাস, অভ্রজিত চক্রবর্তী ( ঝলক ), প্রীতম দাসের। তাঁদের তো আর নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন নেই।লক্ষীপুরের বিধায়ক কৌশিক রাইয়ের নাম বিজিএমের জন্য পাঠিয়েছে পি ডব্লু ডি এসি। জেলা বিজেপি সভাপতি বিমলেন্দু রায় এবং গেরুয়া ব্রিগেডের বর্ষীয়ান নেতা উদয়শঙ্কর গোস্বামী বিজিএমে আসছেন ইটখলা স্পোর্টিং ক্লাবের অনুমোদনে। ঈগল ক্লাব বিজিএমে পাঠিয়েছে সোনাইর প্রাক্তন বিধায়ক আমিনুল হক লস্করকে। আরেক বিজেপি নেতা কণাদ পুরকায়স্ত আসবেন বিজয়ী সংঘের সদস্য হিসেবে। পি ডব্লু ডি মেকানিকাল থেকে বিজিএমে যোগ দেওয়ার ছাড়পত্র পেয়েছেন বিজেপি যুবমোর্চার সভাপতি অমিতেশ চক্রবর্তী। এ তো গেল হাই প্রোফাইলদেরনাম।এছাড়াও অনেক ক্লাবের পাঠানো তালিকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন শাসক দলের নেতারা।
শাসক দলের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার চেষ্টায় রয়েছেন বিরোধীরাও। এখন অবধি বিশেষ কোনো আলোচনায় না আসলেও বিজিএমে কিন্তু আসছেন শিলচরের প্রাক্তন বিধায়ক তথা তৃণমুলের রাজ্যসভার সাংসদ সুস্মিতা দেব। শিবব্রত দত্তের পাশাপাশি বিজিএমের জন্য সুস্মিতা দেবের নাম পাঠিয়েছে তারাপুর অ্যাথলেটিক ক্লাব। গত বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী তমাল কান্তি বণিকের দ্বি-বার্ষিক সভায় এন্ট্রি ঘটবে অম্বিকাপুর ক্লাবের সদস্য হিসেবে।
গতবারের সমিতিতে থাকা উপসভাপতি ড. সিদ্ধার্থ শঙ্কর ভট্টাচাৰ্য ইভিনিং ক্লাবের পাঠানো তালিকায় রয়েছেন। অন্য উপসভাপতি সুজন দত্ত এবং নীলাভ মজুমদার এসেছেন সন অফ ইন্ডিয়া এবং ক্লাসমেটস ইউনিয়ন থেকে। শেষবারের কমিটির তিন এজিএস অজয় চক্রবর্তী, অরিজিৎ গুপ্ত এবং যাদব পালকে বিজিএমে পাঠাচ্ছে যথাক্রমে স্টুডেন্ট এসি,মালুগ্রাম ক্লাব এবং অরুণাচল এস এস। সুস্মিতা, তমালরা এখনও সামনে এসে কিছু বলেননি। অতঃপর অনেকটাই কোনঠাসা হয়ে পড়েছে বর্তমান কমিটি।
আসলে বিজিএমের জন্য এবার অনেকটাই হোমিওয়ার্ক করেই মাঠে নেমেছে গেরুয়া ব্রিগেড। প্রত্যেক ক্লাবেই ফাঁকফোঁকরে নিজেদের মানুষদের এটাচ করেছেন দীপায়নরা। উধারবন্দ টি টি ক্লাবের কথাই ধরুন। শেষবার এজিএমে এই ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করার পাশাপাশি নির্বাচনেও অবতীর্ণ হয়েছিলেন প্রণবানন্দ দাশ। এবার তাঁর পরিবর্তে উমাশঙ্কর ভট্টাচাৰ্যকে বিজিএমে পাঠাচ্ছে টি টি ক্লাব। এই উমাশঙ্কর উধারবন্দের শীর্ষস্থানীয় বিজেপি নেতা। তেমনি বিভাস দাসের মত প্রাক্তন খেলোয়াড়কে ব্রাত্য রেখে আরেক বিজেপি নেতা বাসুদেব শর্মার নাম পাঠিয়েছে উদয়ন সংঘ। এইসব সূত্রের হিসেব কষলে গেরুয়া শিবির। তাই দেশ, রাজ্যের সঙ্গে শিলচর ডিএসএতে পদ্ম ফুটলে আশ্চর্যে পরবেন না কিন্তু।