অনলাইন ডেস্ক : মনিপুর রাজ্যের জিরিবাম জেলায় বসবাসরত বাঙালিরা নিজেদের মৌলিক অধিকার আদায়ে এবং তাদের নাগরিকত্ব ইস্যু নিয়ে ২০১২ সাল থেকে আন্দোলন শুরু করেন। ন্যায্য দাবি আদায়ে তাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে মনিপুর রাজ্যে ইতিহাস সৃষ্টি হয়। জিরিবামের ঐতিহাসিক আন্দোলন থেকে বিগত ২০১৭ সালের মনিপুর বিধানসভা নির্বাচনে জিরিবাম আসন থেকে প্রথম বারের মত বাঙালি বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন আছাব উদ্দিন।বাঙালির স্বার্থ সুরক্ষা নিয়ে মনিপুর বিধানসভয় প্রতিনিধি প্রয়োজন।সেই লক্ষ্য নিয়ে জিরিবামের বাঙালিরা আছাব উদ্দিন কে বিধায়ক নির্বাচিত করেছিলেন।পাচ বছর পর ২০২২ সালের নির্বাচনে আবারও দ্বিতীয়বারের মত আছাব উদ্দিন কে বিধায়ক নির্বাচিত করেন জিরিবামের বাঙালিরা । কিন্তু আসলে জিরিবামের বাঙালি সম্প্রদায়ের স্বার্থ সুরক্ষায় ইতিহাস সৃষ্টি করা বিধায়ক আছাব উদ্দিন কতটা সফল হয়েছেন তার মূল্যায়ন করা শুরু হয়েছে জিরিবামের বাঙালি সমাজে। স্হায়ী বাসিন্দা ও নাগরিকত্ব ইস্যু নিয়ে মনিপুরে সরকারি নির্দেশে ঘরঘর তাল্লাশী চলবে।কিন্তু এই বাঙালি সমাজের স্বার্থে জিরিবামের বিধায়ক আছাব উদ্দিন সাত বছরের কার্যকালে মনিপুর বিধানসভায় একটিও বাক্য ব্যয় করেননি বলে জিরিবামের সচেতন মহল চরম ক্ষুব্ধ।।
ভারতের স্বরাষ্ট্রসচিবের নির্দেশ অনুযায়ী মণিপুর রাজ্যে ইনার লাইন পারমিট চালু হয় ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে। কার্যকর হয় ২০২০ সালের ১জানুয়ারি থেকে। বিগত ২০২২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মণিপুর সরকারের কেবিনেটে আই এল পির গাইড লাইনস সংশোধন করে একটি গেজেট নোটিফিকেশন জারি করে। সেই গেজেট নোটিফিকেশনের অনুচ্ছেদ ২এ (১) এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে মণিপুর রাজ্য যেসব নাগরিক অথবা তাদের পূর্বপুরুষ অথবা তাদের পিতা-মাতা ও তাদের পূর্ব পুরুষ যদি ১৯৬১ সালের ৩১ ডিসেম্বর এর পূর্ব থেকে মণিপুর বসবাস করে থাকেন তাদেরকে মণিপুর রাজ্যের স্হায়ী বাসিন্দা হিসাবে গন্য করা হবে। দ্বিতীয় ভূমিপুত্র সংজ্ঞায় বলা হয়েছে মণিপুর রাজ্যের বসবাসকারী মিতৈ , মৈতৈ পাঙাল এবং মণিপুর সরকারের উপজাতি স্বীকৃত প্রত্যেক উপজাতি নাগরিক অথবা তাদের পূর্বপুরুষ অথবা তাদের পিতা-মাতা ও তাদের পূর্বপুরুষ যদি ১৯৬১ সালের ৩১ ডিসেম্বর এর পূর্ব থেকে মণিপুর রাজ্যে বসবাস করে থাকেন তাদেরকে মণিপুর রাজ্যের ভূমিপুত্র হিসাবে গন্য করা হবে। তৃতীয়ত মনিপুর রাজ্যের নথিপত্রের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে মণিপুর রাজ্যের স্হায়ী বাসিন্দা অথবা ভূমিপুত্র প্রমাণ করতে হলে ১৯৬১ সালের ৩১ ডিসেম্বর এর পূর্বের ভোটার তালিকা অথবা সেনসাস রিপোর্টের আদমশুমারী তালিকা অথবা ভিলেজ ডাইরেক্টরী তালিকা অথবা সরকারের জারি করা যে কোন ডকুমেন্ট অথবা জমির যে কোন ডকুমেন্ট এ নিজের নাম অথবা পূর্বপুরুষদের নাম থাকতে হবে। মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন ১৯৬১ সালকে ভিত্তিবর্ষ ধরে অতিসত্তর গোটা মণিপুর রাজ্যে ঘর-ঘর তল্লাশি অভিযান চালানো হবে। যারা ইনার লাইন পারমিট এর অধীনে টিকবে না তাদেরকে মণিপুর আই এল পি নিয়ে বসবাস করতে হবে। আই এল পির গাইডলাইনস থেকে বঞ্চিতদের থাকবেনা ভোটাধিকার এবং থাকবেনা জমির মালিকানা।
মনিপুর সরকারের এই ঘোষণার পর থেকে জিরিবামের বহু বাঙালির রাতের ঘুম উবে গেছে।ঘরঘর তাল্লাশী অভিযানে তাদের অধিকার কতটা সুরক্ষিত থাকবে এনিয়ে চিন্তায় পড়েছেন অনেকেই। জিরিবামের বাঙালি সমাজ তাদের অধিকার আদায়ের লড়াই থেকে বাঙালি বিধায়ক নির্বাচিত করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন বটে, কিন্তু বাস্তবে তাদের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে লাভবান হয়েছেন ,না বিধায়ক আছাব উদ্দিন শুধু নিজেই লাভবান হয়েছেন তা সময়ই বলে দেবে।