অনলাইন ডেস্ক : অবশেষে বাস্তবায়িত হল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্বপ্ন। রবিবার, সকাল ৯টায় আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হয়ে গেল দেশের নয়া সংসদ ভবনের। বিশেষ পুজোপাঠের মাধ্যমে নয়া সংসদ ভবনের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রবিবার লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে পাশে নিয়ে নয়া সংসদ ভবনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। ৬৪,৫০০ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে তৈরি হয়েছে চারতলা ভবনটি। দীর্ঘ ৩ বছর ধরে ৯৭১ কোটি টাকার এই উচ্চাভিলাষী প্রকল্পের কাজ চলছিল। কাজ শেষ হওয়ার পর নতুন সংসদে কবে থেকে কার্যক্রম চালু হবে তার প্রতীক্ষায় ছিলেন অনেকেই। রবিবার সেই প্রতীক্ষার অবসান হল। ‘রাজদণ্ড’ সেঙ্গোল উঠল বিশ্বের সবথেকে বড় গণতান্ত্রিক দেশের প্রশাসনিক প্রধানের হাতে। তবে ঐতিহাসিক এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ নিষ্কলঙ্ক রইল না। তাতে লেগে রইল দেশের ২১টি মুখ্য বিরোধী দলের গরহাজির থাকার কালো দাগ। যা ইতিহাসের পাতায় ভারতীয় গণতন্ত্রের পক্ষে মোটেই গৌরবের নয় বলে মনে করছেন অনেকে।
স্যার এডউইন লুটিয়েন্সের তৈরি ইম্পিরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিল যা স্বাধীনতার পর সংসদ হিসেবে পরিচিতি পায়, তার অবসর হল এদিন। তার জায়গা নিল মোদির স্বপ্নের সেন্ট্রাল ভিস্টা। তাই প্রথম থেকেই অনুষ্ঠানের কেন্দ্রে ছিলেন নরেন্দ্র মোদি। চোল রাজাদের ন্যায়দণ্ড সেঙ্গোল হাতে নিয়ে সংসদ কক্ষে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর তাঁর হাতেই প্রতিষ্ঠা পায় এই পবিত্র প্রতীক। সংসদ ভবনের মূল ফলকও উন্মোচিত হয় প্রধানমন্ত্রীর হাতেই। এরপর হয় সর্বধর্ম প্রার্থনা। সবশেষে দেখা যায় সেঙ্গোলের সামনে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করছেন নরেন্দ্র মোদি।
প্রথম থেকেই নয়া সংসদভবন ছিল বিতর্কে ঘেরা। করোনা বিপর্যয়ের সময় কেন এত টাকা খরচ করে সেন্ট্রাল ভিস্টা নির্মাণ করা হচ্ছে সেই প্রশ্ন উঠেছিল শুরুতে। এরপর উদ্বোধনে সন্ধিক্ষণে এসে রাষ্ট্রপতির হাতে কেন নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন হবে না সেই বিতর্ক চরমে পৌঁছয়। এই নিয়ে সুর চড়িয়েই এদিনের অনুষ্ঠান বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয় কংগ্রেস, তৃণমূল, আপ সহ ২১টি বিরোধী দল। এমনকি যে সেঙ্গোল নিয়ে গেরুয়া শিবির তথা কেন্দ্রের এত মাতামাতি, তা নিয়েও মিথ্যে তথ্য ছড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করে কংগ্রেস। তবে সেসব সমালোচনা উপেক্ষা করেই প্রধানমন্ত্রীর হাতে যাত্রা শুরু হল নয়া সংসদ ভবনের। প্রধানমন্ত্রীও নাম না করে বিরোধীদের সমালোচনা করে বলেন, ‘যারা দেশের উন্নতিতে খুশি নয় তারাই ঐক্য ভাঙার চেষ্টা করে’। বিজেপির বক্তব্য, নয়া সংসদ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বয়কট করে দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোকেই অপমান করেছে বিরোধীরা। মোদিকে পছন্দ হোক বা না হোক, দেশের অগ্রগতির বিরোধীতা করা অনুচিত। মানুষই ঠিক সময়ে এর যোগ্য জবাব দেবে।
অন্যদিকে, নয়া সংসদ ভবনের কাজের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের সঙ্গেও এদিন কথা বলেন তিনি। বিভিন্ন রাজ্য থেকে গত কয়েক বছর ধরে কাজ করেছেন একাধিক শ্রমিক। এদিন তাদের বিশেষ সম্মান প্রধানমন্ত্রী। নতুন এই সংসদ ভবনটি আত্মনির্ভর ভারতের চেতনার প্রতীক (আত্মনির্ভর ভারত)। সংসদের বর্তমান ভবনটি ১৯২৭ সালে উন্মুক্ত হয়েছিল এবং এখন প্রায় ১০০ বছর বয়স হতে চলেছে। বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী এই ভবনে জায়গার অভাব অনুভূত হচ্ছিল। উভয় কক্ষেই সংসদ সদস্যদের বসার সুবিধাজনক ব্যবস্থার অভাব ছিল, যা সদস্যদের কাজের দক্ষতাকে প্রভাবিত করছে। লোকসভা ও রাজ্যসভা, উভয় কক্ষই সংসদের জন্য নতুন ভবন নির্মাণের জন্য সরকারকে অনুরোধ জানিয়ে প্রস্তাব পাস করেছিল। ফলস্বরূপ, ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সংসদের নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। নবনির্মিত সংসদ ভবনটি রেকর্ড সময়ে গুণমানের সঙ্গে নির্মাণ করা হয়েছে। নতুন সংসদ ভবনে লোকসভায় ৮৮৮ জন এবং রাজ্যসভায় ৩০০ জন সদস্য বসতে পারবেন। উভয় কক্ষের যৌথ সভার ক্ষেত্রে মোট ১ হাজার ২৮০ জন সদস্যকে স্থান দেওয়া যাবে লোকসভাতেই।